পণ্যের অর্ডার দেওয়ার পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তা ক্রেতার হাতে পৌঁছে দেওয়া, তাতে ব্যর্থ হলে অগ্রিম নেওয়া পণ্যমূল্য জরিমানাসহ ফেরত দেওয়া, খারাপ পণ্য সরবরাহকে ফৌজদারি আইনের আওতায় প্রতারণা হিসেবে গণ্য করাসহ বিভিন্ন বিধান রেখে ই-কমার্স ব্যবসার জন্য নীতিমালা হচ্ছে।
অর্ডার সম্পন্ন হওয়ার পরে এলাকা ভেদে সাত থেকে ১০ দিনের মধ্যে পণ্য ডেলিভারি না দিলে জরিমানা গুনতে হবে ই- কমার্স কোম্পানিকে। এটি করতে ব্যর্থ হলে ই- কমার্স কোম্পানিকে জরিমানার পাশাপাশি গ্রাহককে টাকা ফেরত দিতে হবে। এমনকি তারা পণ্য সরবরাহ জালিয়াতির মামলায় দোষী সাব্যস্ত হবে।
জালিয়াতি এবং দেরিতে পণ্য ডেলিভারি রোধে এসব শর্ত যুক্ত করে ই-কমার্স নীতিমালা চূড়ান্ত করতে যাচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ জাতীয় অনেক নির্দেশিকাসহ, ই-কমার্সকে আরও সহজলভ্য করতে একটি নীতি সমৃদ্ধ ব্যবসায়ীক মডেল প্রণয়ন করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে ই-কমার্স নীতিমালার একটি খসড়া চূড়ান্ত করেছে। নীতিমালা চূড়ান্ত করার জন্য বাণিজ্যমন্ত্রী এবং মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি এবং ই-কমার্স খাতের প্রতিনিধিদের সঙ্গে শিগগিরই বৈঠকে বসবে।
তবে এই নীতিমালা শুধু ওয়েবসাইটভিত্তিক প্রাতিষ্ঠানিক ই-কমার্স কোম্পানিগুলোর জন্য। ফেসবুক ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকেন্দ্রিক ছোট ছোট ই-কমার্স উদ্যোগের জন্য পরে আলাদা একটি নীতিমালা করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বর্তমানে ওয়েবসাইট ভিত্তিক ই-ক কমার্স প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা পা্রয় ২০০০টি। এছাড়াও ফেসবুক ও অন্যান্য সামাজিক যোগযোগ মাধ্যম ভিত্তিক ৫০ হাজার উদ্যোগ রয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বিদ্যমান অসংগতি হ্রাস এবং গ্রাহকের স্বার্থ রক্ষার মাধ্যমে সরকার ই- কমার্স খাতকে সমৃদ্ধ করার জন্য নীতিমালা তৈরি করছে। মন্ত্রণালয়ের আশা গ্রাহকের আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য স্বচ্ছ নীতিমালা প্রণয়ন করা গেলে আগামী বছর ই- কমার্স খাতে ৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে।
খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে যে অনলাইনে অর্ডার করার সর্বোচ্চ ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ডেলিভারি ম্যানের কাছে পণ্য হস্তান্তর করতে বাধ্য থাকবে ই-কমার্স কোম্পানি। ক্রেতা-বিক্রেতার অবস্থান একই জেলায় হলে ডেলিভারিম্যান সাতদিনের মধ্যে পণ্য ক্রেতার হাতে পৌঁছে দেবেন। ক্রেতা অন্য জেলার হলে পণ্যটি তার হাতে পৌঁছাতে সর্বোচ্চ ১০ দিন সময় পাবেন ডেলিভারিম্যান।
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পণ্য পৌঁছে দিতে ব্যর্থ হলে ক্রেতার কাছ থেকে নেওয়া অগ্রিম নেওয়া মূল্য ফেরত দেওয়ার পাশাপাশি আর্থিক জরিমানা গুণতে হবে সংশ্লিষ্ট ই-কমার্স কোম্পানিকে।
নীতিমালার খসড়ায় এছাড়াও বলা হয়েছে, কোনো পণ্য কোম্পানির স্টকে না থাকলে সেই পণ্যের অর্ডার নেওয়া যাবে না। অনলাইনে প্রদর্শিত পণ্যে সর্বোচ্চসংখ্যক সঠিক স্পেসিফিকেশন উল্লেখ থাকতে হবে, যাতে ক্রেতারা পণ্যের গুণগত মান সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারেন।
ভালো মানের পণ্যের ছবি ও স্পেসিফিকেশন দেখিয়ে খারাপ পণ্য ডেলিভারি করলে প্রতারণা হিসেবে গণ্য করা হবে। এজন্য ফৌজদারী আইনের ৪২০ ধারা অনুযায়ী কোম্পানির বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগে মামলা করতে পারবেন ক্রেতারা।