শিক্ষার্থীদের উদ্ভাবনী উদ্যোগ নিয়ে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ আয়োজন “স্টুডেন্ট টু স্টার্টআপ” প্রতিযোগিতার দ্বিতীয় অধ্যায়ের “জাতীয় স্টার্টআপ ক্যাম্প” এর যাত্রা শুরু হল। সাভারের শেখ হাসিনা জাতীয় যুব উন্নয়ন ইনস্টিটিউটে সকাল থেকে শুরু হয় এই তিনদিনব্যাপী “জাতীয় স্টার্টআপ ক্যাম্প”। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের আওতায় বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল এর অধীনে “উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন একাডেমী প্রতিষ্ঠাকরণ প্রকল্প” (আইডিয়া) দ্বিতীয় বারের মত আয়োজন করছে প্রতিযোগিতাটি।
স্টুডেন্ট টু স্টার্টআপ: চ্যাপ্টার টু এর জাতীয় স্টার্টআপ ক্যাম্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব জনাব এন এম জিয়াউল আলম। তিনি বলেন, “ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণে আমরা অনেকদূর এগিয়েছি। এখন একটি ‘কোয়ালিটিফুল ডিজিটাল বাংলাদেশ’ নির্মাণের পথে হাঁটছি আমরা। আর সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নে চারটি স্তম্ভ নিয়ে কাজ করছে সরকার। তার মধ্যে একটি হচ্ছে সক্ষমতা বৃদ্ধি। “উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন একাডেমী প্রতিষ্ঠাকরণ প্রকল্প” (আইডিয়া) প্রকল্প সৃষ্টি মূল লক্ষ্য এই সক্ষমতা বৃদ্ধি। আপনাদের মত তরুণদের স্টার্টআপের উপর ভর করেই আগামী দিনের বাংলাদেশ গড়ে উঠবে। আমরা সকলের কাছে ডিজিটাল বাংলাদেশের সেবা পৌঁছে দিতে চাই।”
অনুষ্ঠানের সভাপতি ছিলেন “উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন একাডেমী প্রতিষ্ঠাকরণ প্রকল্প” (আইডিয়া) এর পরিচালক (যুগ্ম-সচিব) জনাব সৈয়দ মজিবুল হক। তিনি বলেন, “বাংলাদেশে একটি স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম তৈরিতে কাজ করে যাচ্ছে আইডিয়া। আমাদের মূল লক্ষ্য আগামীর প্রজন্মকে প্রস্তুত করা। আর সে কারণেই সামনে আমরা স্কুল পর্যায়ে এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করব। আমাদের প্রকল্পের মাধ্যমে আসা অধিকাংশ স্টার্টআপগুলো ভালো করছে। এখন পর্যন্ত আমাদের মাধ্যমে আসা স্টার্টআপগুলোর টিকে থাকার হার প্রায় ৯০ ভাগ। যা বিশ্বের অন্য যে কোন দেশের তুলনায় বেশি। এবার যে ৭৫ দল জাতীয় ক্যাম্পে অংশ নিয়েছে তাদের অধিকাংশদের প্রোডাক্ট বা প্রোটোটাইপ প্রস্তুত আছে। এবার অংশ নেয়া মোট দলের ৬০ ভাগ প্রোডাক্ট বেইসড এবং ৪০ ভাগ সার্ভিস বেইসড বলে আমরা জেনেছি। আশা করছি এখানে সার্বিক বাছাই শেষে দুর্দান্ত কিছু স্টার্টআপ খুঁজে পাব আমরা।”
“উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন একাডেমী প্রতিষ্ঠাকরণ প্রকল্প” (আইডিয়া) এর উপ-প্রকল্প
উদ্বোধন অধিবেশন শেষে অংশগ্রহণকারীদের জন্য সেশন পরিচালনা করেন স্টুডেন্ট টু স্টার্টআপ এর কো-অর্ডিনেটর জনাব আশিকুর রহমান রূপক।
শিক্ষার্থীদের নিয়ে উদ্ভাবনী ভাবনা ও উদ্যোক্তা খোঁজার এই আয়োজনটি গত ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ আইসিটি টাওয়ারে এক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী জনাব জুনাইদ আহ্মেদ পলক এমপি দেশের সকল শিক্ষার্থীদের এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে আহ্বান জানান। এরই আলোকে, দেশের ১০০টির বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বুথের মাধ্যমেও প্রচারণা চালানো হয় এবং শিক্ষার্থীরা অনলাইনে নিবন্ধনের মাধ্যমে প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় । প্রায় ২৫০০ স্টার্টআপ তাদের উদ্ভাবনী আইডিয়া নিয়ে এই প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহণ করে। এদের মধ্য থেকে প্রাথমিকভাবে ৮ টি বিভাগ এর ২৪ টি ভেন্যু থেকে ৭৫ টি স্টার্টআপ বাছাই করা হয়। পরবর্তীতে নির্বাচিত স্টার্টআপদের “জাতীয় স্টার্টআপ ক্যাম্প”- এ আমন্ত্রণ জানান হয়।
এবারের ক্যাম্পে, ৭৫ টি স্টার্টআপ থেকে প্রায় দুইশতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করছে। অংশগ্রহণকারীগন ৯ অক্টোবর ২০১৯ সন্ধ্যার মধ্যেই ক্যাম্পে অবস্থান করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ক্যাম্পের প্রথমদিন ১০ অক্টোবর ২০১৯ সকাল থেকেই স্টার্টআপদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় কর্মশালা। অংশগ্রহণ করা দলগুলোকে উক্ত কর্মশালার মাধ্যমে তাদের উদ্যোগসমূহের পিচিং বিষয়সহ নানা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। ক্যাম্পের ২য় দিন শুরু হবে পিচিং রাউন্ড এবং সবশেষে বিচারকগণ বাছাই করবেন প্রতিযোগিতার শীর্ষ ৩০ স্টার্টআপ। সবশেষে ‘আইডিয়া’ প্রকল্পের বাছাই কমিটি এবং অভিজ্ঞ বিচারকগণের মাধ্যমে নির্বাচন করা হবে জাতীয় পর্যায়ে সেরা ১০ উদ্ভাবনী ভাবনা বা স্টার্টআপ। বিজয়ী ১০ স্টার্টআপের প্রতিটিকে ১০ লক্ষ টাকা করে ‘বঙ্গবন্ধু ইনোভেশন গ্র্যান্ট’ হিসেবে সর্বমোট ১ কোটি টাকা অনুদান দেয়া হবে। সেই সঙ্গে শীর্ষ ৩০-এ থাকা অপর ২০ স্টার্টআপ রানারআপ হিসেবে আইডিয়া প্রকল্প থেকে গ্রুমিং ও বিশেষ প্রশিক্ষণ নেয়ার সুযোগ পাবে। প্রশিক্ষণ শেষে স্টার্টআপগুলো প্রস্তুত হলে তাদের জন্যও অনুদান প্রদান করবে আইডিয়া প্রকল্প। প্রকল্প সংক্রান্ত বিস্তারিত স্টার্টআপ বাংলাদেশ এর ওয়েবসাইট www.startupbangladesh.gov.bd পাওয়া যাবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ ও এর আওতাধীন বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তাগন এর পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অংশগ্রহণ করেন ‘ইয়াং বাংলা’-র ক্যাম্পাস অ্যাম্বাসেডরগণ। উদ্ভাবনী ভাবনা ও উদ্যোক্তা খোঁজার এই আয়োজনের সহোযোগিতায় আছে সেন্টার ফর রিসার্চ এন্ড ইনফরমেশন (সিআরআই) এর ‘ইয়াং বাংলা’ প্ল্যাটফর্ম।