ব্রিটিশ কাউন্সিল এর লাইব্রেরিজ আনলিমিটেড প্রকল্প ও গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরের সহযোগীতায় আজ রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হলো “ন্যাশনাল পলিসি ওয়ার্কশপ অন দ্য ডেভলপমেন্ট অব পাবলিক লাইব্রেরিজ” শীর্ষক পলিসি কর্মশালা। দিনব্যাপী এ কর্মশালার উদ্দেশ্য ছিলো গণগ্রন্থাগার বিষয়ক নীতিকাঠামো গঠনের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সকল মহলের মতামত ও সুপারিশমালা সংগ্রহ।
অংশগ্রহণকারীবৃন্দসহ এ কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, এমপি, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরের পরিচালক এ.জে.এম আব্দুল্যাহেল বাকী, পরিচালক গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর এবং যুগ্মসচিব সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, ব্রিটিশ কাউন্সিল এর ডেপুটি ডিরেক্টর অ্যান্ড্রু নিউটন এবং ব্রিটিশ কাউন্সিলের লাইব্রেরিজ আনলিমিটেড প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক কার্স্টি ক্রফোর্ড। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আশীষ কুমার সরকার।
অন্যান্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন ব্রিটিশ কাউন্সিল এবং গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ। গণগ্রন্থাগার খাতের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করা, এর সেবাসমূহকে যুগোপযোগী, চাহিদানির্ভর ও কার্যকর করার জন্য একটি শক্তিশালী নীতিকাঠামো এবং একটি সহায়ক সম্পূর্ণ নীতিমালা তৈরি করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন প্রধান অতিথি কে এম খালিদ, এমপি। তিনি আরো বলেন, ‘যদিও বর্তমানে জাতীয় গ্রন্থাগার নীতি নামে একটি নীতিমালা রয়েছে তবে একুশ শতকের উন্নত বাংলাদেশের উপযোগী গণগ্রন্থাগারখাত তৈরির জন্য একটি যুগোপযোগী সম্পূর্ণ নীতিমালা দরকার।’ তিনি আরো বলেন, সময়োপযোগী এবং কার্যকর সুপারিশমালা প্রদানের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট অংশভাগীদের সরকারকে বাধ্য করতে হবে গণগ্রন্থাগার উন্নয়নে নীতিমালা প্রণয়ন করতে।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন অগ্রাধিকার বিবেচনায় নিয়ে একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় গণগ্রন্থাগারখাতের বিশেষ ভূমিকার কথা উল্লেখ করে বিশেষ অতিথি এ জে এম আবদুল্যাহেল বাকী বলেন, ‘গণগ্রন্থাগার খাতের একটি নতুন নীতিকাঠামো প্রণয়ন করা হলে তা গণগ্রন্থাগার খাতকে তার চিহ্নিত ভূমিকা পালনে সহায়তা করবে।’ অন্যান্য প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মতো বাংলাদেশেও গণগ্রন্থাগার নীতিমালার প্রয়োজন।
বিশেষ অতিথি জনাব অ্যান্ড্রু নিউটন বলেন, ‘গণগ্রন্থাগার খাতের জন্য একটি নতুন নীতিমালা প্রণয়নে ব্রিটিশ কাউন্সিল সরকারের সহায়ক হতে আগ্রহী।’ তিনি গণগ্রন্থাগার নীতিকাঠামো তৈরির উদ্দেশ্যে উক্ত কর্মশালার আলোচনা এবং সুপারিশমালাগুলোকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী, গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ এবং এ কর্মশালার সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে বিশেষভাবে আহ্বান জানান।
বিশেষ অতিথি জনাব কার্স্টি ক্রফোর্ড বলেন, ‘ব্রিটিশ কাউন্সিলের লাইব্রেরিজ আনলিমিটেড প্রোগ্রাম ২০১৭ সাল থেকে গণগ্রন্থাগার খাতের উন্নয়নের জন্য একটি নতুন নীতিমালা তৈরির লক্ষ্যে অ্যাডডোকেসি করে আসছে এবং গণগ্রন্থাগার খাতের জন্য একটি খসড়া নীতিমালা প্রণয়নে আমাদের সহযোগিতা শেষ পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘পৃথিবীর অন্যান্য দেশের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, যেসব দেশ জাতীয় গ্রন্থাগার নীতি বাস্তবায়ন করেছে তারা একটি শক্তিশালী, সমৃদ্ধ এবং সমবন্টনভিত্তিক গ্রন্থাগার নেটওয়ার্কের সুফল ভোগ করেছে। জাতীয় গ্রন্থাগারনীতি তৈরির ব্যাপারে জোর দিয়ে জনাব কার্স্টি বলেন, ‘জাতীয় গ্রন্থাগার কৌশল, নীতিমালা এবং আইনগুলো একটি দেশের গ্রন্থাগারের অস্তিত্ব, সেবা প্রদানের একটি সুনির্দিষ্ট কাঠামো, গ্রহণযোগ্যতা, দৃশ্যমানতা এবং দায়িত্বকে বৈধতা দান করে থাকে। তাই, বাংলাদেশের জন্যও একটি নতুন ও যুগোপযোগী গণগ্রন্থাগার নীতিকাঠামো প্রণয়ন করা এখন সময়ের দাবি।’
সভাপতির বক্তব্যে আশীষ কুমার সরকার বলেন, ‘ব্রিটিশ কাউন্সিলের লাইব্রেরিজ আনলিমিটেড প্রোগ্রাম গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরকে প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা উন্নয়ন, পলিসি অ্যাডভোকেসি, জনসচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন, গণগ্রন্থাগার খাতে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের পরিসর বৃদ্ধি করা এবং পরিবীক্ষণ, মূল্যায়ন ও তথ্যব্যবস্থাপনার উন্নয়নে সহযোগিতা করে যাচ্ছে। লাইব্রেরিজ আনলিমিটেডের প্রকল্প সমন্বয়ের কমিটির সভায় একটি খসড়া নীতিমালা প্রনয়ণে প্রয়োজনীয় সুপারিশমালা ও গবেষণার পরিচালনার জন্য নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে, যার ভিত্তিতে আয়োজিত হয়েছে এই কর্মশালা। এই সুপারিশমালাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে একটি নতুন গণগ্রন্থাগার নীতিমালা প্রণয়ণে সরকার এবং সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, এমপি এর দৃষ্টি আকর্ষন করেন তিনি।