TechJano

টিকা তৈরির গবেষণার তথ্য চুরিতে মরিয়া সাইবার অপরাধীরা

বৈশ্বিক স্বাস্থ্যসেবা খাতকে লক্ষ্য করে সাইবার অপরাধীরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। অনেক দেশের সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে এমন সাইবার অপরাধীরা নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমিত হয়ে সৃষ্ট কভিড-১৯ মহামারীর তথ্য এবং টিকা তৈরির গবেষণার তথ্য চুরির জন্য মরিয়া হয়ে কাজ করছে। সাইবার অপরাধীরা টিকা তৈরির গবেষণা সম্পর্কে নিয়মিত খোঁজখবর রাখছে বলে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের এক যৌথ বিবৃতিতে সতর্ক করা হয়েছে। খবর বিবিসি।

এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন এক মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, স্বাস্থ্যসেবা খাতকে ঘিরে সাইবার অপরাধীদের তত্পরতা ও ঝুঁকি সম্পর্কে গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সতর্ক করা হয়েছে। এরই মধ্যে তথ্য চুরির মতো কোনো ঘটনা ঘটেছে কিনা, সে বিষয়ে মার্কিন ন্যাশনাল কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড সিকিউরিটি সেন্টারের পরিচালক বিল এভানিনা কোনো মন্তব্য করেননি।

ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকেও একই ধরনের তত্পরতার কথা বলা হয়েছে। তাদের ভাষ্যে, নভেল করোনাভাইরাসের টিকা তৈরির জন্য এখন এক আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা চলছে। গবেষক, বিভিন্ন কোম্পানি ও বিভিন্ন দেশের সরকার টিকা তৈরির লক্ষ্যে কাজ করছে। এ প্রচেষ্টা সম্পর্কে বিদেশী গুপ্তচর সংস্থাগুলো গোপনে তথ্য পাওয়ার চেষ্টা করছে। একই সঙ্গে দেশীয় গুপ্তচর সংস্থাগুলো তাদের প্রতিহত করতে চেষ্টা চালাচ্ছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, মার্কিন ন্যাশনাল কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড সিকিউরিটি সেন্টারের পরিচালক বিল এভানিনার প্রতিষ্ঠান মার্কিন সরকার, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষাবিদদের বিদেশী গোয়েন্দা তত্পরতা প্রতিরোধে পরামর্শ দিয়ে আসছে।

বিল এভানিনা বলেন, আমাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠান ও সরকারের সঙ্গে আমরা ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছি, যাতে এসব গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা এবং মূল্যবান তথ্য-উপাত্ত বেহাত হওয়া ঠেকানো যায়। আমরা মনে করছি চীনা কমিউনিস্ট পার্টিসহ বিদেশী গুপ্তচর সংস্থাগুলো চেষ্টা করবে আমাদের গবেষণার তথ্য-উপাত্ত হস্তগত করার।

জানা যায়, নভেল করোনাভাইরাসের টিকা তৈরির গবেষণায় মার্কিন সরকার যে প্রকল্পে সহায়তা দিচ্ছে তার নাম ‘অপারেশন ওয়ার্প স্পিড’। যে দেশ প্রথম কার্যকর ও নিরাপদ টিকা তৈরি করতে পারবে, তা দিয়ে তারা প্রথমে নিজেদের নাগরিকদের সুরক্ষা দেয়ার চেষ্টা করবে।

এভানিনা বলেন, কভিড-১৯ মহামারী ও টিকা তৈরির গবেষণার সঙ্গে জড়িত প্রত্যেকটি মেডিকেল গবেষণা প্রতিষ্ঠানকে আমরা তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয়ে সতর্ক করেছি।

গত এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের এক কর্মকর্তা জানান, কভিড-১৯ গবেষণায় জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলোতে কিছু অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটেছে। এফবিআইয়ের উপসহকারী পরিচালক টনিয়া উগোরেত্জ বলেন, সাইবার গুপ্তচরদের দীর্ঘদিনের প্রধান লক্ষ্য বায়োমেডিকেল তথ্য চুরি করা এবং এসব গবেষণার সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলো এখন তাদের প্রধান লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে।

এফবিআইয়ের সতর্কতা জারির কিছুদিন পর মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল জন ডেমারস মন্তব্য করেন চীন এসব তথ্য সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হবে না এটা মনে করা চরম ভুল হবে। নভেল করোনাভাইরাসের টিকা তৈরির গবেষণা সম্পর্কে বিদেশী গুপ্তচর সংস্থাগুলো নিয়মিত খোঁজখবর রাখছে এবং আমরা তা জানতে পেরেছি।

গত মার্চেই কানাডার সেন্টার ফর সাইবার সিকিউরিটি সতর্কতা জারি করে জানিয়েছিল, আধুনিক প্রতিপক্ষ কভিড-১৯ মহামারী নিয়ে গবেষণার সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে মেধাসম্পদ চুরির চেষ্টা করতে পারে।

তবে মার্কিন ও পশ্চিমা বিশ্বের গুপ্তচর সংস্থাগুলোও জানতে চাইবে চীনের ভেতরে কী ঘটছে। সেখানে মৃত্যুর হার নিয়ে কোনো মনগড়া তথ্য দেয়া হয়েছে কিনা কিংবা নভেল করোনাভাইরাসের টিকা তৈরির গবেষণায় কোনো অগ্রগতি হয়েছে কিনা।

বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন হাসপাতালে সাইবার হামলা নিয়ে এখন উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। এসব হামলার ফলে মহামারী ঠেকানোর প্রচেষ্টা ব্যাহত হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। গত এপ্রিলে চেক প্রজাতন্ত্রের দুটি হাসপাতালে সাইবার হামলার ঘটনা ঘটেছে।

Exit mobile version