TechJano

চুয়েটে “সোশ্যাল মিডিয়ার ইতিবাচক ব্যবহারে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন সংস্কৃতি তৈরি” শীর্ষক সেমিনার আয়োজন করল iDEA প্রকল্প

“সত্য-মিথ্যা যাচাই আগে, ইন্টারনেটে শেয়ার পরে।” এই স্লোগানকে সামনে রেখে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট)-এ অনুষ্ঠিত হল “সোশ্যাল মিডিয়ার ইতিবাচক ব্যবহারে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন সংস্কৃতি তৈরি” শীর্ষক একটি সেমিনার। নিরাপদে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার বিষয়ক এই বিশেষ সেমিনারটি আয়োজন করে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের আওতায় বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল এর অধীনে “উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন একাডেমী প্রতিষ্ঠাকরণ প্রকল্প (iDEA)। ৮ ডিসেম্বর ২০১৯, রবিবার সকালে শিক্ষার্থীদের নিয়ে উন্মুক্ত এই সেমিনারটি চট্টগ্রামের রাউজানের চুয়েট অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়।

সেমিনারটিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ পলক, এমপি। এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম-৬ রাউজান আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য ও রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির মাননীয় সভাপতি এ. বি. এম. ফজলে করিম চৌধুরী, এমপি , চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) এর উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলাম এবং “উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন একাডেমী প্রতিষ্ঠাকরণ প্রকল্প” (iDEA) এর পরিচালক (অতিরিক্ত-সচিব) সৈয়দ মজিবুল হক। সেমিনারটি সভাপতিত্ব করেন চুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক প্রফেসর মোহাম্মদ মশিউল হক।

সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ পলক, এমপি বলেন যে, বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারির সংখ্যা প্রায় ১০ কোটি যা ১০ বছর আগে ছিল মাত্র ৫৬ লাখ। প্রতিবছর ৪ কোটি মোবাইল ফোন আমদানী হয় যার প্রায় ৩০ থেকে ৪০ শতাংশই স্মার্ট ফোন। বর্তমানে ফেইসবুক ব্যবহারকারির সংখ্যা প্রায় ৩ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। এখন প্রতি এমবিপিএস ব্যান্ডউইথের দাম ৩০০ টাকা যেখানে ১০ বছর আগে এর মূল্য ছিল ৭৮ হাজার টাকা। ইন্টারনেটের মূল্য ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসার জন্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা-কে তিনি আন্তরিক ধন্যবাদ জানান এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। ১০ বছর আগে ২জি এর প্রচলন ছিল কিন্তু বর্তমানে তা ৪জি তে পরিণত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক মাননীয় উপদেষ্টা এবং আর্কিটেক্ট অব ডিজিটাল বাংলাদেশ জনাব সজীব ওয়াজেদ এর বক্তব্য অনুযায়ী ২০২৪ সালের মধ্যে সরকার ৫জি রোলআউট করবে। তাই দেশ তথ্যপ্রযুক্তিতে এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের এই ডিজিটাল স্পেসটাকে নিরাপদে রাখার দায়িত্ব আমাদের নিজেদের। বর্তমানে ফেইক নিউজ বা গুজবের সংখ্যা বাড়ছে। একটা ভালো কাজের প্রসংশা না করে উল্টো মিথ্যা ষড়যন্ত্র চালানো হচ্ছে যা সমাজের জন্য মঙ্গলজনক নয়।

প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন যে, এখন আমরা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছি। এই সক্ষমতা আমাদের ১১ বছর আগে ছিল না। এই ১১ বছরে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে আমাদের যত কিছু উন্নয়ন হয়েছে সেইগুলোকে টেকসই করার জন্য আমাদের এই ডিজিটাল স্পেসটাকে নিরাপদ করতে হবে। যদি আমরা না করতে পারি তাহলে আমাদের সামনে বেশ কিছু উদাহরণ আছে। ইরাক, সিরিয়া এরকম অনেক দেশ ধ্বংস হয়ে গেছে শুধুমাত্র তাদের সচেতনতার অভাবে। সেখানে কিন্তু সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদের উত্থান হয়েছে। আমরা যদি আমাদের ডিজিটাল স্পেস টাকে নিরাপদ করতে না পারি তাহলে আজকে যে ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার চুয়েটের ছাত্র-শিক্ষকদের জন্য “শেখ কামাল বিজনেস ইনকিউবেশন সেন্টার” উপহার দিলেন সেটা কিন্তু কোনো কার্যকারিতা থাকবে না। যদি আমরা ডিজিটাল ক্ষেত্রে সচেতন না হই, তাহলে এই যে যত কিছু আয়োজন স্টার্টআপ বাংলাদেশ এর স্টার্টআপ ফ্যাসিলিটিজ কিংবা আমাদের বাংলাদেশের সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানিগুলোর জন্য ইনসেনটিভ এগুলো কোন কিছুই কাজে লাগবে না। কারণ আমরা দেখেছি যে একের-পর-এক সহিংস ঘটনা কিভাবে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়া যায়।

তিনি আরো বলেন যে, আমরা খুব সহজেই গুজবে কথা বলি। গুজবকে অনেক ফানি শব্দ হিসেবে অনেকে কনসিডার করে। মিথ্যাকে আমরা ধর্মীয়ভাবে বলি মহাপাপ আর আইনগত ভাবে মিথ্যাকে বলা হয় “অপরাধ”। তাই, ফেসবুক, ইউটিউব, সোশ্যাল মিডিয়া বা ইন্টারনেটে যে কোন জায়গায় যদি কোন মিথ্যা অপপ্রচার দেখি তাহলে সেটাকে আমরা “মিথ্যা”-ই বলব। আর সে কারণেই আমাদের এই সত্য-মিথ্যা যাচাইয়ের বিষয়টা গুরুত্বসহকারে নিতে হবে। এটাকে হালকাভাবে, গুজব কিংবা একটা হাসি ঠাট্টার বিষয় হিসেবে নয় বরং এটা একটি জঘন্য অপরাধ এবং পাপ হিসেবে যখন আমরা বিবেচনা করব তখন কিন্তু আমরা বেশি সতর্ক হতে পারব। প্রতিমন্ত্রী উদাহরন হিসেবে রামু, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর, রংপুর, ভোলা ইত্যাদি ঘটনা নিয়ে আলোচনা করেন। সমাজের এই অবস্থা থেকে আমাদের দ্রুত ফিরে আসতে হবে। বর্তমানে আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহারকারির সংখ্যা প্রায় ২০ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় সাড়ে ৩ কোটি। আমাদের মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবহারকারী প্রায় শতভাগ আছে। শঙ্কার জায়গাটা হল- খুব সহজেই এক ঘন্টার মধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে কোটি মানুষের কাছে গুজব ছড়িয়ে দেওয়া যেতে পারে। প্রপাগান্ডা, ভুল তথ্য প্রচার, আউটসোর্সিংকে গুজব ছড়ানোর মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার, না বুঝে যেকোন তথ্য শেয়ার করার বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের সচেতন হতে হবে। অপরাধীকে প্রশ্রয় না দিয়ে এই সমস্যাগুলোর প্রতিকারে সকলকে কাজ করতে হবে।

বুঝে না বুঝে মিথ্যা সংবাদকে শেয়ার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। অবশ্যই শেয়ার করার আগে বিষয়টি সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। তিনি আরো বলেন যে পৃথিবীতে বড় কোন ক্ষতি হয় গুঁটি কয়েক খারাপ মানুষের সংর্স্পশে নয় বরং এটি হয়ে থাকে অধিকাংশ ভালো মানুষের নিরবতার কারণে। আমরা নিজেরা সচেতন হব এবং অন্যকে সচেতন করব। তাই, নীরব না থেকে প্রতিবাদের মাধ্যমে সবাইকে এক সাথে সমন্বিতভাবে, সম্মিলিতভাবে বাংলাদেশকে ভালোভাবে গড়ে তোলা সম্ভব। ডিজিটাল বাংলাদেশ হবে তারুণ্য নির্ভর এবং প্রযুক্তি নির্ভর। দেশে ডিজিটাল আইন রয়েছে এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা আছে। শাস্তি প্রয়োগের চেয়ে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলা উত্তম মাধ্যম হতে পারে বলে তিনি মনে করেন। তাই নিরাপদে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে সবাইকে তিনি একসাথে কাজ করার আহ্বান জানান।

সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে চট্টগ্রাম-৬ রাউজান আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য ও রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির মাননীয় সভাপতি এ. বি. এম. ফজলে করিম চৌধুরী, এমপি বলেন যে, অসম্ভব বলে আসলে কিছুই নেই। ইচ্ছা শক্তিকে কাজে লাগিয়ে অনেক কিছুই সম্ভব করা যেতে পারে। তিনি আরো বলেন যে, আমরা ভালো-কে ভালো বলি না। এটাই আমাদের মানুষের দোষ। তাই তিনি যে কোন ইতিবাচক বিষয়কে প্রশংসা করতে সবাইকে অনুপ্রানিত করেন। তিনি সকলকে “স্যার” বলে সম্বোধন না করে শুধুমাত্র শিক্ষকদের ক্ষেত্রেই এই সম্বোধন ব্যবহারে উৎসাহিত করেন। আমাদের দেশকে নিয়ে গর্ব করতে তিনি সকলকে অনুপ্রাণিত করেন এবং দেশকে যেকোন জায়গায় গর্বের সাথে তুলে ধরার জন্য আহ্বান জানান। এছাড়া মাননীয় সংসদ সদস্য বলেন যে, “রাউজানে আইটি ভিলেজের জন্য আমি মাঁটি কাটতেও রাজি।” আইটি ভিলেজকে দ্রুত বাস্তবায়ন, ফেইসবুক ও সোশ্যাল মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণ, নির্দিষ্ট সময় পরে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রন, রাউজানে জঙ্গি নিয়ন্ত্রণ, চুয়েটের জন্য রেল ব্যবস্থা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে বক্তব্য রাখেন। বিভিন্ন ধরনের গুজব ও সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ব্যক্তিগত ছবির অপব্যবহারের বিরুদ্ধে আইনত ব্যবস্থা গ্রহনে সবাইকে তিনি বিশেষ অনুরোধ করেন।

“উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন একাডেমী প্রতিষ্ঠাকরণ প্রকল্প” (iDEA) এর পরিচালক (অতিরিক্ত-সচিব) সৈয়দ মজিবুল হক তরুনদের ইন্টারনেটে যেকোন কিছু শেয়ার করার আগে নিজেদের বিবেক-বুদ্ধি দিয়ে বিবেচনা করে এবং উক্ত তথ্যের সত্য-মিথ্যা যাচাই করে শেয়ার করার জন্য অনুরোধ করেন। সোশ্যাল মিডিয়াতে অসত্য ও গুজব প্রচার করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হল এক প্রকার অন্যায় এবং এই প্রকারের কার্যক্রম স্বাধীনতা অর্জনের উদ্দেশ্যকে ব্যাহত করছে যা একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি ইন্টারনেটে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সকলকে একসাথে কাজ করার আহ্বান জানান। তিনি আইডিয়া প্রকল্পের বিভিন্ন কার্যক্রম তুলে ধরেন এবং প্রকল্পের মাধ্যমে ফান্ডিং, মেনটরিং, ট্রেইনিং এর সম্পূর্ণ চিত্র তুলে ধরেন। এর বাইরে তিনি স্টার্টআপ বাংলাদেশ-iDEA এর পরিকল্পনাধীন হ্যাকাথনের বিষয় বক্তব্য রাখেন। দেশের বিভিন্ন জনগুরুত্বপূর্ণ সমস্যাসমূহ চিহ্নিত করে সেসকল সমস্যাসমূহ সমাধানে তথ্য-প্রযুক্তি ভিত্তিক ইনোভেটিভ সমাধান খুজে বের করার লক্ষ্যে শীঘ্রই শুরু হবে জাতীয় পর্যায়ের হ্যাকাথন “ন্যাশনাল হ্যাকাথন অন ফ্রন্টীয়ার টেকনোলজিস”। আগ্রহী তরুনদের তিনি এই হ্যাকাথনে অংশ নিতে তিনি অনুপ্রানিত করেন। হ্যাকাথনের বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে স্টার্টআপ বাংলাদেশ- iDEA প্রকল্পের ওয়েবসাইট www.startupbangladesh.gov.bd -এ।

ইন্টারনেটের যুগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি প্রোফাইল আইডি বা পরিচয় যেকোন ব্যক্তিরই থাকবে এটাই স্বাভাবিক। ফেসবুক, লিঙ্কডইন, হোয়াটসঅ্যাপ, ইউটিউব বা টুইটার যাই বলা হোক না কেন এসব নেটওয়ার্কের আওতাভুক্ত আইডিটি যদি হাতছাড়া হয়ে যায় তবে ভুক্তভোগীদের নানা বিড়ম্বনার শীকার হতে হয়। ভুক্তভোগীদের মধ্যে শিক্ষার্থী বা তরুণদের সংখ্যাই বেশি। এরই আলোকে শিক্ষার্থী বা তরুণদের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তা, এর ব্যবহার বিধি, সামাজিক নেটওয়ার্কে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে করণীয়, ঠিক কোন পদ্ধতিগুলো অবলম্বন করলে হ্যাক হওয়ার সম্ভাবনা কমবে এসকল বিষয় নিয়ে সেমিনারে অন্যান্যরা বক্তব্য রাখেন এবং অনুষ্ঠানে অতিথিগন তাদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন ।

সেমিনারটিতে প্রায় ২শতাধিক শিক্ষার্থীসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তাবৃন্দ এবং এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিগন উপস্থিত ছিলেন। প্রধান অতিথির বক্তব্য শেষে মাননীয় প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ পলক, এমপি সোশ্যাল মিডিয়ার ইতিবাচক ব্যবহারে সচেতনতা বৃদ্ধি লক্ষ্যে একটি কি-নোট উপস্থাপন করেন এবং উক্ত সেমিনার শেষে তিনি সকলকে নিয়ে “সোশ্যাল মিডিয়া প্যারেড” এর শপথ পাঠ করেন।

Exit mobile version