TechJano

নজরদারি ও আড়িপাতা প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি নাগরিকদের

ভিন্নমত দমন ও নাগরিক অধিকার দমনের জন্য দেশে গত কয়েক বছর কি কি ধরনের সফ্টওয়্যার ও প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে সেটির শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি করা হয়েছে নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে।

২৪ আগস্ট, শনিবার রাজধানীর বেসিস সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত একটি নাগরিক সংলাপ অনুষ্ঠানে এই দাবি জানানো হয়।

বাংলাদেশ ২.০ সিভিল রিফর্ম গ্রূপের আয়োজনে এই সংলাপ আয়োজিত হয়I অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন গত ১০ বছরে কয়েক হাজার কোটি টাকার অত্যাধুনিক সফটওয়্যার ও প্রযুক্তি আড়িপাতার জন্য কেনা হয়েছে ইসরাইল ও অন্যান্য দেশ থেকে। করদাতাদের অর্থে কেনা এই সফটওয়্যার কোন বিবেচনায় ক্রয় করা হলো, কোন পদ্ধতিতে হলো এবং এগুলো কি কাজে ব্যবহার করা হয়েছে সেই ব্যাপারে নাগরিকের জানার অধিকার আছে।

বক্তারা বলেন কে জাতীয় নিরাপত্তার কথা বলে এসকল দামি সফটওয়্যার কেনা হলেও তা মূলত ব্যবহার হয়েছে রাজনৈতিক কারণে ও ভিন্নমত দমানোর জন্য।

বেসিসের প্রাক্তন সভাপতি ফাহিম মাশরুরের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত “আড়িপাতা, গোপনীয়তার অধিকার ও বাক স্বাধীনতা” শীর্ষক এই নাগরিক সংলাপে উপস্থিত ছিলেন রাজনীতিবিদ, আইনজীবী, মানবাধিকার কর্মী, সাংবাদিক ও তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা। আলোচকরা বলেন যে দেশের সংবিধানে ৪৩ ধারায় প্রতিটি নাগরিকের গোপনীয়তার অধিকার সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা আছে।  কিন্তু তা সত্বেও সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক টেলিযোগাযোগ আইনের কিছু ধারা ব্যবহার করে গত বেশ কয়েক বছর টেলিকম নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে নিয়মিতভাবে সাধারণ নাগরিকদের ফোন ট্যাপ করা হচ্ছে।

এটি করা হচ্ছে কোনো ধরনের বিধি না মেনেই কিছ ব্যক্তি বিশেষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী। সবচেয়ে আশঙ্কার ব্যাপার হচ্ছে সরকার সাম্প্রতিক সময়ে এমন প্রযুক্তি ক্রয় করেছে যা টেলিফোন নেটওয়ার্ক এক্সেস ছাড়াই স্মার্ট ফোন ডিভাইসে আড়িপাতা যায় এবং ব্যক্তিগত কল, মেসেজ, ছবি, ভিডিও সব রেকর্ড করা যায়। বক্তারা বলেন এটি একেবারেই বেআইনি ও ভয়ানক মানবাধিকার লঙ্ঘন।

আলোচনার ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন যে এনটিএমসি ও ডিওটি-র মতো সরকারি যেসকল অঙ্গ প্রতিষ্ঠান গত কয়েক বছর এই আড়িপাতার সাথে জড়িত ছিল তাদের সংস্কার করা বা নতুন লোক বসিয়ে কোনো সমাধান হবে না। এই দুই প্রতিষ্ঠানকে বিলুপ্ত করতে হবে এখনই। জাতীয় নিরাপত্তার জন্য আড়িপাতার প্রয়োজনীতা থাকলে সেটির জন্য আলাদা কমিশন করে নতুন বিধিবিধান তৈরী করতে হবে।

মানবাধিকার কর্মী ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন যে আদালতের ঘাঁড়ে বন্ধুক ব্যবহার করে গত কয়েক বছর অনেক মানবাধিকার হরণের ঘটনা ঘটেছে।  অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ও আগের মতো অপ্রাসঙ্গিক ও দুর্বল মামলা এবং রিমান্ডে বিভিন্ন আসামির বক্তব্য মিডিয়ায় প্রকাশের প্রতিবাদ জানান। তিনি গত কয়েক বছর মিডিয়াতে বিভিন্ন ব্যক্তির কল রেকর্ড ফাঁসের ঘটনায় মিডিয়ার নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন।  ঢাকা বিশবিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি অধ্যাপক মইনুল হোসেন বলেন কে দেশের কোনো আইন যদি আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড বা মানের সাথে না হয়, তাহলে তার পরিবর্তন করতে হবে।

আলোচনায় অংশ নিয়ে আল জাজিরা খ্যাত অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন সামি জানান যে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরে সরকারের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও কাছের মানুষের ব্যক্তিগত ও সংবেদনশীল তথ্য, কল রেকর্ডের সন্ধান পাওয়া গেছে যা এনটিএমসি ও অন্যান্য এজেন্সির মাধ্যমে জোগাড় ও সংরক্ষণ করা হয়েছে।  ধারণা করা হয় যে এগুলো দিয়ে তাদেরকে নিয়মিত ভাবে ব্ল্যাকমেইল করা হতো বিশেষ প্রয়োজনে।

তিনি বলেন যে গোপনীয়তা ভঙ্গকারী রাষ্ট্রের এই এজেন্সিগুলো শুধুমাত্র সাধারণ নাগরিক ও ভিন্নমতাবলম্বীদের নজরদারি করতেই ব্যবহার হতো না, নিজেদের লোকজনের কার্যক্রমও মনিটর করতে ব্যবহার হতো। অবিলম্বে সকল ব্যক্তিগত ও গোপনীয় রেকর্ড ধ্বংস করার দাবি জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. জাহেদ উর রহমান , সাংবাদিক গোলাম মুর্তজা, সাংবাদিক আশরাফ কায়সার, রাজনীতিবিদ জুনায়েদ সাকি, এবি পার্টির সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার ফুয়াদ, সাইবার বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাবির, মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ, প্রাইভেসি বিশেষজ্ঞ সাবহানাজ রশিদ দিয়া, আইনজীবী ব্যারিস্টার মিতি সানজানা, তথ্যপ্রযুক্তি সাংবাদিক ও উদ্যোক্তা জাকারিয়া স্বপন, রাষ্ট্র চিন্তার দিদার ভূইয়াঁ, উন্নয়ন গবেষক আহমেদ ওমর তৈয়ব সহ ত্রিশের বেশি আলোচক।

Exit mobile version