এক্সনহোস্ট দেশেরে সেরা হোস্টিং কোম্পানি এ কথা বলাই যায়। কিন্তু এত বড় একটি কোম্পানির যাত্রা শুরু হল কিভাবে? ডোমেইন হোস্টিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান এক্সনহোস্ট’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সালেহ আহমেদ সম্প্রতি এক অনলাইনকে এ গল্প জানান। সালেহ আহমেদের তথ্য অনুযায়ী, তাঁর ইচ্ছা ছিল কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংপড়বেন , কিন্তু সুযোগ না পেয়ে পড়েন সমাজবিজ্ঞানে। তবে হাল ছাড়েননি তিনি। বিভিন্ন ওয়েবসাইট ঘেঁটে ওয়েবসাইট তৈরির বিভিন্ন কলাকৌশল রপ্ত করতে শুরু করেন। এক সময় নিজের চেষ্টায় দাঁড় করালেন একটা ওয়েবসাইট। সেই যে পথ চলা শুরু, তিনি এখন একটা প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। ২০০৯ সালের শেষের দিকে দেশের বাইরে থেকে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করে দেয়ার কাজ পান সালেহ। সৌদি আরব থেকে এক ব্যক্তি তাদের থ্রি স্টার হোটেলের জন্য ওয়েবসাইট তৈরি করতে তাঁর সাথে যোগাযোগ করেন। কোনো আগপিছ না ভেবে কাজটি করতে রাজি হয়ে যান সালেহ। প্রথমে বিদেশের আত্মীয়ের কাছ থেকে ডলার ধার নিয়ে ডোমেইন রিসেলার অ্যাকাউন্টে ফান্ড আপলোড করেন এবং সেই সাথে একটা রিসেলার হোস্টিং কেনেন। চালু করেন নিজের ডোমেইন হোস্টিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ‘অবসর ডটকম’ (obosor.com)। এভাবেই শুরু তাঁর। এ বিষয়ে খুব বেশি ধারণা না থাকায় প্রথম দিকে তাঁকে নানান ধরনের প্রতিবন্ধকতার শিকার হতে হয়েছে। এ বিষয়ে সালেহ বলেন, প্রথমেই আমি যে সমস্যার মুখোমুখি হয়েছি তা হচ্ছে- পেমেন্ট দেয়া ও নেয়া। শুরুতে ডোমেইন ও হোস্টিংয়ের বিল দেয়ার জন্য কোনো একজন ফ্রিল্যান্সারের সাহায্য নিতে হতো। সঠিক কম্পানি চিনতে না পারায় প্রথম মাসেই ওয়েবসাইটের ডাটাসহ ৩ হাজার টাকা লোকসানে পড়ি। কারণ যে কম্পানি থেকে সার্ভিস নেয়া শুরু করেছিলাম, কোনো ঘোষণা ছাড়াই এক মাস পর ওই কম্পানি বন্ধ হয়ে যায়। হোস্টিং কেনার ক্ষেত্রে প্রথমেই কম দামকে প্রাধান্য দেয়াটা ছিল আমার আরেকটা ভুল। শুধু তাই নয়, শুরুতে বাস্তবতা চিন্তা না করে শুধু লাভের কথাই চিন্তা করেছিলাম। ব্যবসায়িক জ্ঞান তো একেবারেই কম ছিল। কীভাবে মার্কেটিং করবো, কাস্টমারের কাছে পৌঁছাবো – এসব বিষয়ে তেমন কোনো ধারণাই ছিল না। অনলাইনে পরিচয়ের সুবাদে পরিচয় হয় মাছুমুল হক নামের এক তরুণের সাথে। তিনিও ‘স্কাইহোস্ট বিডি’ নামের ডোমেইন-হোস্টিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী কর্মকর্তা ছিলেন। এক পর্যায়ে তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। তখন তারা চিন্তা করলেন আলাদা আলাদা ব্যবসা করার চেয়ে দুজন যদি একসাথে কাজ করেন তাহলে তাঁদের স্বপ্ন আরও এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে। এমন ভাবনা থেকেই ২০১২ সালে দুই প্রতিষ্ঠানকে একীভূত করে তারা চালু করেন ‘হোস্ট পেয়ার’। ২০১৭ সালের শুরুর দিকে ট্রেডমার্ক জটিলতার কারণে হোস্টপেয়ারের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘এক্সনহোস্ট’ (www.exonhost.com)। বর্তমানে এ নামেই সেবা দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। গ্রাহকবান্ধব সেবা দেয়ার মাধ্যমে অল্প সময়ের মধ্যে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বাইরেও এক্সনহোস্ট বেশ পরিচিত হয়ে ওঠে। বর্তমানে ক্লাউড লিনাক্স, সিপ্যানেল, লাইটস্পিড, ক্লাউডফ্লেয়ার, সফটাকিউলাসসহ বিশ্বের নামকরা বিভিন্ন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের সাথে পার্টনারশীপ রয়েছে এক্সনহোস্টের। বিশ্বের প্রায় ৭০ দেশে ডোমেইন হোস্টিং সেবা দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। দেশে-বিদেশে মিলিয়ে ৫ হাজারের বেশি কাস্টমার রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট থেকে শুরু করে কর্পোরেট ওয়েবসাইটের জন্য ডোমেইন, ওয়েব হোস্টিং, ভার্চুয়াল সার্ভার, ডেডিকেটেড সার্ভার ও ক্লাস্টার সার্ভার সলিউশন দিচ্ছে এক্সনহোস্ট। দেশি-বিদেশি কর্মীদের মাধ্যমে ২৪ ঘণ্টা কাস্টমার সাপোর্ট নিশ্চিত করার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি এগিয়ে যাচ্ছে প্রতিদিন। মানসম্মত গ্রাহকসেবার কারণে এরই মধ্যে দেশের প্রযুক্তি খাতে একটা আলাদা জায়গা করে নিয়েছে এক্সনহোস্ট। এরই স্বীকৃতি মিলেছে গত ২০১৬ সালে। দেশের উদ্যোক্তাদের প্লাটফর্ম ‘চাকরি খুঁজব না চাকরি দেব’ গ্রুপ ও ওপেন সোর্স নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে এক্সনহোস্টকে বিশেষ সম্মাননায় ভূষিত করা হয়। তথ্যসূত্র: বিবার্তা ডটকম।