প্রযুক্তি খবর

দুই বাংলাদেশিসহ ১৬ তরুণের নাম ঘোষণা করল টেলিনর গ্রুপ ও নোবেল পিস সেন্টার

By Baadshah

October 09, 2018

নোবেল পিস সেন্টারের সহযোগিতায় টেলিনর ইয়ুথ ফোরাম ২০১৮-২০১৯- এর জন্য নির্বাচিত ১৬ জন প্রতিনিধির নাম ঘোষণা করেছে টেলিনর গ্রুপ। প্রতিনিধিদলে রয়েছেন দুই বাংলাদেশি তরুণ। টেলিনর ইয়ুথ ফোরামের এ বছরের প্রতিনিধিরা ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে স্বাস্থ্যখাতে বৈষম্য চিহ্নিতকরণ ও এর সমাধানে কাজ করবে।

মানবস্বাস্থ্য ও সংশ্লিষ্ট বিষয় যেমন স্বাস্থ্যসেবা ও এ বিষয়ে তথ্য লাভের সুযোগ এবং ক্ষুধা ও তৃষ্ণা মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের মতো বিষয়গুলো ধারাবাহিকভাবেই জাতীয় ও আঞ্চলিক উন্নয়ন এজেন্ডা ও সংলাপের ক্ষেত্রে তালিকার শীর্ষে ছিলো। অতিসম্প্রতি অনুষ্ঠিত, ২০১৮ সালের জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের আলোচ্যবিষয়গুলোর মধ্যেও অসংক্রামক রোগ এবং সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা অন্যতম প্রধান আলোচ্য বিষয় ছিলো। উন্নয়ন, সামাজিক ক্ষমতায়ন ও মানুষের সমতার ক্ষেত্রে বিষয় হিসেবে স্বাস্থ্যের সদা উপস্থিতি এবং এর সাথে মানবস্বাস্থ্যের প্রত্যক্ষ সম্পর্কের কারণে স্বাস্থ্য বিষয়টিকে এ বছর টেলিনর ইয়ুথ ফোরামের প্রতিপাদ্য হিসেবে নির্ধারণ করা হয়।

টেলিনর ইয়ুথ ফোরাম ২০১৮-২০১৯ – এ নির্বাচিত হওয়ার মাধ্যমে যেসব দেশে টেলিনরের কার্যক্রম রয়েছে সেখানে এ ১৬ প্রতিনিধিকে তরুণ নেতৃত্ব হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ, ডেনমার্ক, মালয়েশিয়া, নরওয়ে, পাকিস্তান, সুইডেন ও থাইল্যান্ডের ৫ হাজারের বেশি তরুণ মেধাবীদের মধ্য থেকে এ ১৬ জন নির্বাচিত হয়। নির্বাচিত প্রতিনিধিরা এ বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের মে মাস পর্যন্ত সকল দিক থেকে স্বাস্থ্যখাতের বৈষম্য দূরীকরণের সমাধান উন্নয়নে কাজ করবে।

এ নিয়ে টেলিনর গ্রুপের প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী সিগভে ব্রেক্কে বলেন, ‘বয়োজ্যেষ্ঠদের যতেœর ক্ষেত্রেই হোক কিংবা প্রান্তিক ও নিম্ন-উপার্জনকারী জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের সুযোগ নিশ্চিত করতেই হোক; স্বাস্থ্য ও প্রযুক্তির মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনে আমরা অনেককিছু অর্জন করতে পারি। আর এক্ষেত্রে, এ বছর টেলিনর ইয়ুথ ফোরামে নির্বাচিত ১৬ তরুণ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ অবদান আর কারা রাখতে পারবে?’ তিনি আরও বলেন, ‘সম্ভাবনাময় ও শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যতের জন্য স্বাস্থ্যখাতে বৈষম্য দূরীকরণ এবং স্বাস্থ্যসেবায় সবার সুযোগ নিশ্চিত করা অবিচ্ছেদ্য অংশ। মোবাইল নেটওয়ার্ক ও প্রযুক্তি এ বিষয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।’

যেসব উদ্যমী তরুণ পৃথিবীতে পরিবর্তন আনতে চায় তাদের জন্য বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্ম টেলিনর ইয়ুথ ফোরাম। এর পাশাপাশি প্ল্যাটফর্মটি, গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক প্রতিকূলতায় টেকসই ডিজিটাল সমাধানের উন্নয়নে বিভিন্ন রিসোর্স ও দক্ষতার সাথে এ তরুণদের যুক্ত করবে।

এ বছরের কর্মসূচিতে প্রতিনিধিদের চারটি দলে ভাগ করা হবে। প্রতিটি দলকেই আগামী ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য টেলিনর ইয়ুথ ফোরামের শুরুতে আলাদা আলাদা স্বাস্থ্যবিষয়ক চ্যালেঞ্জ দেয়া হবে। দলগুলোকে চ্যালঞ্জ অ্যাসাইনমেন্ট ও সল্যুশন প্রোপোজালে সহায়তা ও নির্দেশনা দিতে টেলিনর গ্রুপের নিম্নবর্ণিত বিশেষজ্ঞরা প্রত্যেক দলকে ছয় মাসের বিস্তৃত কর্মসূচিতে প্রশিক্ষণ দিবেন:

– ইয়োভা মার্টিনকেনাইট, ভিপি, টেলিনর রিসার্চ; সদস্য, এআই হাই লেভেল এক্সপার্ট গ্রুপ অব ইওরোপিয়ান ইউনিয়ন

– অ্যালানা সোলবার্গ, হেড অব মার্কেটিং ফর ই-হেলথ, টেলিনর নরওয়ে

– অস্টিন মেনইয়াস, ডিরেক্টর অব পাবলিক অ্যান্ড রেগুলেরটরি অ্যাফেয়ার্স, টেলিনর গ্রুপ, রিজিয়ন এশিয়া

– বিয়র্ন টালে স্যান্ডবার্গ, এসভিপি অ্যান্ড হেড অব টেলিনর রিসার্চ

এ কর্মসূচি জুড়ে অর্থাৎ ডিসেম্বরে অসলোতে, অসলো পর্ব ও ২০১৯ সালে মে মাসে অনুষ্ঠিতব্য ব্যাংককে ফোরাম ফিনালের মধ্যবর্তী সময়ে উন্নতির ভিত্তিতে পাশাপাশি ফোরাম ফিনালে দলগুলোর চূড়ান্ত ধারণা উপস্থাপন পর্বের ভিত্তিতে তাদের ‘কনসেপ্ট প্রোপোজাল’ অনুযায়ী চারটি দলকেই স্কোরিং করা হবে। বিজয়ী দলকে পরবর্তীতে তাদের ধারণার বাস্তবায়নের জন্য ১ লাখ নরওয়েজিয়ান মুদ্রায় (ক্রোন) পুরস্কৃত করা হবে। টেলিনর ইয়ুথ ফোরাম ও এ কর্মসূচির অংশীদারদের স্পন্সরে নোবেল পিস সেন্টারে এ চারটি দলের চ্যালেঞ্জ, তাদের যাত্রা এবং তাদের চূড়ান্ত ধারণার ডিজিটাল প্রদর্শনী হবে।

এ নিয়ে নোবেল পিস সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক লিভ তোরেস বলেন, ‘প্রতিবছর টেলিনরের সাথে এ উদ্যোগে সহযোগী হতে পেরে নোবেল পিস সেন্টার আনন্দিত। কেননা, আমাদের উভয়েরই লক্ষ্য শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যৎ। আমরা বিশ্বাস করি, তরুণ প্রাণকে আন্দোলিত করার মাধ্যমেই আমাদের সে ভবিষ্যতের পথ তৈরি হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে বিশ্বে প্রযুক্তি ও কানেক্টিভিটির সহজলভ্যতা এক্ষেত্রে সবাইকে অবদান রাখার সুযোগ করে দিয়েছে। আর আমরা মনে করি, এ পরিবর্তনের সূচনায় তরুণদেরই সবচেয়ে বেশি স্বার্থ রয়েছে।’

গত বছরের বিজয়ী দল এজিএনসিওয়াই সচেতনতা সৃষ্টিকারী প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে যার মাধ্যমে শ্রমিকরা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক শ্রমসংস্থায় অভিযোগ করতে পারে। এক্ষেত্রে, তাদের চ্যালেঞ্জ ছিলো কাজের অবস্থার ক্ষেত্রে বৈষম্য দূরীকরণে ডিজিটাল সমাধান বের করা। তাদের চিন্তা ছিলো শ্রমিকদের স্মার্টফোনের মাধ্যমে তাদের কাজের অধিকার ও নিরাপত্তা লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে অভিযোগগুলো বেনামে ও যাচাইযোগ্যভাবে সুরক্ষিত করা। এ দলটি এখন তাদের প্ল্যাটফর্মের প্রোটোটাইপ তৈরিতে কাজ করছে। এজিএনসিওয়াই’র ধারণার মাল্টিমিডিয়া বিষয়ক তথ্য পাওয়া যাবে www.tzfexhibition.com – এ ওয়েবসাইটে। তাদের চিন্তা ও কাজের ডিজিটাল এ প্রদর্শনী অসলোতে নোবেল পিস সেন্টারেও প্রদর্শিত হয়েছে।

বৈষম্য দূরীকরণে সম্ভাবনাময় তরুণদের সম্পৃক্ত করার ধারণার ওপরে তৈরি টেলিনর ইয়ুথ ফোরাম একটি বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্ম। স্ক্যান্ডিনেভিয়া ও এশিয়ার আটটি দেশে টেলিনর গ্রুপের সম্ভাবনাময় তরুণ নেতৃত্বদের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার সাথে সম্পৃক্ত বৈশ্বিক ও সামাজিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় যুক্ত করা হয় । অসলো ও ব্যাংককে এদের একত্রিত করা এবং ‘উই স্টার্ট চেঞ্জ’, – এর মতো বিষয় নিয়ে কাজ করা টেলিনর ইয়ুথ ফোরাম একটি ছয় মাসব্যাপী কর্মসূচি। ‘উই স্টার্ট চেঞ্জ’ এক্সিবিশন এমন একটি প্ল্যাটফর্ম যা সবাইকে এক্ষেত্রে ইতিবাচক অবদান রাখতে উৎসাহী করে তুলতে এবং পরিবর্তনের সূচনায় সহায়তা করে। নোবেল পিস সেন্টারের (এনপিসি) সহযোগিতায় এ ফোরাম চালিত হয়।

টেলিনর ইয়ুথ ফোরামের ২০১৮-২০১৯ সালের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা হলেন: [বাম থেকে ডানে]

– ক্রিস্টিনা শি নর্ডভল্ড, ২২, নরওয়ে

– র‌্যাচেল লোহ, ২১, মালয়েশিয়া

– লুকাস ম্যাকন্যাব, ২৫, সুইডেন

– ন্যাং ইন ইন উইন নিউই, ২৫, মিয়ানমার

– ইনগ্রিদ হগ রাসমুসেন, ২৪, ডেনমার্ক

– মাইয়েদা জানজুয়া, ২২, পাকিস্তান

– ডায়াকো খাবাত আহমাদ, ২৪, ডেনমার্ক

– থিহা ঝ, ২৬, মিয়ানমার

– থানাপা উকারানুন, ২৭, থাইল্যান্ড

– চের্নচে তাচো, ২২, থাইল্যান্ড

– সায়মা মেহেদী খান, ২১, বাংলাদেশ

– আসমা লাডাক, ২০, পাকিস্তান

– গ্যাব্রিয়েল স্টুপ, ২৬, সুইডেন

– সামীন আলম, ২২, বাংলাদেশ

– ফেলিসিয়া ইয়ুন, ২৮, মালয়েশিয়া

– এমিলিয়া উদেস, ২৩, নরওয়ে

বিস্তারিত জানতে: http://www.telenor.com/youthforum