TechJano

চিনির বিকল্প মিষ্টি ‘চিনিগো’

চিনি প্রেম-বাঙালির জন্য বিষয়টি সার্বজনীনই বলা চলে। কারন চা,কফি,শরবতসহ মিষ্টিজাতীয় যে কোনো খাবার মানেই চিনি। চিনি ছাড়া হালের ডেজার্ট জাতীয় খাবারও ভাবা যায় না একদমই।তবে মুখরোচক আর স্বাদের এই চিনি খাবারের তালিকা থেকে বাদ দিচ্ছেন অনেকেই।স্বাস্থ্যসচেতন হতে গিয়ে চিনিবিরোধী হচ্ছেন অনেকেই। বেড়াজালে আটকে যাচ্ছে বাঙালির শাশ্বত মিষ্টি চাখার সাধ।

সাস্থ্যসচেতনদের কাছে চিনি নিয়ে রয়েছে হাজারো দ্বিধা আর সংকোচ। ওজন বাড়বে কি না, বাড়লে কতটুকু, কোন কোন রোগের জন্য ক্ষতিকর এসব প্রশ্ন তো রয়েছেই। উপরন্তু বোঝার ওপর শাকের আঁটির মতো যোগ হয়েছে ডায়াবেটিকস রোগজনিত নানা সমস্যা। চিনিপ্রেমে ‘ভিলেনের’ ভুমিকায় অবতীর্ণ হওয়া এসব প্রশ্ন আর দ্বিধার খুব সুন্দর সমাধান হতে পারে ‘চিনিগো’।

দেশের জনপ্রিয় ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান রেনেটা ফার্মাসিউটিক্যাল এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান পূর্ণাভা লিমিডেট চিনির বিকল্প পন্য হিসাবে বাজারে নিয়ে এসেছে ‘চিনিগো’। গত ২৯ এপ্রিল ২০১৯ সোমবার রাজধানী ঢাকার মিরপুর ১৪ পিএসসি কনভেনশন হলে জমকালো এক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে উদ্বোধন করা হয়েছে পন্যটির নতুন সংস্করন ‘চিনিগো প্রিমিয়াম’।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রেনাটা ও পূর্ণাভা লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ কায়সার কবির, রেনাটা ও পূর্ণাভা লিমিটেডের ডাইরেক্টর সেলস খলিল মোসাদ্দেক। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আব্দুন নুর তুষার, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, নাগরিক টেলিভিশন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তামান্না চৌধুরী, প্রিন্সিপ্যাল ডায়েটিসিয়ান, এপোলো হসপিটালস, ঢাকা। শামসুন্নাহার নাহিদ (মহুয়া), প্রধান পুষ্টিবিদ, বারডেম, ঢাকা। বিশেষ অতিথি হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন ড. রহিমা সুলতানা, আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক ও গেস্ট লেকচারার, ফ্যাকাল্টি অব বিজনেস স্টাডি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

অনুষ্ঠানের শুরুতেই স্টিভিয়া পাতার নির্যাসে তৈরি চিনিগোর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন রেনাটা লিমিটেডের এডিশনাল ম্যানেজার রিনাত রিজভি। তিনি বলেন, ‘চিনিগো’ কি?

স্টিভিয়া নামে একটি গাছের পাতা থেকে সংগৃহীত নির্যাস দিয়ে তৈরি হয়েছে পূর্নাভার তাক লাগানো পণ্য ‘চিনিগো’। এবার স্বভাবতই প্রশ্ন আসবে স্টিভিয়া কি? স্টিভিয়া মূলত দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের একটি ভেষজ উদ্ভিদ। স্থানীয়ভাবে দীর্ঘদিন ধরেই খাবার ও পানীয়তে চিনির বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে স্টিভিয়া। স্টিভিয়া এক্সট্রাক্ট বা রিবিয়ানা নামে এটি পরিচিত সেখানে। এর মিষ্টতার পেছনে মূল উপাদান হলো বিভিন্ন ধরনের স্টিভিওল গ্লাইকোসাইড (প্রধানত স্টেভিওসাইড ও রিবডিওসাইট)।
এসব উপাদানের কারণে স্টিভিয়া সাধারণ চিনির চেয়ে প্রায় ২০০ গুণ বেশি মিষ্টি,তবে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রায় এর কোনো ধরনের প্রভাব নেই। ফলে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যও এটি সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যকর। এর সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো- এটি পুরোপুরি প্রাকৃতিক উপাদান,কোনোভাবেই কৃত্রিম নয়।

আর যারা চিনিকে বলছেন ‘না’ তারা আসলে বিকল্প হিসেবে কি খাচ্ছেন- সেটিও দেখা প্রয়োজন। সেই স্বাস্থ্যসচেতনরা আসলে জেনে না জেনে বেছে নিচ্ছেন ‘আর্টিফিশিয়াল সুইটনার’ বা কৃত্তিম মিষ্টকারককে। ওজন কমানো,সেই সাথে সুস্থ থাকার আপ্রাণ চেষ্টায় চা-কফি তো বটেই,খাদ্যতালিকা থেকে চিনিকে পুরোপুরি বাদ দিয়ে আর্টিফিশিয়াল সুইটনারের দ্বারস্থ হচ্ছেন অনেকেই। তারা হয়তো ভাবছেন এটা ক্ষতির কারন হবে না, যতোটা না ক্ষতি চিনিতে! কিন্তু আসলেই কি তাই?

উত্তর শুনে নিরাশ হতে পারেন কিন্তু! আসলে কথা হলো- কাজের কাজ না হয়ে বরং আপনার ওজনও বেশ খানিকটা বেড়ে যেতে পারে এই আর্টিফিশিয়াল সুইটনারের কারণে! গবেষণায় প্রমাণিত,ওজন বাড়া ছাড়াও আর্টিফিশিয়াল সুইটনারের প্রভাবে বাড়তে পারে ব্লাড প্রেশার, হতে পারে টাইপ টু ডায়াবেটিস। কানাডার মানিটোবা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত প্রধান গবেষক মেঘান আজাদ বলেন, ‘আর্টিফিশিয়াল সুইটনার থেকেলম্বা সময়ের জন্য কোনও সুফল পাওয়া যায় না। বরং কারও কারও ক্ষেত্রে ওজন বাড়া ও অন্যান্য কার্ডিও মেটাবলিক সমস্যা হতে পারে।’

ওবিসিটি বা মোটা হওয়া ঠেকাতে চিনি বাদ দিয়ে অনেকেই অ্যাসপার্টেম,সুক্রালোজ আর স্টেভিওসাইডের মতো কৃত্রিম মিষ্টবস্তুকে বেছে নিয়েছেন। এখানে সমস্যা হচ্ছে,চিনির চেয়ে এই কৃত্রিম বস্তুগুলির কেমিক্যাল গঠন আলাদা। জিভে উপস্থিত রিসেপ্টরকে এই উপাদানগুলি জাগিয়ে তোলে,ফলে মস্তিষ্কে মিষ্টি খাওয়ার সঙ্কেত পৌঁছায়। গবেষক মেঘান আজাদ তার গবেষনায় পেয়েছেন, ‘এই পদার্থগুলি শরীরের কোনও ক্ষতি করছে কিনা,সেটা খতিয়ে দেখা হয়নি এতদিন। ব্যবহারকারীরা যে ধরনের শারীরিক সমস্যা নিয়ে আসছেন,তাতে অন্তত এটা পরিষ্কার যে বিষয়টাকে আর হালকাভাবে না নিয়ে গভীরভাবে বিবেচনা করার সময় এসে গিয়েছে।’

অনেক ডায়েটিশিয়ানও বলেন,মাঝেমধ্যে খাবারে বা চা-কফিতে সামান্য চিনি খেলে তত ক্ষতি হয় না যতটা লম্বা সময় ধরে কৃত্রিম সুইটনার ব্যবহার করলে হতে পারে। তবে যাঁরা দিনে অন্তত ৫-৭ কাপ চা-কফি পান করেন,তারা ধীরে ধীরে চিনির পরিমাণ কমানোর চেষ্টা করুন,প্রথমদিকে অসুবিধে হলেও পরে দেখবেন চিনিহীন চা-কফিতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন।

এতো গেল আর্টিফিশিয়াল সুইটনার নিয়ে নানা কথা। এবার আসি সুস্থ থাকতে যদি চিনিকে ছাড়তেই হয় তবে চিনির বিকল্প কি হতে পারে যা শরীরে ক্ষতির কারন হবে না?
এমন প্রশ্নের উত্তর হয়তো চট করে কেউ দিতে পারবেন না। তবে উত্তর আছেই। চিনিতে যাদের সমস্যা তাদের জন্য সমাধান ‘স্টিভিয়া’। আর বাংলাদেশে এখন স্টিভিয়া মানেই ‘চিনিগো’।

Exit mobile version