দেশের কারাবন্দীদের জন্য প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে মোবাইল সেবা চালু করেছে কারা কর্তৃপক্ষ। এখন বন্দীরা কারাগার থেকে তাদের স্বজনদের সঙ্গে ফোনে কথা বলতে পারবেন। ‘স্বজনের সাথে সংশোধনের পথে’ শ্লোগনকে সামনে নিয়ে টেলিফোনে কথা বলা এই কার্যক্রমের নামকরণ করা হয়েছে‘ স্বজন পরিবারের বন্ধন।’
এই সেবার আওতায় বন্দীরা সরকারি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তাদের বাড়িতে স্বজনদের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন। টাঙ্গাইল জেলা কারাগারের বন্দিরা স্বজনদের সঙ্গে ফোনে কথা বলার মধ্য দিয়েই এই কর্মসূচি শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব কারাগারে এই সেবা চালু করা হবে ।এই সুবিধা পাবেন শুধুমাত্র সাধারণ বন্দীরা।
টাঙ্গাইল কারাগারের ভেতর একটি কক্ষে চারটি ফোন বুথ তৈরি করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই ফোনে কথা বলার ও এর সফটওয়্যার কার্যক্ষম হয়েছে। কারাগারের যে সব কর্মী এই কার্যক্রমে যুক্ত থাকবেন। তাদের প্রত্যেককে পরিচালনার প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।
জেলা কারাগার সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) এর সার্ভিস ইনোভেশন ফান্ড ও বাংলাদেশ জেল এর সহায়তায় এ কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। এই কার্যক্রমের আওয়তায় বন্দিরা (হাজতি ও কয়েদি) কারাগারে আসার পর তাদের কাছ থেকে তাদের স্বজনদের দুটি মোবাইলফোন নম্বর রাখা হবে। সাধারণ বন্দী প্রতি ১৫ দিনে একবার ১০ মিনিট করে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন। অবশ্য পুরো কথোপকথন একটি বিশেষ সফটওয়্যারর মাধ্যমে হবে এবং রেকর্ড করা থাকবে।
বন্দীদের মধ্যে শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনের সদস্য এবং অপহরণ ও চাঁদাবাজির মামলায় অভিযুক্ত বন্দিরা ফোনে কথা বলার সুযোগ পাবেন না। নিরাপত্তার স্বার্থে বন্দিদের প্রতিটি কল রেকর্ড করা হবে। বুথে সার্বক্ষনিক কারারক্ষী নিয়োজিত থাকবে। এছাড়া বন্দিদের স্বজনরা কোনো এসএমএস পাঠালে তা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে প্রিন্ট করে তা বন্দিদের দেয়া হবে।
কোনো বন্দী সরাসরি বুথে গিয়ে কথা বলতে পারবেন না। নির্ধারিত সময়ে বন্দীরা বুথে ঢুকে এক বা দুই চাপলে সফটওয়্যার থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে অভিষ্ট নম্বরে সংযোগ পাওয়া যাবে। নির্ধারিত সময় ১০মিনিট পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে কল কেটে যাবে। সময় শেষ হওয়ার তিন মিনিট আগে সতর্কসূচক ‘বিপ’ শব্দ হবে।
নির্ধারিত সময়ের পূর্বে বা পরে কল ডায়াল হবে না। শুধুমাত্র নির্ধারিত সময়েই কল করতে হবে। বন্দীদের স্বজনরা নির্ধারিত সময়ে যাতে কথা বলার জন্য প্রস্তুত থাকতে পারেন, সেজন্য আগের দিন তাদের মোবাইলফোনে ক্ষুদেবার্তা পাঠিয়ে সময় জানিয়ে দেয়া হবে।
এই কার্যক্রমের ফলে বন্দীদের মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত হবে। পাশাপাশি আর্থিক অবস্থা ভালো না থাকার কারণে অনেকে হয়তো কারাগারে আসতে পারে না, নিয়মিত দেখা সাক্ষাৎ করতে পারে না। কিন্তু টেলিফোনে যদি পরিবার সম্পর্কে খোঁজখবর পায়, তার মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তথ্যসূত্র:যুগান্তর