প্রযুক্তি বিশ্ব

প্রযুক্তি থেকে সন্তানদের দূরে রেখেছিলেন যে বিশ্ববিখ্যাত প্রযুক্তিবিদরা;জেনে নিন কেন?

By Baadshah

May 17, 2018

বর্তমানে কিশোর-তরুণদের মধ্যে সেলফোন বা স্মার্ট ফোন, ইন্টারনেট, ফেসবুক, টুইটার, হোয়াটস অ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম প্রভৃতিতে অধিক আসক্তি লক্ষণীয়। অথচ বিজ্ঞানীরা বলছেন, এসবে আসক্তি মস্তিষ্কের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। তাদের মতে, ইন্টারনেট বিশেষত ফেসবুকের অধিক ব্যবহার মানুষের মস্তিষ্কের গঠন বদলে দেয় এবং স্বল্পমেয়াদে ও দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিকর মানসিক প্রভাব ফেলে। যেসব কিশোর-কিশোরী দিনে তিন ঘণ্টার বেশি স্মার্টফোন ব্যবহার করে তাদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতাও বেশি থাকে। যুক্তরাষ্ট্রে আত্মহত্যার সংখ্যা দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর পেছনে কারণ হিসেবে দায়ী করা হচ্ছে স্মার্টফোনকে। পার্সোনাল ফোন, টেলিভিশন, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, নোটবুক, ট্যাব ইত্যাকার গতিশীল ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি শিশু-কিশোরদের জন্য যেমনি শিক্ষণীয় হতে পারে তেমনি তার ধ্বংসও ডেকে আনতে পারে। তাই এসব ক্ষেত্রে ভালো-মন্দ বোঝার মতো তার বয়স ও বুদ্ধির বিষয়টি অভিভাবকদের বিবেচনা করা বাঞ্ছনীয়।

প্রযুক্তি এবং প্রযুক্তি পণ্য মানুষের মাঝে জনপ্রিয় করার ক্ষেত্রে বিশ্বে কিংবদন্তী হয়ে আছেন মাইক্রোসফটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস এবং অ্যাপলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবস। সারা বিশ্বের মানুষের মাঝে বিভিন্ন প্রযুক্তিপণ্য ছড়িয়ে দিলেও নিজের পরিবারের ক্ষেত্রে তাদের ভ‚মিকা ছিল একেবারেই উল্টো। উঠতি বয়সে তাদের সন্তানরা যেন খুব বেশি প্রযুক্তির সংস্পর্শে আসতে না পারে, সে বিষয়টি নিশ্চিত করেছিলেন প্রযুক্তি বিশ্বের এই দুই দিকপাল।স্টিভ জবস ও বিল গেটসবিল গেটস শিক্ষাক্ষেত্রে প্রযুক্তির বিপ্লব ঘটাতে সবসময়ই কাজ করেছেন।

২০০৭ সালে একটি ভিডিও গেইমের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েছিলো বিল গেটসের মেয়ে জেনিফার ক্যাথরিন গেটস। কম্পিউটার ঘেঁটে দেখা গেল, তাতে বেশ কিছু গেম রয়েছে, যার পেছনে জেনিফার কাটিয়ে দিচ্ছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। এর মধ্যে ভিভা পিনাটা নামের একটি গেম খেলেই সে কাটিয়ে দিতো দুই থেকে তিন ঘণ্টা।এ ঘটনায় সচেতন হয়ে বিল গেটস স্ক্রিন টাইম নির্ধারণ করে দেন। এমন পরিস্থিতিতে মেয়ের কম্পিউটার ব্যবহার দিনে ৪৫ মিনিটে নামিয়ে আনলেন গেটস ও তার স্ত্রী। শুধুই থেমে থাকেননি তিনি। ১৪ বছর বয়সের আগে সন্তানদের মোবাইল ফোন ব্যবহারেও ছিল তার নিষেধাজ্ঞা। যদিও তাতে সন্তানদের ছিল ঘোর আপত্তি। এক সাক্ষাতকারে বিল গেটস বলেন: আমরা প্রায়ই তাদের একটি সময় বেধে দিতাম যার পরে সব ডিভাইস বন্ধ করে ফেলতে হবে। এর ফলে তারা সময়মতো ঘুমাতে যেতে পারত এবং পর্যাপ্ত ঘুমানোর সময় পেত।

স্টিভ জবসও তার সন্তানদের প্রযুক্তির ব্যবহার থেকে একেবারেই দূরে রেখেছিলেন। ২০১১ সালে নিউ ইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান: তার সন্তানদের জন্য আইপ্যাড ব্যবহার নিষিদ্ধ ছিল। শুধু তাই নয়, অন্যান্য প্রযুক্তিপণ্যের ব্যবহারও ছিল অনেক সীমিত। এর পরিবর্তে তিনি তাদের নিয়মিত সময় দিতেন। একসাথে রাতের খাবার খেতেন এবং প্রযুক্তির বাইরের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাদের সাথে আলোচনা করতেন।স্টিভ জবস ও বিল গেটসতবে শুধু বিল গেটস বা স্টিভ জবসই নন, সিলিকন ভ্যালির বিভিন্ন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের নামকরা সব ব্যক্তিদের মাঝেই এই প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে।

অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগতে পারে প্রযুক্তির উৎকর্ষ সাধনের জন্য যারা সারা জীবন কাজ করলেন, তারা নিজেদের সন্তানদের কেন প্রযুক্তি থেকে দূরে রাখছেন। এ প্রসঙ্গে কিছু তথ্য তুলে ধরা হয়েছে শিক্ষাবিদ জো ক্লিমেন্ট এবং ম্যাট মাইলসের বই ‘স্ক্রিন স্কুলড: টু ভেটেরান টিচার্স এক্সপোজ হাও টেকনোলজি ওভারইউজ ইজ মেকিং আওয়ার কিডস ডাম্বার’ বইতে। লেখক ক্লেমেন্ট ও মাইলের মতে, স্টিভ জবসের সন্তানেরা স্কুলে যতটা সময় প্রযুক্তি পণ্য ব্যবহার করেছে তার চেয়ে অনেক কম সময় তারা তা বাসায় ব্যবহার করতে পেরেছে।

বইটিতে বলা হয়, সিলিকন ভ্যালির ধনকুবেররা বিভিন্ন প্রযুক্তি পণ্যের আসক্তির ভয়াবহতা সাধারণ মানুষের তুলনায় একটু বেশিই অনুধাবন করতে পারেন। আর তাই নিজেদের সন্তানদের আসক্তি থেকে দূরে রেখে তাদের মধ্যে সৃজনশীলতা বিকাশে এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন তারা। যদিও বর্তমানে দেশটির অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখার অংশ হিসেবেই প্রযুক্তিপণ্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে, সেখানে এমন কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও কিন্তু আছে যেখানে প্রযুক্তির ব্যবহার সর্বনিম্ন। এমনই একটি স্কুল হলো ওয়ালডর্ফ স্কুল। স্কুলটিতে এখনও ক্লাসরুমে চক ও ব্ল্যাকবোর্ড ব্যবহার করা হয়। লেখার জন্য এখানে শিক্ষার্থীরা ব্যবহার করে পেন্সিল। কোডিং শেখানোর পরিবর্তে তাদের শেখানো হয় কীভাবে অন্যকে সম্মান করতে হয় এবং সহযোগিতাপূর্ণ আচরণ করতে হয়।

এমন আরও একটি স্কুল হলো ব্রাইটওয়ার্কস স্কুল। এখানে শিশুদের সৃজনশীলতা বিকাশে হাতে কলমে বিভিন্ন কিছু বানানো শেখায় শিক্ষকরা। দেয়ালে ঘেরা ক্লাসরুমের পরিবর্তে তাদের ক্লাস নেওয়া হয় ট্রিহাউজে। মজার বিষয় হলো এসব স্কুলে নিজেদের সন্তানদের ভর্তি করানোর ক্ষেত্রে ক্রমেই আগ্রহী হচ্ছেন সিলিকন ভ্যালির প্রযুক্তি ব্যবসায়ীরা। কারণ স্মার্টফোন, ট্যাবলেট ও কম্পিউটারের আকর্ষণ শক্তি সম্পর্কে সিলিকন ভ্যালির বাসিন্দারা বেশ ভালোভাবেই অবগত।