ক্যারিয়ার

দক্ষিণ কোরিয়ায় পড়তে যেতে চাইলে যা যা করবেন

By Baadshah

September 09, 2018

শিক্ষার মানের দিক থেকে দক্ষিণ কোরয়িা অনেক খানি এগিয়ে। সেখানে পড়া ও চাকরির জন্য যেতে চান অনেকেই। কিন্তু কিভাবে যাবেন তা বুঝতে পারেন না। এ বিষয়ে কিছু তথ্য ও গাইড লাইন তুলে ধরা হল:

আগে দক্ষিণ কোরিয়া সম্পর্কে জানুন, এর ভাষা রপ্ত করুন। সাবলীলভাবে যদি দক্ষিণ কোরিয়ার ভাষা আর ইংরেজি রপ্ত করতে পারেন তবে আপনার কাজ অর্ধেক হয়ে যাবে।

উইকিপিডিয়া বলছে, দক্ষিণ কোরিয়া উত্তর-পূর্ব এশিয়ার একটি দেশ যা কোরীয় উপদ্বীপের দক্ষিণ অংশটি নিয়ে গঠিত। এর সরকারি নাম কোরীয় প্রজাতন্ত্র (কোরীয়: 대한민국 দাএ-হান্-মিন্-‌গুক্‌)। দক্ষিণ কোরিয়ার উত্তরে উত্তর কোরিয়া, পূর্বে জাপান সাগর, দক্ষিণে ও দক্ষিণ-পূর্বে কোরিয়া প্রণালী, যা জাপান থেকে দেশটিকে পৃথক করেছে, এবং পশ্চিমে পীত সাগর। সিউল হচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়ার বৃহত্তম শহর ও রাজধানী।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে কোরীয় উপদ্বীপের উত্তর অংশটি সোভিয়েত ইউনিয়নের সেনারা এবং দক্ষিণ অংশটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেনারা দখলে রেখেছিল। ১৯৪৮ সালে এ থেকে উত্তর কোরিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়া রাষ্ট্রদ্বয়ের আবির্ভাব হয়। ১৯৫০-১৯৫৩ সালে কোরীয় যুদ্ধের পরে ধ্বংসপ্রায় দক্ষিণ কোরিয়া ১৯৯০ সালে এসে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতিগুলির একটিতে পরিণত হয় এবং সেই সঙ্গে এশিয়ান চার ড্রাগনে পরিণত হয়।

প্রায় ৯৯ হাজার বর্গ কিমি এর সাউথ কোরিয়ার ৯টি প্রভিন্স-নর্থ ছুংছন, সাউথ ছুংছন, খাংউওন, খিয়ংগিদো, নর্থ খিয়ংসাং, সাউথ খিয়ংসাং, নর্থ জল্লা, সাউথ জল্লা এবং জেজু স্পেশাল এ বিভক্ত। সাউথ কোরিয়ার রাজধানী এবং পৃথিবীর অন্যতম বিখ্যাত নগরী সিউলকে বলা হয় স্পেশাল সিটি। সিউল ছাড়া মেট্রোপলিটন সিটি রয়েছে ৬টি । সেগুলো হলো- ইনছন, বুসান, দেগু, দেজন, খোয়াংজু, উলসান।

এখানকার শিক্ষার মান অন্যান্য অনেক দেশের চেয়ে উন্নত। সেরা শিক্ষাব্যবস্থার র‌্যাংকিংয়ে সেরা পাঁচে দক্ষিণ কোরিয়ার অবস্থান রয়েছে। এখানকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গবেষণাতে জোর দেয় বেশি। সিউল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, কাইস্ট, কোরিয়া ইউনিভার্সিটি, ইয়নসে ইউনিভার্সিটি, খিয়ংহি ইউনিভার্সিটি, ইনহা ইউনিভার্সিটি এর মতো বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নামকরা। এর মধ্যে সিউল ন্যাশনাল ইউনির্সিটি বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে ৩০ এর ভেতর। এটি কোরিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয় এবং এশিয়ার চতুর্থ সেরা বিশ্ববিদ্যালয়। প্রায় ৩০ হাজার ছাত্রছাত্রীর এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি শিক্ষার্থীই আছে প্রায় ১০ হাজারের মতো। এর বিপরীতে শিক্ষকের সংখ্যা ২৬, ৬২০ জন।

দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশি অনেকেই লেখাপড়া ও কাজের জন্য আসেন। স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি করার জন্য বাংলাদেশিরা কোরিয়ায় যেতে পারেন। কোরিয়ান স্কুলগুলোতে ফল ও স্প্রিং এই দুই সেমিস্টারে বিদেশি শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারেন।

এখানে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রাম’ বা স্নাতকে ভর্তি বেশ প্রতিযোগিতামূলক। এসএসসি, এইচএসসি অথবা ও-লেভেল, এ-লেভেলে খুব ভালো রেজাল্টের পাশাপাশি ‘সহশিক্ষামূলক’ কাজের যুক্ত থাকলে সুবিধা পাওয়া যায়। ভালো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির জন্য এসবের বিকল্প নেই। তাই এসএসসি থেকেই সহশিক্ষামূলক কাজ সেটা হতে পারে, বিতর্ক, খেলাধুলা, ছোটখাটো উদ্ভাবনী কর্ম, টুকটাক গবেষণা, মিউজিক, নৃত্য বা অন্য যে কোনো কিছু বিষয়ে অভিজ্ঞতা থাকা সহায়ক। স্নাতকোত্তর এবং পিএইচডি করা যায় দু’ভাবে- কোরিয়ার কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকের গবেষণা সহকারী হিসেবে এবং কোরিয়ান সরকারের বৃত্তি (স্কলারশিপ) প্রোগ্রাম বা গ্লোবাল আইটি কোরিয়ান গভর্নমেন্ট স্কলারশিপের আওতায়। প্রথম ক্ষেত্রে পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন করে নিজের গবেষণার আগ্রহ অনুযায়ী সরাসরি কোনো অধ্যাপকের সঙ্গে ই-মেইলে যোগাযোগ করা যায়। ই-মেইলে থাকতে পারে স্নাতকের সিজিপিএ, আইএলটিএস, টোফেল বা জিআইর স্কোর, পাবলিকেশন যদি থাকে, নির্দিষ্ট বিষয়ে গবেষণায় আগ্রহের কারণ এবং এই ক্ষেত্রে পূর্ব অভিজ্ঞতার বিবরণ লিখে দিতে হবে। অধ্যাপক নির্বাচনের আগে সঠিক বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন করতে হবে। কোরিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তির শর্ত ভিন্ন ভিন্ন। সাধারণত কোরিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সর্বনিম্ন সিজিপিএ ৩.০০ এবং আইএলটিএস স্কোর ৬.০০-কে নূন্যতম যোগ্যতা হিসেবে ধরা হয়। ভালো র‌্যাংকিংয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভালো সিজিপিএ এবং আইএলটিএস স্কোর চায়। সে কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট থেকে পূর্বশর্তগুলো দেখে এবং নিজের অবস্থান যাচাই করে অধ্যাপককে ই-মেইল করা উত্তম। অধ্যাপকের সম্মতি ছাড়া কোরিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা কম। বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয়েরই নিজস্ব কিছু বৃত্তির ব্যবস্থা আছে। তবে বৃত্তির সংখ্যা সীমিত। যেসব ছাত্রছাত্রী অগ্রাধিকার পান তাদেরকে গবেষণার সহকারী হিসেবে নিতে চান অধ্যাপকরা। গবেষণা সহকারী হিসেবে কাজ করার জন্য যে মাসিক বৃত্তি দেওয়া হয়, তা দিয়ে এখানকার অন্যান্য খরচ চলে যায়।

আবেদন প্রক্রিয়া সাউথ কোরিয়ান সরকারের স্কলারশিপ প্রোগ্রামে (কেজিএসপি) ‘গ্র্যাজুয়েট’ এবং আন্ডারগ্র্যাজুয়েট’ উভয়ের জন্যই প্রযোজ্য। নিজ দেশের কোরিয়ান দূতাবাস থেকে অথবা কোরিয়ায় এই প্রোগ্রামের জন্য মনোনীত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মাধ্যমে নির্বাচিত শিক্ষার্থী হিসেবে সরাসরি আবেদন করা যায়।

গ্লোবাল আইটি কোরিয়ার গভর্নমেন্ট স্কলারশিপ প্রোগ্রাম (জিআইকেজিএসপি) সাধারণত স্নাতকোত্তর লেভেলে বৃত্তি দিয়ে থাকে। এটিও কোরিয়ান সরকারের বৃত্তি। তবে সে জন্য অধ্যাপকের সুপারিশ থাকলে সুযোগ পাওয়া সহজ হয়ে যায়।

কেজিএসপি প্রোগ্রামে অধ্যয়ন করতে প্রথম একবছর কোরিয়ান ভাষা শেখা বাধ্যতামূলক। বাংলাদেশি ছাত্রছাত্রীদের কেউ কোরিয়ায় অধ্যয়ন করতে চাইলে সেখানকার অধ্যয়নরত ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে তথ্য নিতে পারেন।

কোরিয়ান গভর্নমেন্ট স্কলারশিপ (কেজিএসপি)

প্রতি বছর আন্ডারগ্র্যাজুয়েট কোর্সের জন্য বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীদের স্কলারশিপ দিচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়া সরকার। প্রতিবছর এই স্কলারশীপের আওতায় বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আবেদন চাওয়া হয়ে থাকে। কিন্তু এই স্কলারশীপের জন্য বাংলাদেশের কোটা থাকে ২ থেকে ৩ জন। স্কলারশিপ পেতে হলে নিজেকে সবার থেকে আলাদাভাবে উপস্থাপন করতে হয়। যেমন একাডেমিক রেজাল্ট, আইইএলটিএস, কোরিয়ান ল্যাংগুয়েজ সার্টিফিকেট (যদি থাকে), এক্সট্রা কারিকুলাম সার্টিফিকেট ইত্যাদি। যদিও উল্লেখিত সার্টিফিকেটের কথা উল্লেখ থাকে না কিন্তু সবার চেয়ে নিজেকে যোগ্য হিসেবে উপস্থাপন করতে হলে এই ধরণের সার্টিফিকেটগুলো কাজে দিবে। সেজন্য উচ্চমাধ্যমিকে থাকা অবস্থায় প্রিপারেশন নেওয়া উচিৎ বলে মনে করি। যদিও একই যোগ্যতা থাকা স্বত্বেও ভাগ্যের কারণে অনেকেই এই স্কলারশীপ থেকে বঞ্চিত হন।

এই স্কলারশিপে নির্বাচিত শিক্ষার্থীরা বিমান ভাড়াসহ যাবতীয় খরচ পাবেন কোরিয়া সরকারের পক্ষ থেকে। শিক্ষার্থী নিজ যোগ্যতা অনুযায়ী যে কোন বিষয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় পছন্দ করতে পারবেন। প্রথম ১ বছর কোরিয়ান ভাষায় পড়ে লেভেল ৩ পাশ করে তারপর অনার্সের মূল কোর্সের পড়াশোনা শুরু হয়ে থাকে। যদি আপনার পছন্দ করা সাবজেক্টে ইংরেজি লেকচার হয় সেক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা ইংরেজিতে পড়তে পারবেন। কিন্তু বেশিরভাগ ইউনিভার্সিটিতে আন্ডারগ্র্যাজুয়েটে কোরিয়ান ভাষায় লেকচার হয়।

কেজিএসপি স্কলারশীপের আওতায় যা যা পাওয়া যাবে তার একটু সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিই। আসা যাওয়ার বিমানের টিকেট, সেটেলমেন্ট এলাউন্স ২ লাখ উওন, লিভিং এলাউন্স ৮ লাখ উওন, মেডিকেল ইন্স্যুরেন্স মাসিক ২০ হাজার উওন, ল্যাংগুয়েজ কোর্স ফি ৮ লাখ উওন, টিউশন ফি, এক্সিলেন্ট ল্যাংগুয়েজ প্রফিসিয়েন্সি অ্যাওয়ার্ড বাবদ মাসিক অতিরিক্ত ১ লাখ উওন, রিসার্চ সাপোর্ট প্রতি সেমিস্টারে ২ লাখ দশ হাজার উওন। এছাড়া অন্যান্য প্রয়োজনীয় সকল খরচ কর্তৃপক্ষ বহন করবে। আগ্রহী শিক্ষার্থীকে বাংলাদেশে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত ফর্মে আবেদন করতে হবে। প্রতি বছর সেপ্টেম্বরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে চোখ রাখতে হবে। তবে আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আগেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে। সেক্ষেত্রে আগের বছরের আবেদন ফর্মের সাথে যুক্ত ‘প্রয়োজনীয় কাগজপত্র’ অংশ দেখে নিতে পারেন।

স্কলারশিপ কিভাবে পাবেন?

কোরিয়াতে দুই সেমিস্টারে শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হয়। সরকারী স্কলারশীপের জন্য বছরে একবার আবেদন করার সুযোগ থাকলেও অন্যান্য অনেক স্কলারশীপের জন্য দুইবার আবেদন করা যায়। আগেই বলেছি আন্ডারগ্র্যাজুয়েট স্কলারশিপ কম পাওয়া যায়। তবে কোথায় কোন ইউনিভার্সিটিতে কোন স্কলারশিপ পাওয়া যাবে সেটা আপনাকেই খুঁজে বের করতে হবে।

কিভাবে খুঁজে পাবেন?

শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত গুগল আপনাকে সহযোগিতা করবে। গুগল থেকে ইউনিভার্সিটি খুঁজে বের করে সেই ইউনিভার্সিটির ওয়েবসাইটে গেলে সব তথ্য পাওয়া যাবে। ওয়েবসাইটে কোরিয়ান ভাষা দেখে ঘাবড়ানোর কিছু নাই, ওয়েবসাইটের ডানপাশের কোনায় ইংরেজির একটা অপশন থাকে সেখানে ক্লিক করলেই ইংরেজি ওয়েবসাইট ওপেন হবে। ইউনিভার্সিটিগুলোর ওয়েবসাইট দেখে আপনাকে স্কলারশিপের লিস্ট করতে হবে এবং কোন ইউনিভার্সিটি কি সুবিধা দিচ্ছে সব দেখে এবার এপ্লাই করা শুরু করে দেন বিভিন্ন ইউনিভার্সিটিতে। অনলাইন/ অফলাইন দুইভাবেই আপনি এপ্লাই করতে পারবেন।

তথ্যসূত্র: প্রথম আলো, চ্যানেল আই, বাংলা টেলিগ্রাফ, উইকিপিডিয়া