দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগের প্রস্তাবনা দিল বেসিস। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) ‘তথ্যপ্রযুক্তি দক্ষতা উন্নয়ন: চ্যালেঞ্জ ও সমাধান’ শীর্ষক একটি গোলটেবিল বৈঠক আয়োজন করে।
০৩ ডিসেম্বর, ২০২২ শনিবার বেসিস অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত গোলটেবিল বৈঠকের সভাপতিত্ব করেন বেসিস সভাপতি রাসেল টি আহমেদ।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বেসিসের সহ-সভাপতি ফাহিম আহমেদ (অর্থ) এবং এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন বেসিসের সাবেক সভাপতি জনাব একেএম ফাহিম মাসরুর।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক ড. সাজ্জাদ হোসেন, আইসিটি বিভাগের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মোঃ মোস্তফা কামাল, জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-এর যুগ্ম সচিব, সদস্য (সমন্বয় ও অ্যাসেসমেন্ট), ড. মোঃ জিয়াউদ্দীন, বেসিস ডাইরেক্টর জনাব এ কে এম আহমেদুল ইসলাম বাবু, বেসিস অ্যাডভাইজরি স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি এম রাশিদুল হাসান, বেসিস অ্যাডভাইজরি স্ট্যান্ডিং কমিটির সহ-সভাপতি শাহ্ ইমরাউল কায়ীশ গ্রাফিকপিপলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব ইমতিয়াজ ইলাহী, ব্রেইন স্টেশন ২৩-এর চিফ টেকনোলজি অফিসার জনাব রাইসুল কাবির, সিকিউর লিংক সার্ভিসেস বাংলাদেশ লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব জুলিয়ান অ্যান্ড্রিন ওয়েবার, ডিভাইন আইটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব ইকবাল আহমেদ ফখরুল হাসানসহ আরো অনেকে।
বেসিসের সাবেক সভাপতি জনাব এ কে এম ফাহিম মাসরুর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনায় চ্যালেঞ্জ হিসেবে বলেন বেশিরভাগ কোম্পানিই সহজে নিয়োগযোগ্য ‘অভিজ্ঞ’ মানবসম্পদ খোঁজে। যেহেতু কোম্পানিগুলির গড় আকার ছোট, তারা নতুন স্নাতকদের প্রশিক্ষণ দিতে এবং তাদের নিয়োগযোগ্য করে তুলতে প্রস্তুত নয়।
সেক্ষেত্রে তিনি বেশ কয়েকটি সমাধানের কথা উল্লেখ করেন, যেমন নতুন স্নাতক নিয়োগের জন্য এসএমই আইটি কোম্পানিগুলিকে সহায়তা করার জন্য একটি বিশেষ তহবিল (সরকার এবং উন্নয়ন সংস্থা দ্বারা সমর্থিত) তৈরি করা যেতে পারে। নতুন স্নাতকদের নিয়োগের জন্য বড় আইটি কোম্পানিগুলির জন্য ট্যাক্স এবং অন্যান্য প্রণোদনা প্রদান করা যেতে পারে। সকল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাণিজ্যিক গবেষণা ও উন্নয়ন ল্যাব স্থাপন করা যেতে পারে।
বেসরকারি সংস্থাগুলি তাদের কাজগুলিকে তাদের সাথে সহযোগিতা করবে। জুনিয়র স্তরের কর্মচারী এবং নতুন স্নাতকদের জন্য শিল্পকেন্দ্রিক স্বল্পমেয়াদী (১-৩ মাস) প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম (তাদের সদস্য কোম্পানিগুলির সাথে অংশীদারিত্বে) ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক ড. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, “আমাদের দেশে শিক্ষার্থীরা যথেষ্ট মেধাবী, এখানে শুধু মাত্র দরকার সমন্বয়ের। ইউনিভার্সিটি, প্রশিক্ষণ বিশেষজ্ঞ এবং সরকার প্রত্যেকে প্রত্যেকের জায়গা থেকে শুধু নিজ নিজ কাজ সকলের সাথে সমন্বয় করে করতে হবে। তাহলেই আমরা আমাদের কাঙ্ক্ষিত ফল তথা দক্ষ মানবসম্পদ পেতে পারি।
এই ক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। আমাদের মেধাবী যুবসমাজকে সুযোগ করে দিতে হবে। তারা সবাই কাজ করতে চায় কিন্তু কোথাও গ্যাপ থেকে যাচ্ছে, এই গ্যাপ খুঁজে বের করে তার সমাধান করতে পারলেই আমরা কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবো বলে আশা করি।”
আইসিটি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মোঃ মোস্তফা কামাল, বলেন, “আমরা শুধুমাত্র প্লাটফর্ম তৈরি করছি। সেই প্লাটফর্মে কাজ করতে হবে সবাইকে। যে যায় অবস্থান থেকে প্রচুর পরিমাণে কাজ করছে। এই কাজ গুলোকে এক লাইনে এনে একত্রে করতে হবে।
দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করার ক্ষেত্রে আমাদের পক্ষ থেকে সবসময় সকল ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিটা খুবই যৌক্তিক এবং আমরা এই ব্যাপারে খুবই ইতিবাচক। বিশ্ববিদ্যালয়কে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে যেন শিক্ষার্থীদের ভিত্তি মজবুত হয়।”
জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-এর যুগ্ম সচিব, সদস্য (সমন্বয় ও অ্যাসেসমেন্ট), ড. মোঃ জিয়াউদ্দীন, বলেন, “জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা একটি গাইডলাইন তৈরি করেছি যেখানে শিল্প প্রতিষ্ঠান গুলোকে প্রস্তাব করা হয়েছে যেন ইন্টার্নশীপ করার সাথে সাথে প্রশিক্ষণরত শিক্ষার্থীদের প্রণোদনা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-এর মাধ্যমে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ব্রান্ডিং হচ্ছে। দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আমাদের কার্যক্রম সবসময় অব্যাহত থাকবে।”
বেসিস সভাপতি রাসেল টি আহমেদ বলেন, “১২ বছরের অভিজ্ঞতা আছে বেসিস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট (বিআইটিএম)-এর। যার মাধ্যমে ৯৫% থেকে ৯৯% প্রশিক্ষণ প্রাপ্তরা বিভিন্ন জায়গায় কাজ করছে। বিআইটিএমকে ইউজিসি দক্ষ মানবসম্পদ গড়ার ক্ষেত্রে অন্যতম ভালো প্রতিষ্ঠান হিবেসে গণ্য করতে পারে এবং বিআইটিএমকে ইউনিভার্সিটির সংযোগ করতে পারে যেন বিআইটিএম এবং বেসিস শিল্প প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয় করতে পারে।
এর মাধ্যমে ইউজিসি দক্ষ মানবসম্পদ গড়ার ক্ষেত্রে সুযোগ তৈরি করে দিতে পারে। মার্কেটের চাহিদা অনুযায়ী এখান থেকে দক্ষ মানবসম্পদ পাওয়া যাবে। স্থানীয় ও বৈদেশিক বাজারের ক্রমবর্ধমানশীল তথ্যপ্রযুক্তি খাতের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষ মানবসম্পদ গড়তে না পারলে ডিজিটালাইশন ও অটোমেশন যেমন বাধাগ্রস্থ হবে তেমনি আন্তর্জাতিক বাজারেও বাংলাদেশের টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের কাঙ্ক্ষিত রপ্তানি লক্ষমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে না।”
তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নের ক্ষেত্রে অনুপস্থিত যোগসূত্র খুঁজতে আয়োজিত এই গোলটেবিল আলোচনায় শিক্ষাবিদরা বলেন, তারা তাদের শিক্ষার্থীদেরকে তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষতা বিকাশের ক্ষেত্রে সঠিক পদ্ধতিতে শিক্ষা প্রদান করছেন।
একইভাবে, বিভিন্ন তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ বিশেষজ্ঞরা বলেন যে, তারা তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে সব ধরনের প্রশিক্ষণ প্রদান করেন এবং সরকারের পক্ষ থেকে, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, সামগ্রিকভাবে তারা এই সমস্ত ব্যাপারগুলি নিয়ে কাজ করছেন। এক্ষেত্রে উপযুক্ত দক্ষ মানব সম্পদ পেতে কোন যোগসূত্রটি অনুপস্থিত সেটি অনুসন্ধান করতেই এই গোলটেবিল আলোচনার অবতারণা।