TechJano

জো বাইডেন ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিতর্কে কে জিতলেন

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রথম মুখোমুখি বিতর্ক চলাকালে কথা বলার সময়ের দিক থেকে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। ডেমোক্র্যাট দলীয় নেতাদের কেউ কেউ মনে করছেন, ট্রাম্পকে জোরালোভাবে মোকাবিলা করতে পারেননি বাইডেন। এ সুযোগে ট্রাম্প অনর্গল মিথ্যা বলে গেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে দুই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বাইডেন ও ট্রাম্পের মধ্যকার প্রথম বিতর্কটি শুরু হয়। সিএনএন আয়োজিত এই বিতর্ক আটলান্টায় মার্কিন সংবাদমাধ্যমটির স্টুডিওতে অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রায় দেড় ঘণ্টার ওই বিতর্কে ট্রাম্প ৪০ মিনিট ১২ সেকেন্ডের মতো কথা বলেছেন। অপর দিকে বাইডেন কথা বলেছেন ৩৫ মিনিট ৪১ সেকেন্ড।

যদিও প্রশ্নের জবাব দেওয়ার ক্ষেত্রে দুই প্রার্থীরই সমান সুযোগ ছিল।

বিতর্কে দুই প্রার্থী একে অপরকে আক্রমণ করে বক্তব্য দেন। তবে বাইডেনের ভূমিকায় হতাশ কয়েকজন ডেমোক্র্যাট–সমর্থক। তাঁরা বলছেন, বিতর্কে ট্রাম্পের মিথ্যা কথাগুলোর পাল্টা জবাব দিতে পারেননি বাইডেন। এমনকি নিজের লক্ষ্য কী, তিনি দেশের জন্য কী কাজ করেছেন, তা সুস্পষ্টভাবেও ব্যাখ্যা করতে পারেননি বর্তমান এই প্রেসিডেন্ট।

এক আইনপ্রণেতা একে ‘বিপর্যয়’ বলে অভিহিত করেছেন। সিএনএনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ওই আইনপ্রণেতা বলেন, ‘ট্রাম্পকে দেখে মনে হয়েছে, তিনি যুক্তি খণ্ডনের প্রস্তুতি নিয়ে এসেছেন, যদিও তিনি ঘণ্টায় ৬০ মাইল গতিতে মিথ্যা বলে গেছেন। বাইডেনের কথাবার্তা অস্পষ্ট ছিল।’

আরেক আইনপ্রণেতা মনে করেন, বাইডেন ধীরে ধীরে ভালো করছিলেন, কিন্তু তা ফলপ্রসূ হয়নি।

এমনকি ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসও স্বীকার করেছেন, বাইডেন ধীরগতিতে শুরু করেছিলেন। তবে তাঁর দাবি, ‘বাইডেন পরে দৃঢ়ভাবেই বিতর্ক শেষ করতে পেরেছেন।’

বাইডেনের প্রচারণা শিবিরের কর্মকর্তারা বলেছেন, গত কয়েক দিনে মার্কিন প্রেসিডেন্টের ঠান্ডা লাগায় তাঁর কণ্ঠস্বরে সমস্যা হয়েছে। বাইডেনের প্রচারণা শিবির শুরুতে তাঁর ঠান্ডা লাগার কথা প্রকাশ করেনি। বিতর্ক শুরু হওয়ার ৪৫ মিনিটের মাথায় তাঁরা সাংবাদিকদের এ কথা জানায়।

বাংলাদেশ সময় শুক্রবার সকাল সাতটার দিকে সিএনএনের আটলান্টা স্টুডিওতে এই বিতর্ক শুরু হয়। চার বছর পর প্রথমবারের মতো মুখোমুখি বিতর্কে অংশ নিচ্ছেন বাইডেন ও ট্রাম্প।

বিতর্ক মঞ্চে উঠলেও প্রথা অনুসারে করমর্দন করেননি বাইডেন ও ট্রাম্প। ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বিতর্কেও কোভিড-১৯ বিধিনিষেধের কারণে করমর্দন করেননি দুজন। এরপর দুজনকে বিতর্কের নিয়ম বলে দেন সঞ্চালক।
বিতর্কের শুরুতে আসে অর্থনীতি ইস্যু। এরপর একে একে গর্ভপাত অধিকার, কর, স্বাস্থ্যসেবা এবং আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার নিয়ে বিতর্কে জড়ান বাইডেন ও ট্রাম্প। প্রসঙ্গক্রমে আসে করোনাভাইরাসের সময় নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপও।

এবার টেলিভিশন স্টুডিওতে বিতর্কটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আগের বিতর্কগুলোতে দর্শকদের উপস্থিতি থাকলেও এবার তেমনটা হচ্ছে না। ফলে দর্শকদের প্রতিক্রিয়া সরাসরি দেখার সুযোগ নেই। বাইডেনের প্রচার দলের অনুরোধে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

একপর্যায়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন সতর্ক করে বলেন, তাঁর বিশ্বাস, ভ্লাদিমি পুতিন একজন ‘যুদ্ধাপরাধী’। পুতিন পুরোনো ‘সোভিয়েত সাম্রাজ্য’ আবার প্রতিষ্ঠা করতে চান বলেও অভিযোগ তোলেন বাইডেন।

সিএনএনের আটলান্টা স্টুডিওতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মুখোমুখি বিতর্কে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে উত্তেজনা ছড়িয়েছে।

একপর্যায়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন সতর্ক করে বলেন, তাঁর বিশ্বাস, ভ্লাদিমি পুতিন একজন ‘যুদ্ধাপরাধী’। পুতিন পুরোনো ‘সোভিয়েত সাম্রাজ্য’ আবার প্রতিষ্ঠা করতে চান বলেও অভিযোগ তোলেন বাইডেন।

বাইডেন বলেন, ‘তিনি (পুতিন) সেখানে (ইউক্রেন) যুদ্ধ থামাতে চান বলে কি আপনি মনে করেন?…পোল্যান্ডে, বেলারুশে, ন্যাটো দেশগুলোতে কী ঘটছে বলে আপনি মনে করেন?’

বিতর্কে ইউক্রেনকে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থের চেয়ে বেশি অস্ত্র দেওয়ার কথাও জোরালোভাবে বলেন বাইডেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘এসব কারণেই আমরা শক্তিশালী।’

এদিকে ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধে পুতিনের শর্ত নিয়ে ট্রাম্পকে প্রথমে একবার প্রশ্ন করেন সিএনএনের সঞ্চালক ডানা বাশ। প্রথমবার ট্রাম্প এর উত্তর এড়িয়ে যান। এরপর বাশ দ্বিতীয়বার ট্রাম্পকে প্রশ্ন করেন, ‘পুতিনের শর্তগুলো আপনার কাছে গ্রহণযোগ্য কি না?’ এর উত্তরে ট্রাম্প বলেন, ‘না, এগুলো গ্রহণযোগ্য নয়।’

বিতর্ক শুরুর কিছুক্ষণ পরেই নভেম্বরে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী বাইডেন ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধ নিয়ে প্রশ্নের সম্মুখীন হন।

এই ইস্যুতে বাইডেনের ডেমোক্র্যাট সমর্থকের একাংশের বিরোধিতার মুখে রয়েছেন বাইডেন। প্রশ্ন করা হয়, হামাস ও ইসরায়েল যুদ্ধ শেষ করতে বাইডেন কী করবেন। উত্তরে বাইডেন বলেন, একমাত্র হামাসই এই যুদ্ধের শেষ চায় না। বাইডেন ইসরায়েলের প্রতি তাঁর জোরালো সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন। বলেন, হামাসকে নির্মূল করতে হবে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে প্রথম মুখোমুখি বিতর্কে অভিবাসন নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আক্রমণ করেছেন জো বাইডেন। তিনি বলেছেন, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট থাকাকালে মায়ের কাছ থেকে শিশুদের নিয়ে যাচ্ছিলেন, আলাদা করছিলেন।
বিতর্কে বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের কাছে প্রশ্ন রাখা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত-সংকটে কেন ভোটাররা তাঁর ওপর আস্থা রাখবেন।

জবাবে বাইডেন বলেন, মার্কিন কংগ্রেসে একটি দ্বিদলীয় সীমান্ত বিল পাস করার জন্য তাঁর প্রশাসন অনেক চেষ্টা করেছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে প্রথম মুখোমুখি বিতর্কে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হওয়া নিয়ে তাঁকে তীব্র আক্রমণ করেছেন জো বাইডেন। বিতর্কে ট্রাম্পের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বাইডেন। এ নিয়ে তিনি ট্রাম্পকে ‘কটূক্তি’ করেন। ট্রাম্পকে একজন দোষী সাব্যস্ত অপরাধী হিসেবে উল্লেখ করেন বাইডেন।

বিতর্কের একপর্যায়ে বাইডেন বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যে একাধিক মামলা রয়েছে, সে প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন।

 

 

Exit mobile version