টেক-বিনোদন

জাতীয় হ্যাকাথনে বিজয়ী ১০ বাংলাদেশ-ভারত যৌথ আয়োজিত

By Baadshah

March 01, 2020

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের আওতায় বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল এর অধীনে “উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন একাডেমী প্রতিষ্ঠাকরণ প্রকল্প (iDEA)” এর মাধ্যমে আয়োজিত হল “ন্যাশনাল হ্যাকাথন অন ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজিস”। দুই দিনব্যাপি এই হ্যাকাথনটি ২৮ ও ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ (শুক্র-শনি) তারিখ ঢাকার ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ (আইইউবি) এর ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত হয়। Think. Hack. Solve.” স্লোগানটিকে সামনে রেখে “বাংলাদেশে অবস্থিত ভারতীয় হাই কমিশন” ও “টেক মাহিন্দ্রা লিমিটেড (TechM)” এর সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত হয় এই হ্যাকাথন।

২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০, শনিবার বিকেলে হ্যাকথন শেষে ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ এর অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় এর সমাপনী অনুষ্ঠান। সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী জনাব মোঃ তাজুল ইসলাম, এমপি। তিনি বলেন যে বাংলাদেশকে আমরা উন্নত দেশ বানাবো। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আমাদের দেশের তরুণদের উদ্ভাবন ও ক্যাপাসিটির সঠিক ব্যবহার করে দেশকে আরো এগিয়ে নেওয়া সম্ভব। বঙ্গবন্ধু সোনার বাংলা নিয়ে স্বপ্ন দেখেছেন। আমাদের তরুণদের উদ্ভাবনী চিন্তা চেতনা নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার যে স্বপ্ন এটা আমাদের প্রতিনিয়ত সাহস যোগাচ্ছে। বাংলাদেশ সত্যিকার অর্থেই সোনার বাংলা সেটা সকলের বিশ্বাসের জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে এই তরুণরা। তরুণরাই গড়বে আগামীর সুন্দর বাংলাদেশ।

গেস্ট অব অনার হিসেবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ পলক, এমপি বলেন যে, লোকাল ইনোভেশনও হতে পারে গ্লোবাল সল্যুশন। তাই লোকাল সল্যুশন ও লোকাল ইনোভেশনকে আমরা কিভাবে গ্লোবাল সমাধান ও গ্লোবাল মার্কেটে নিয়ে যেতে পারি তার একটি ব্রিজিং করতে হবে। বিশ্বের সকল উদ্ভাবন এসেছে সরকার, একাডেমিয়া এবং ইন্ডাস্ট্রি এই তিনটি পক্ষের পারস্পরিক সমঝোতা ও অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে। তিনি বিশ্বের প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন ইনোভেটরদের উদাহরণ দিয়ে বলেন, প্রথমে একজন উদ্ভাবক তার আইডিয়া নিয়ে ভেবেছে, কল্পনা করেছে ও তার সম্ভাব্য সমাধান করেছে। তারপর সেটার সাথে একাডেমিয়া ও ইনোভেটরের সাথে ইন্ডাস্ট্রির একটি সম্পর্ক স্থাপন হয়েছে এবং সেইটাকে মার্কেটে গ্রহণযোগ্য করা ও স্কেলেবল করার জন্য সরকারের পলিসি ও আইনগত সহায়তার প্রয়োজন হয়েছে। সবশেষে তিনি দেশীয় সমস্যাসমূহের সমাধানে এই হ্যাকাথনে অংশগ্রহণ করার জন্য সকলকে ধন্যবাদ জানান এবং একইসাথে সকল তরুণ ইনোভেটরদের ভবিষ্যতে স্টার্টআপ বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সহোযোগিতা করা হবে বলেও জানান।

হ্যাকাথনের সমাপনী অনুষ্ঠানে টেক মাহিন্দ্রা লিমিটেডের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স এর সভাপতি সুজিত বক্সী। তিনি বলেন, যে ১০ টি চ্যালেঞ্জসমূহ নির্বাচন করা হয়েছে এবং এর থেকে যে ভালো সমাধানগুলো আমাদের তরুণ উদ্ভাবকের কাছ থেকে এসেছে, সেগুলোকে আন্তর্জাতিক বাজারে নিয়ে যাওয়ার জন্য টেক মাহিন্দ্রার প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহার করা হবে। বিজয়ী দলগুলোকে তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান “টেক মাহিন্দ্রা লিমিটেড” এর মেকারস্ ল্যাবে গবেষণা ও প্রযুক্তি সহয়তাসহ মেনটরিং ও প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। সবশেষে তিনি আইসিটি বিভাগ ও বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনকে ধন্যবাদ জানান।

অতিথিদের মধ্যে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় ডেপুটি হাইকমিশনার শ্রী বিশ্বদীপ দে বক্তব্য রাখেন। তিনি বাংলাদেশ সরকারের আইসিটি সেক্টরের উন্নয়নে এমন যুগোপযোগী আয়োজনকে সাধুবাদ জানান। এছাড়া অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) শেখ মুজিবুর রহমান এনডিসি এবং খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম

সারাদেশ থেকে নির্বাচিত প্রায় ১৫০ জন উদ্ভাবকের সমন্বয়ে ৫১টি টিম নিয়ে দেশের ১০টি জনগুরুত্বপূর্ণ সমস্যার তথ্য-প্রযুক্তি ভিত্তিক উদ্ভাবনী সমাধানের লক্ষ্যে শুরু হয় “ন্যাশনাল হ্যাকাথন অন ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজিস”। প্রচার-প্রচারণার অংশ হিসেবে ১০ টি বিশ্ববিদ্যায়ে অনুষ্ঠিত হয় হ্যাকাথনের প্রোমোশনাল ক্যাম্পেইন। প্রাথমিক বাছাইকৃত ৩৪৯ টি টিম থেকে নির্বাচিত ৫১ টি দল মূল হ্যাকাথনে অংশ নিয়েছেন যাদের মেনটরিং করেছেন ৪০ জন মেনটরের সমন্বয়ে গঠিত একটি দক্ষ টিম। হ্যাকাথনে ১০ টি চ্যালেঞ্জের জন্য ১০টি জাজিং বোর্ড গঠন করা হয় যেখানে ৩০ জন অভিজ্ঞ বিচারক এই চূড়ান্ত বিজয়ীদের বাছাই করেন। শনিবার, ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে হ্যাকাথনের সমাপনী অনুষ্ঠানে এই হ্যাকাথন থেকে প্রাপ্ত সেরা ১০ টি ইনোভেশনকে বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

নির্বাচিত ১০ চ্যালেঞ্জে বিজয়ীরা হলেন-

  1. “গুজব প্রতিরোধে সমন্বিত ব্যবস্থা প্রবর্তন” চ্যালেঞ্জ-এ ”অন্যেষা” প্রকল্প নিয়ে “টিম অনটন”।
  2. “পল্লী সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পগুলির মনিটরিং এর জন্য একটি ইফেক্টিভ টুল তৈরি” চ্যালেঞ্জ -এ “ডিজিটাল পাবলিক সার্ভিস প্ল্যাটফর্ম” প্রকল্প নিয়ে “Shout#2”।
  3. “একটি কার্যকর ও আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির প্রবর্তন” চ্যালেঞ্জ-এ “গ্রীন বিডি” প্রকল্প নিয়ে “ট্রজান”।
  4. “নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে ইনটেগ্রেটেড মার্কেট ইন্টেলিজেন্স প্ল্যাটফর্ম তৈরি।” চ্যালেঞ্জ-এ “ইন্টিগ্রেটেড মার্কেট ইন্টেলিজেন্স প্ল্যাটফর্ম” প্রকল্প নিয়ে “অরিজিন্যাটিভ-১”।
  5. “যথাযথভাবে খাদ্যশস্য সংরক্ষণে স্মার্ট ওয়্যারহাউস (এলএসডি/সিএসডি/সাইলো)” চ্যালেঞ্জ-এ “অ্যান আইওটি বেইজড স্মার্ট ওয়্যারহাউস ফর প্রিজার্ভিং গ্রেইনস প্রপার্লি” প্রকল্প নিয়ে “ব্রগ্রামার্স”।
  6. “অনুমোদিত বিল্ডিং কোড অনুযায়ী স্থাপনা তৈরিতে রিয়েল টাইম ইমারত নির্মাণ পরিবীক্ষণ ব্যবস্থা প্রবর্তন।” চ্যালেঞ্জ-এ “পর্যবেক্ষণ” প্রকল্প নিয়ে “ল্যাম্বডা”।
  7. “পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য নিশ্চিতকরণে যথাযথ ব্যবস্থা প্রবর্তন।” চ্যালেঞ্জ-এ “অকুপেশনাল সেইফটি অ্যান্ড হেলথ” প্রকল্প নিয়ে “রুয়েট অ্যাবাকাস”।
  8. “রেল দুর্ঘটনা রোধে ‘ক্যাব সিগন্যালিং’ব্যবস্থার আধুনিকায়ন।” চ্যালেঞ্জ-এ “কমিউনিকেশন বেইজড রেইল ট্রাফিক কন্ট্রোল উইথ ক্যাব সিগনেইলিং” প্রকল্প নিয়ে “টিম সিগনাস”।
  9. “নৌ-দুর্ঘটনা রোধে আধুনিক নৌযান সিগন্যালিং/ট্র্যাকিং পদ্ধতি চালুকরণ।” চ্যালেঞ্জ-এ “দি কোস্ট গার্ড” প্রকল্প নিয়ে “জ্যান্ডার”।
  10. “সড়ক দুর্ঘটনা রোধে ‘ড্রাইভিং লাইসেন্স’এবং ‘মোটরযান ফিটনেস সার্টিফিকেট’প্রদান ব্যবস্থার আধুনিকায়ন।” চ্যালেঞ্জ-এ “ড্রাইভ সেইভ লাইভ” প্রকল্প নিয়ে “বুয়েট স্ক্যামারস্”।

পরবর্তীতে বিজয়ী দলগুলোর প্রকল্পসমূহের ম্যাচুউরিটির পর “টেক মাহিন্দ্রা লিমিটেড”-এর আওতাভুক্ত মার্কেটিং চ্যানেলের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রচারণা করে তাদেরকে গ্রোথ পর্যায়ে নিয়ে আসতে সহযোগিতা করা হবে। সবশেষে বিজয়ী ১০টি টিমকে অ্যাওয়ার্ড ও সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়।

সমাপনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) এর নির্বাহী পরিচালক পার্থপ্রতিম দেব এবং সভাপতিত্ব করেন করেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোঃ রাশেদুল ইসলাম। সবশেষে সকলকে ধন্যবাদ জানান iDEA প্রকল্পের পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) সৈয়দ মজিবুল হক। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সমূহ, বাংলাদেশে অবস্থিত ভারতীয় হাই কমিশন ও টেক মাহিন্দ্রার উধ্বর্তন কর্মকর্তাগণসহ আরো অনেকে উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।