ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে আর্থিক সেবা প্রদানে সরকার সব ধরনের সহায়তা করছে। দেশের প্রান্তিক পর্যায়ে সহজে দেশের মানুষের কাছে আর্থিক সেবা পৌঁছে দিতেও কৌশল প্রণয়ন ও নীতিগত সহায়তা দিচ্ছে। আগামীতে ডিজিটাল আর্থিক সেবা সহজীকরণে সব ধরনের সহায়তা দিতে প্রস্তুত সরকার।
মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘বাংলাদেশ ফাইন্যান্সসিয়াল ইনক্লুশন কনফারেন্স-২০১৮’ উদ্বোধনী পর্বে বক্তারা এসব কথা বলেন। ইউএন ক্যাপিটাল ডেভেলপমেন্ট ফান্ড (ইউএনসিডিএফ) দিনব্যাপী এ সম্মেলনের আয়োজন করে। সম্মেলনে ডিজিটাল ফাইন্যান্সসিয়াল ইনক্লশন বিষয়ে একাধিক সেশনে অনুষ্ঠিত হয়।
এই সম্মেলনে সরকারের নীতি নির্ধারক, নিয়ন্ত্রক, দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞরা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে শীর্ষ ব্যক্তিরা মতামত ব্যক্ত করেন। এছাড়াও ডিজিটাল ফাইন্যান্সসিয়াল সিস্টেমস (ডিএফএস) মেলায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠা নিজ নিজ পণ্য প্রদর্শন করছে। এই মেলায় ২৪টি প্রতিষ্ঠান নিজের পণ্য প্রদর্শনের পাশাপাশি বিস্তারিত তুলে ধরছে।
সম্মেলনের উদ্বোধনী সেশনের মডারেটর ব্র্যাকের অ্যাডভোকেসি ফর স্যোস্যাল চেঞ্জ-এর পরিচালক কেএএম মোরশেদের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ। আলোচনায় অংশ নেন সরকারের আইসিটি ডিভিশনের অতিরিক্ত সচিব রাশেদুল ইসলাম, অর্থমন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিবঅরিজিত চৌধুরী ও ইউএনসিডিএফ’র প্রোগাম ম্যানেজার রাজিব কুমার গুপ্ত।
আবুল কামাল আজাদ বলেন, দেশের তরুণ, বৃদ্ধ ও শিশু সবাই সামাজিক সুরক্ষা নেটের ফাইন্যান্সসিয়াল ইনক্লুশনের আওতায় রয়েছে। ১০ টাকা ব্যাংক একাউন্ট খোলার মাধ্যমে ফাইন্যান্সসিয়াল ইনক্লুশন সৃষ্টি হয়েছে। ডিজিটাল প্লাটফর্মের মাধ্যমে এখন জনগণকে সেবা দেয়া হচ্ছে। ২০২১ সালের মধ্যে সব আর্থিক প্রতিষ্ঠান আওতায় আসবে। আকষর্ণীয় পণ্য নিয়ে জনগণকে আকৃষ্ট করবে। এসময় তিনি এসডিজি ভিশন বিষয়েও আলোচনা করেন।
তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ ধারণা থেকে ডিজিটাল ফাইন্যান্সসিং ও জনগণকে আর্থিক সেবা দিতে অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। অবকাঠামো উন্নয়ন সম্পন্ন, এখন প্রযুক্তিসম্পন্ন মানবসম্পদ ও দক্ষ করে গড়ে তুলতে কাজ চলছে। আমরা খুব সতর্কতার সঙ্গে কাজ করছি; যেন ডিজিটাল মাধ্যম কোনোভাবে বাধাপ্রাপ্ত না হয় বা কেউ প্রভাবিত করতে না পারে।
আর্থিক খাতের ডিজিটালাইজেশনে সরকার সব ধরনের সহায়তা করছে উল্লেখ করে অরিজিত চৌধুরী বলেন, আর্থিক খাতের ডিজিটালাইজেশনে চলমান পরিস্থিতি ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্টদের নিয়ে আলোচনা করে নীতিমালা করেছি। বাংলাদেশ এখন পুরোপুরিই ডিজিটালইশেনে রূপান্ততি হচ্ছে। আর্থিক খাতের উন্নয়নেও সরকার কাজ করছে, এই খাতের উন্নয়নের সব ধরনের সহায়তাও করছে। অর্থ লেনদেনে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ডিজিটালেও জোর দেয়া হচ্ছে। সরকারের সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ও মন্ত্রণালয়গুলোও ইতিমধ্যে প্রযুক্তির ব্যবহার ও সেবা প্রদান করছে।
তিনি বলেন, ফাইন্যানসিয়াল ইনক্লুশন কৌশল নীতিমালায় ডিজিটালাইজেশনেক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এটাই আমাদের মূল বিষয়। এছাড়াও ডিজিটাল ইকো-সিস্টেমকেও গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। আর্থিক সেবা খাতে (ডিজিটাল ফাইনানসিয়াল সার্ভিসেস-ডিএফএস) অনেক সম্ভাবনার। আর সেটাকে কাজে লাগাতে সরকারের পক্ষ থেকেও সহায়তা দেয়া হচ্ছে।
রাশেদুল ইসলাম বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন আর স্বপ্ন নয়, বাস্তবতা। ডিজিটাল বাংলাদেশ দুই মিলিয়ন লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে, ৫ মিলিয়ন বৈদেশিক মুদ্রাও আয় হচ্ছে। ই-গভর্নেন্স, আইসিটি সম্পদের উন্নয়ন ও দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির ক্ষেত্রে কাজ করছে। ই-কমার্স পলিসিতে ফাইন্যান্সসিয়াল ইনক্লুশনকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে ডিজিটাল টেকনোলজি সহায়তা ও সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। এই খাততে এগিয়ে নিতে সরকারের বিশেষ নজর রয়েছে।
রাজিব কুমার গুপ্ত বলেন, যেকোনো ব্যবসাকে এগিয়ে নেয়া বা স্থায়ী করতে কাস্টমার সেন্ট্রিসিটি খুব গুরুত্বপুর্ণ, যা এই সম্মেলনে গরুত্বপূর্ণ বিষয়। আগামী ৫ বা ১০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের মানুষের কর্মসংস্থানের প্রয়োজন। কিন্তু প্রতি বছর ১ শতাংশ করে কৃষি জমি হ্রাস পাচ্ছে, সময়ও পরিবর্তন হচ্ছে। কিন্তু এখন আমাদের ভবিষ্য কী? আধা-শিক্ষিত, আধা-দক্ষ জনসংখ্যা আমাদের অর্থনীতিতে কতটা প্রভাব রাখতে পারবে সেটা ভেবেই পরিকল্পনা গ্রহণে জোর দেন তিনি।
সম্মেলনে দিনব্যাপী বিভিন্ন ধরনের সেশন পরিচালিত হয়। যার মধ্যে প্রযুক্তি নির্ভর কৃষিভিত্তিক ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা ও উন্নয়ন, ক্ষুদ্রঋণ ও এর প্রযুক্তির সঙ্গে সংযোগ সাধন, প্রযুক্তি ব্যবহারে নারী-পুরুষে বৈষম্য দুরীকরণে করণীয়, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ব্যবসা উন্নয়নে প্রযুক্তি নির্ভর সাপ্লাই চেইন বিষয়ক, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে রেমিটেন্সের প্রভাব নিয়ে আলোচনা ও প্রযুক্তিনির্ভর আর্থিক সেবা উদ্ভাবন ও প্রদর্শন করা হয়।