পাঠাও নিয়ে দুর্দান্ত এক অভিজ্ঞতপাঠাও চালক আর তার জীবনের দুর্দান্ত এক গল্প শোনাবো…রহস্যময় এক লেখা।
গন্তব্য গুলশান ২। ফোর পয়েন্ট হোটেল। নতুন চালু হওয়া হোটেলটি চেনা নেই। ওয়েস্টিনের কাছাকাছি ফুটপাতে এক পা ঠেকিয়ে বাইকে বসেই গুগল ম্যাপে ফোর পয়েন্ট খোঁজ করছি। অনতিদূরে ভদ্রলোকটি দাঁড়িয়ে মোবাইল স্ক্রিনে কী যেন করছিলেন! হুট করে আমার বাইকের পেছনে বসেই বললেন, আমি তো তোমাকে ফোন দিতে যাচ্ছিলাম। তুমি যে একেবারে আমার সামনে এসে দাঁড়িয়েছো বুঝতে পারিনি। ‘পাঠাও’ সার্ভিস অনেক স্মার্ট হয়ে গেছে দেখছি। দ্যাটস গুড 🙂 ওকে এখন চলো!
আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না ঘটনা কী। তবে অকস্মাৎ জট খুলে গেল। ঘটনা পানির মতো ক্লিয়ার। লোকটি কোথাও যাওয়ার জন্য পাঠাও সার্ভিসে নক করছিলেন। তার সামনে গুগল ম্যাপ ঘাটাঘাটি করতে দেখে আমাকেই পাঠাও’র ড্রাইভার ভেবে বসেছেন!!
মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি খেলে গেল। ফোর পয়েন্টে না গিয়ে একবার খ্যাপ মারলে মন্দ হয় না 🙂 পুরো দস্তুর পাঠাও ড্রাইভার বনে গেলাম। জিজ্ঞেস করলাম, স্যার কোথায় যাবেন? _ মহাখালি। -ওকে স্যার। বাইক স্টার্ট দিলাম। ভদ্রলোক জিজ্ঞেস করলেন, প্যাসেঞ্জারের হেলমেট কই? বললাম, আজকেই প্রথম দিন। ভুলে গেছি স্যার। _ এটাতো ঠিক না। আমি বললাম, জি স্যার। আর হবে না। বারবার স্যার বলতে ভাল লাগছে। সাংবাদিকতায় পেশায় এসে কাউকে স্যার বলতে পারি না। খালি ভাই-ব্রাদার। এমনও আছে ৬৫ বছরের মুরব্বি আামার ভাই। তার ছেলেও আমার ভাই 🙂 স্যার বলতে না পারার হাহাকার আমি সুদে-আসলে উসুলের চেষ্টা করছি।
প্যাসেঞ্জার ভদ্রলোক বললেন, আজ তোমাকে মাফ করে দিলাম। আমার খুব তাড়া ছিল। তুমি লেট কর নাই।দ্রুত আমাকে পিক করলে। অনেক ড্রাইভার আছে, তারা আশপাশে থাকলেও লেট করে আসে। মনে হয়, বিড়ি-সিগারেট খেয়ে আয়েশ করে তারপর পেসেঞ্জার পিক করে। _ স্যার, আমি কখনোই লেট করি না। এমনকি আমার প্রেমিকাও বলতে পারবে না আমি কোনো দিন লেট করেছি। আমি সবসময় কম করে আধঘণ্টা আগে পৌঁছে থাকি। _ বাহ, দারুন। প্রেম কর নাকি? আমি কোনো কথা বলি না। মিটমিট করে হাসি। পেছনে থাকায় সে হাসি প্যাসেঞ্জার দেখতে পায় না। আমি বলি, স্যার। ডেটিংয়ের খরচ জোগানোর জন্যই পাঠাও ড্রাইভিং সার্ভিস দিচ্ছি। _ তুমি তো খুব ইন্টারেস্টিং ক্যারেক্টার। _ জি স্যার, আপনিও ইন্টারেস্টিং! চাইলে স্যার, আপনিও এ সার্ভিসে আসতে পারেন। ইনকাম ভালো।তবে বিড়ি-সিগারেট খাওয়া লেট ড্রাইভারদের মতো হলে ইনকাম কম!
বোঝা যাচ্ছে ভদ্রলোকটি রেগে গেছেন। কোনো কথা নেই। চুপ করে আছেন। আকাশে কালোমেঘ জমলে যেমন গুমোট ভাব থাকে পরিবেশটা তেমন হয়ে গেছে। যে কোনো ভারি বর্ষণ শুরু হওয়ার পূর্বাভাষ পাচ্ছি। তবে বৃষ্টিটা ঠিক কীভাবে শুরু হবে বুঝতে পারছি না। গালাগালি শুরু করবেন কিনা কে জানে। _ এই বাইক থামাও। বেয়াদব। ভদ্রলোক রাগে গজগজ করছেন। বেশি রাগলে লোকটি বোধ হয় তোতলান। জিজ্ঞেস করা দরকার আসলেই তাই কিনা। তবে সাহস হচ্ছে না। তখনও মহাখালি আসিনি। বনানী ক্রস করেছি। ভদ্রলোকটি বাইক থেকে নেমে জিজ্ঞেস করলেন, ভাড়া কত হয়েছে? বললাম, জানি না স্যার। আমার ফোনে পাঠাও’র অ্যাপ নাই। আপনাকে রাগিয়ে দেওয়ার জন্য স্যরি। ভালো থাকবেন স্যার। আসি! _ আরে অ্যাপ নাই মানে কি? ফাইজলামি কর ।তুমি কি পাঠাও’র ড্রাইভার না?
আমি কোনো উত্তর না দিয়ে বাইক টান দেই। পেছন ফিরে ভদ্রলোকটির দিকে তাকিয়ে রহস্যময় হাসি দেই, যার অর্থ হতে পারে কিছু কিছু ঘটনা রহস্য হয়ে থাকা ভালো। উত্তর জানিয়ে খামোখা রহস্যের মজা নষ্ট করতে নাই 🙂 ফেসবুকে এ পোস্টটির লেখক: সমকালের তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের সাংবাদিক হাসান জাকির।