ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, ডাকঘরকে প্রচলিত পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে আসতেই হবে। ডিজিটাল যুগের অপার সম্ভাবনার সুযোগ কাজে লাগিয়ে ডাকঘরকে ডিজিটাল যুগের উপযোগী প্রযুক্তি প্রয়োগের বিকল্প নেই। দেশের একটি শ্রেষ্ঠ সেবা প্রতিষ্ঠান হিসেবে ডাকঘরকে গড়ে তুলতে হবে। এজন্য সরকার সকল সহায়তা করতে প্রস্তুত। ডাকঘরকে ডিজিটাইজেশনে সম্প্রতি প্রণীত ‘ডিজিটাল সার্ভিস ডিজাইন ল্যাব এর পরামর্শগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে ডাকসেবার আমুল পরিবর্তনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে বলে মন্ত্রী উল্লেখ করেন।
মন্ত্রী ঢাকায় ডাকভবন মিলনায়তনে ডিজিটাল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস নগদ বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মো: খলিলুর রহমান অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন। ডাক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো: সিরাজ উদ্দিন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। নগদ-এর নির্বাহী পরিচালক মো. সাফায়েত আলম কর্মশালায় নগদ সম্পর্কিত উপস্থাপনা পেশ করেন।
টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেন, দেশব্যাপি ডাক বিভাগের বিস্তীর্ণ অবকাঠামো ও নেটওয়ার্ক দেশের বড় সম্পদ। এগুলো কাজে লাগাতে না পারলে আমরা কেউই দায় এড়াতে পারবো না।মানি অর্ডারের জায়গায় নগদ যেমন কাজ করছে তেমনি ডাকঘরকে ডিজিটাল যুগের উপযোগী করতে কোন কোন জায়গায় কি কি কাজ করতে হবে তা নির্ধারিত হয়েছে। ডাকঘরের বিদ্যমান জনবলের সবাই ডিজিটাল দক্ষ নয়। ডিজিটাল ডাকঘরের জন্য তাদেরকে ন্যুনতম ডিজিটাল দক্ষতা অর্জন করতে হবে।ডিজিটাল দক্ষতা না থাকলে সামনের দিনে সবাইকে অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়তে হবে বলে উল্লেখ করেন ডিজিটাল প্রযুক্তি বিকাশের এই অগ্রনায়ক। কুরিয়ার সার্ভিসের সাথে ডাকঘরের তুলনামূলক পার্থক্য তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, কুরিয়ার সার্ভিসের পণ্য পরিবহনের সক্ষমতা আছে কিন্তু সারা দেশে ঘরে ঘরে পণ্য পৌঁছে দেওয়ার সক্ষমতা আছে কেবলমাত্র ডাকঘরের। নগদের প্রযুক্তিগত দক্ষতা বিশেষ করে কেওয়াইসি পদ্ধতি ডিজিটাল ফিনান্সিয়াল সার্ভিসের ক্ষেত্রে দেশের প্রথম এবং সফল একটি পদ্ধতি বলে মন্ত্রী উল্লেখ করেন।তিনি দেশের প্রতিটি ডিজাটাল ডাকঘরের উদ্যোক্তাদের নগদের সাথে সম্পৃক্ত করতে পারলে নগদের প্রবৃদ্ধি আরও বৃদ্ধি পাবে বলে উল্লেখ করেন। নতুন প্রযুক্তি পৃথিবী পাল্টে দিয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ভয়েস কলের যুগ শেষ হয়ে আসছে সামনের দিনে পৃথিবী পুরোপুরি ডাটা কলের যুগে প্রবেশ করবে। ডাকঘর একটি প্রাচীণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে অস্তিত্বের সংগ্রামে টিকে থাকার জন্য প্রযুক্তিকে গ্রহণ করা ছাড়া কোন পথ নেই উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন সময়ের সাথে খাপ খাইয়ে চলতে না পারার জন্য ডাইনোসর বিলুপ্ত হয়েছে। কাজেই ডাইনোসোরের ইতিহাস হওয়া কাম্য হতে পারে না উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, প্রযুক্তি গ্রহণ না করলে সভ্যতার জন্য অপ্রয়োজনীয় হয়ে পরতে হবে। সেটা হতে দেওয়া যায় না উল্লেখ করে মন্ত্রী ডিজিটাল ডাকঘর প্রতিষ্ঠায় গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচি তুলে ধরে বলেন, ডাকঘর আর জরাজীর্ণ ডাকঘর হিসেবে পরিচিত থাকবে না। ডাকঘর হবে ডিজিটাল। সেই লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে ডাকঘরকে ডিজিটাল ডাকঘরে রূপান্তরের কাজ আমরা শুরু করেছি। তিনি বলেন, সামনের দিনে শোরুম ভিত্তিক বাণিজ্য বলে কিছু থাকবে না। ডিজিটাল বাণিজ্যই হবে মূল বাণিজ্য। ডিজিটাল কমার্সের জন্য পণ্য পরিবহন ও বিতরণে ডাকঘরই হচ্ছে জনগণের সবচেয়ে বড় আস্থার জায়গা।ডাকঘরকে সেভাবেই ঘরে তোলা হবে বলে মন্ত্রী দৃঢ় অঙ্গিকার ব্যক্ত করেন।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস নগদ প্রান্তিক পর্যায়ে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে আরো জোরালো ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন । তিনি বলেন ডাক অধিদপ্তরের কর্মকর্তাগণ কর্মশালার মাধ্যমে নগদ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পেলেন ।
ডাক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জানান এমএফএস সার্ভিস চার্জ যৌক্তিক মাত্রায় নির্ধারণের লক্ষ্যে সরকারের একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি কাজ করছে।