গত এক বছর ধরে বেশ সমালোচনার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে জাকারবার্গকে। তাই ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গের নিরাপত্তা খরচ বেড়ে গেছে। গত বছরের তার নিরাপত্তা খাতে ব্যয় হয়েছে ২ কোটি ২০ লাখ ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৮৭ কোটি টাকা।
সিএনএনের এক খবরে বলা হয়েছে, এ বিপুল অর্থ ব্যয় হয়েছে জাকারবার্গের নিরাপত্তাকর্মীদের বেতন, সরঞ্জাম কেনা, নিরাপত্তা সেবা নেওয়া ও আবাসনের উন্নয়নের পেছনে। ২০১৭ সালে এসব খাতে ফেসবুকের ব্যয় ছিল ৭১ লাখ ডলার (৭৭ কোটি টাকা)। শুধু জাকারবার্গ নন, তাঁর পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা ব্যয়ও বহন করে ফেসবুক। সেটা দেশে থাকার সময় এবং দেশের বাইরে থাকার সময়ও।
২০১৭ সালে জাকারবার্গের ব্যক্তিগত নিরাপত্তায় যা খরচ হয়েছিল ২০১৮ সালে তা বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে বলে দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
Eprothom Aloজাকারবার্গ ফেসবুক থেকে প্রতীকী মাত্র ১ ডলার বেতন নেন। তবে তাঁর নিরাপত্তা বাবদ গত বছরে মোট ২ কোটি ২৬ লাখ মার্কিন ডলার খরচ দেখানো হয়েছে। এর মধ্যে ৯০ লাখ ডলার জাকারবার্গ ও তাঁর পরিবারের নিরাপত্তায় ব্যবহার করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৬ লাখ ডলার ব্যক্তিগত বিমান ও নিরাপত্তা খরচে ব্যবহৃত হয়েছে।
বিজনেস ইনসাইডারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গ বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার মেনলো পার্কে তাঁর কার্যালয়। সেখানে অন্য কর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত অফিস করেন তিনি। তবে এর বাইরেও বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করতে হয় তাঁকে। তাঁর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে অনেকের ব্যাপক কৌতূহল রয়েছে। সাদামাটাভাবে চলেন তিনি। সাধারণত ছাই রঙের টি-শার্ট ও ট্রাউজার পরে অফিস করেন। পোশাক বিষয়ে মাথা না ঘামালেও নিজের নিরাপত্তা নিয়ে এখন বেশ উদ্বেগ বেড়েছে তাঁর। তাই তো নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা। অফিস থেকে যাতে জরুরি প্রয়োজনে বের হতে পারেন, সে কারণে সেখানে গোপন সুড়ঙ্গ তৈরি করা হয়েছে।
প্রযুক্তি বিশ্বের বড় বড় প্রতিষ্ঠানের অনেক কর্মকর্তা নিজের চারপাশে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা মোতায়েন করে রাখেন। তবে সে তুলনায় জাকারবার্গ এখন আরও বেশি সতর্ক হয়ে উঠেছেন। ফেসবুকের সাবেক ও বর্তমান নিরাপত্তাকর্মীদের উদ্ধৃত করে বলা হয়, জরুরি ভিত্তিতে যাতে জাকারবার্গকে অফিস থেকে সরিয়ে নেওয়া যায়, সে জন্য অফিসে ‘প্যানিক স্যুট’ বা গোপন সুড়ঙ্গ রয়েছে। তবে ওই গোপন সুড়ঙ্গ নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে মন্তব্য করেনি ফেসবুক। বিষয়টি অস্বীকারও করেনি কর্তৃপক্ষ।
বিজনেস ইনসাইডারের প্রতিবেদনে বলা হয়, অনেক বড় কর্মকর্তার পৃথক অফিস থাকে, কিন্তু জাকারবার্গের তা নেই। অন্য কর্মীদের মতো জাকারবার্গের ডেস্কও খোলা। অন্যদের মতো তিনি সেখানে বসেন। তবে তাঁর পাশে দেহরক্ষী থাকে। আরেকটি বিষয় হচ্ছে মেনলো পার্কের জাকারবার্গের ওই অফিসের নিচেই আছে গাড়ি রাখার জায়গা। কিন্তু গাড়িবোমার উদ্বেগের কারণেই কেউ জাকারবার্গের বসার জায়গার ঠিক নিচে গাড়ি রাখতে পারেন না।
জাকারবার্গ বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে নানা রকম উপহার পান। কিন্তু কোনো উপহার তিনি নিজে খোলেন না। জাকারবার্গের কাছে কোনো কিছু পৌঁছাতে হলে তা আগে নিরাপত্তার পরীক্ষায় পাস করে আসতে হয়। কোনো রেস্তোরাঁ বা বারে গেলে তাঁর নিরাপত্তারক্ষীরা আগে তল্লাশি করেন। জাকারবার্গের সংস্পর্শে আসা কোনো চিকিৎসক বা প্রশিক্ষককেও নিরাপত্তার পরীক্ষা পেরোতে হয়।
২০১৫ সালের পর থেকেই জাকারবার্গের নিরাপত্তার খরচ বেড়ে চলেছে। ২০১৫ সালে ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গের নিরাপত্তার পেছনে সাড়ে ৩৩ কোটি টাকা (৪২ লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলার) খরচ করে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুওরস ৫০০ সুচকে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে এ খরচ ছিল সর্বোচ্চ। ফেসবুকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালে ফেসবুক জাকারবার্গের নিরাপত্তার পেছনে ব্যয় করেছিল ৫ দশমিক ৮ মিলিয়ন ডলার, ২০১৭ সালে ৯ মিলিয়ন ডলার।
২০১৮ সালের মার্চ মাস থেকে জাকারবার্গের ওপর থেকে চাপ বাড়তে থাকে। ওই সময় ফেসবুকের তথ্য বেহাত হওয়ার ঘটনায় প্রাইভেসি নিয়ে সমালোচনা বাড়তে থাকে। নির্বাচনে হস্তক্ষেপ, ঘৃণিত বক্তব্য, ভুয়া খবর ঠেকাতে যথাযথ ব্যবস্থা ফেসবুক নিচ্ছে কিনা সে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে।
ফেসবুকের আধিপত্য নিয়ে প্রশ্ন তুলে অনেক দেশ ফেসবুকের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের বিষয়ে আলোচনা শুরু করে। যুক্তরাজ্যের এক আইনপ্রণেতা ফেসবুককে ‘ডিজিটাল গ্যাংস্টার’ বলে মন্তব্য করেন।
ফেসবুকের পক্ষ থেকে বরাবরই বলা হচ্ছে তারা ব্যবহারকারীর তথ্য নিরাপদ রাখতে যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছে।