TechJano

দক্ষ জনশক্তির দেশ হিসেবে বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিং করতে চাই

অর্থায়ন, স্থান-সংকুলান, জনশক্তির উন্নয়ন, কোম্পানি ব্যবস্থপনার উন্নয়ন, ব্র্যান্ডিং ও বিপনন, আইনী সহায়তা, ইত্যাদি বিষয়কে সামনে রেখেই এবারের বেসিস নির্বাচনে টিম হরাইজন প্যানেল নিয়ে লড়োছেন আয়াল কর্পঃ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বেসিসের বর্তমান সভাপতি ​​। একান্ত আলাপে তিনি জানিয়েছেন, পরিচালক ও সভাপতির দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত কি কি কাজ করেছেন এবং আরো কি কি করতে চান।

***সফটওয়্যার খাত থেকে রপ্তানি আয় বাড়াতে বেসিসের বর্তমান পদক্ষেপগুলো কী?

আলমাস কবীর: সফটওয়্যার খাত থেকে রপ্তানি আয় বাড়াতে ইতোমধ্যেই আমরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করেছি। সেখানে আমরা কয়েকটা দেশকে নির্ধারিত করেছি। ইউরোপের দুইটা দেশ, আফ্রিকা, জাপান এই দেশগুলোতে যেই বাংলাদেশি অ্যাম্বাসি আছে সেখানে একটি করে এইটি ডেস্ক বসানোর প্রস্তাব করেছি। এই আইটি ডেস্কে একজন করে প্রতিনিধি থাকবে। যারা আমাদের দেশের বিভিন্ন কোম্পানী ও তাদের কার্যক্রমগুলোকে সেইসব দেশে প্রমোট করবে।

এছাড়াও খুব সম্প্রতি আমি একটা বিষয়ে কথা বলা শুরু করেছি। আমরা সকলেই জানি উন্নত বিশ্বে আমাদের দেশে কম খরচে অনেক ভালো কাজ করিয়ে নেওয়া যায় এমন একটা পরিচিতি হয়ে গেছে। তাই এখন থেকে দেশের বাইরে বাংলাদেশকে সস্তা কামলার দেশ না বানিয়ে দক্ষ জনশক্তির দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে যেমন, গ্রাফিক্স, গেম ডেভেলপমেন্ট ইত্যাদি বিষয়ে যেন অন্যারাও আমাদের দেশের কথা ভাবে। সেভাবেই ব্র্যান্ডিং করতে চাচ্ছি।

***দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে নিজেকে কতটুকু সফল মনে করেন!

সফল কতটুকু হয়েছি সেটা আসলে সদস্যরাই বলতে পারবে। তবে আমি কাজ করার চেষ্টা করেছি। কারণ, আমি এর আগেও বেসিস পরিচালনা পর্ষদে ট্রেজারার, ভাইস প্রেসিডেন্ট পদেও দায়িত্ব পালন করেছি। সেই ধারাবিহকতা বজায় রেখে এই টার্মে যখন পরিচালক ছিলাম তখন আমি মার্কেট রিসার্চ স্ট্যান্ডিং কমিটি এবং সিকিউরিটি বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির কাজগুলো করেছি। এছাড়াও আমাকে বোর্ড থেকে আরো দুটি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিলো। যার মধ্যে একটি হচ্ছে সফট এক্সপো ২০১৭ এবং আরেকটি হচ্ছে ইন্টারনেট উইক। যেহেতু আগের নির্বাচনে আমার এজেন্ডায় সফট এক্সপো ছিলো। তাই আমার আগ্রহের যায়গাতেই আমাকে কাজ করতে দেওয়া হয়েছে। ৫ বছর বছর বন্ধ থাকার পর আমি চেষ্টা করেছি সফল একটি সফটক্সপো সবাইকে উপহার দেয়ার। আর এই এক্সপো সফল হওয়ার পরপরই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এটাকে আবারো নিয়মিত করার।

আরেকটা হচ্ছে ইন্টারনেট উইক। প্রথম ইন্টারনেট ঢাকা সহ কয়েকটি বিভাগীয় শহরে বড় আয়োজনের মাধ্যমে করা হলেও এবার তা সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী সারাদেশ কেন্দ্রীক করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা পর্যায়ে ছোট ছোট আয়োজন করা হয়। এই ইন্টারনেট উইক পালনের দায়িত্বও আমাকেই দেওয়া হয়েছিলো এবং আশা করি আমি তা ভালোভাবেই পালন করতে পেরেছি।

***সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে কি কি করেছেন?

চলতি বছরে ১১ জানুয়ারী আমি বেসিস সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম যেই কাজটি করি তা হচ্ছে স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠক নিয়মিতকরণ। মাত্র ২০ দিনের মধ্যে ২৪ টা স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠক করিয়ে সেখান থেকে সিদ্ধান্ত, পরামর্শ, মতামত বের করেছি। তাদের সুপারিশগুলি নিয়ে ৫ ফেব্রুয়ারীতে অনুষ্ঠিত বোর্ড সভায় আলোচনা করা হয়েছে ও বেশীরভাগই গৃহীত হয়েছে।

একইসাথে আমরা নিজেদের সদস্য কোম্পানীগুলোর উন্নয়নের জন্য কিছু কাজ করেছি। যারমধ্যে সরকারী কাজে যেন বেসিস সদস্যরা প্রাধান্য পায় সেজন্য ‘বেসিস ই-গভ সেল’ তৈরী করা হয়েছে। যেখানে গত আড়াই মাসে এটুআইয়ের সাথে অনেকগুলো বৈঠক করে নতুন দরপত্রের জন্য আরএফপি তৈরি এবং বাজেট তৈরির সময় বেসিস প্রতিনিধি রাখার অনুরোধ করেছি।

একইসাথে আমরা বৃঙ্গিং বেসিস টু মেম্বার্স শীর্ষক এলাকাভিত্তিক সদস্য-সভা করেছি। তাদের মতামত, অভিযোগ এবং পরামর্শ নিয়ে আমরা পরবর্তী কার্যক্রমগুলো পরিচালনা করেছি। এসময় সদস্যদের কাছ থেকে ওয়েবসাইটের একটা বিষয় উঠে আসে। পরবর্তীতে আমরা বেসিস ওয়েবসাইটটিকে আবারো নতুন করে নির্মাণ করেছি। এটাকে একটা বিটুবি ম্যাচ-মেকিং সাইটে পরিণত করার চেষ্টা করছি। আমরা ওয়েবসাইটে পেমেন্ট গেটওয়ে সংযুক্ত করেছি। যেখানে আমাদের সদস্যরা নিজেদের বাৎসরিক সদস্য ফি এখন অনলাইনেই দিতে পারবে।

পাশাপাশি সদয় কোম্পানীগুলোর জন্য আইনি সহায়তা বা আইনি পরামর্শ দিতে আমরা একটি এইন বিষয়ক প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি করেছি। কারণ, একটি আইটি কোম্পানীর অনৈতিক কর্মচারী অভিবাসনের ক্ষেত্রে, সোর্স কোডের চুরি, ক্লায়েন্টদের হাইজ্যাকিং ইত্যাদির জন্য প্রায়ই আইনী মতামত এবং পরামর্শ প্রয়োজন হয়। এখান থেকে বেসিস সদস্যরা একটি হটলাইন নাম্বারের মাধ্যমে বিনামূল্যে প্রাথমিক আইনি পরামর্শ পাবে।

এছাড়াও আইটি কোম্পানী তার কপিরাইট, ট্রেডমার্ক বা পেটেন্ট রেজিস্ট্রেশন ব্যতীত সম্পদগুলির সুরক্ষা, সফ্টওয়্যারের বুদ্ধিবৃত্তিক মালিকানা (আইপি) রক্ষা করতে সদস্য কোম্পনীগুলো যাতে বাংলাদেশ আইপি ফোরামের সহায়তা নিতে পারে, সেই লক্ষ্যে বাংলাদেশ আইপি ফোরামের সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছি।

আরেকটি উল্লেখযোগ্য কাজ করেছি যা না বললেই নয়, সেটা হচ্ছে পূর্বাচলে বেসিসের নিজস্ব ভবনের জন্য যায়গা বরাদ্দ নিয়ে। যদিও এটা আগেই শুরু হয়েছিলো, কিন্তু মাঝে রাজউক এই জায্যগা বরাদ্দ দিতে নাকচ করে। তবে সম্প্রতি আমরা আবার চেষ্টা করেছি এই বরাদ্দ ফিরিয়ে আনতে।

Exit mobile version