বাছাই খবর

ফেসবুক কি ধরনের কোম্পানি?

By Baadshah

April 14, 2018

একটা প্রশ্ন আপনাকে বিভিন্ন ভাইভা বা পরীক্ষায় করা হতে পারে। ফেসবুক কি ধরনের কোম্পানি? সামাজিক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠান, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, মিডিয়া, সফটওয়্যার নির্মাতা কোম্পানি নাকি বিমান নির্মাতা কোম্পানি? উত্তর নিশ্চয়ই জানেন। কেউ কেউ এক কথায় বলবেন, ফেসবুক সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে। আপনার কথা কিন্তু ঠিক। আবার কেউ যদি অন্য উত্তরগুলোর মধ্যে সফটওয়্যার নির্মাতা কোম্পানি নাকি বিমান নির্মাতা কোম্পানি বলে একটি উত্তর দেয় তার উত্তরও ঠিক। তবে ফেসবুক কিন্তু নিজেকে মিডিয়া বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান বলে না। তাহলে ফেসবুক আসলে কি? ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী জাকারবার্গ এ প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। গত সপ্তাহে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটে আইনপ্রণেতাদের সামনে ফেসবুকের আসল পরিচয় দেন। জাকারবার্গ বলেন, ‘ফেসবুক নিজে কোনো তথ্য তথ্য বিক্রি করে না। বিজ্ঞাপন দেখাতে তথ্য বিক্রি করার প্রয়োজন নেই। ফেসবুকের বিজ্ঞাপন মডেল পরিষ্কার সবার কাছে। ফেসবুক কোনো মিডিয়া বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান নয়। এটি একটি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান। আমরা প্রথম যেটা করি তা হচ্ছে কারিগির কাজ। এখানে প্রকৌশলীরা কোড লিখে পণ্য তৈরি করেন এবং মানুষকে সেবা দেন। এর সঙ্গে আমাদের আরও কিছু করতে হয়। কনটেন্ট তৈরির জন্য মানুষকে অর্থ দেওয়া হয়। আমরা এন্টারপ্রাইজ সফটওয়্যার তৈরি করি। তারপরও আমরা নিজেদের এন্টারপ্রাইজ বা ব্যবসায়িক সফটওয়্যার কোম্পানি বলব না। মানুষকে ইন্টারনেট সংযোগ দিতে আমরা ড্রোন তৈরি করি। তাই বলে আমরা নিজেদের বিমান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বলব না। ফেসবুক একটি নিখান প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান। তাই ফেসবুকের কিছু ত্রুটি আছে। ফেসবুক টিকমতো প্রাইভেসি রক্ষায় দায়িত্ব পালন করেনি। ভুয়া খবর ছড়ানো, নির্বাচনে বিদেশি হস্তক্ষেপ বন্ধ ঠেকাতে ফেসবুক খুব বেশি কিছু করেনি, এটা পরিষ্কার। এ ভুল ছিল স্বীকার করে মাফ চেয়েছেন প্রায় ২২০ কোটি ব্যবহারকারীর প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার।

ফেসবুকের ব্যবসার মডেল কেমন? অন্যান্য মিডিয়া কোম্পানির মতো। ব্যবহারকারীদের কাছে বিজ্ঞাপন দেখায় বিনিময়ে বিজ্ঞাপনদাতাদের কাছ থেকে অর্থ নেয় ফেসবুক। সিনেটের শুনানিতে ইউজারদের তথ্য ব্যবহার করে ফেসবুকের বিজ্ঞাপণ দেয়ার ব্যবসায়িক মডেল প্রতিষ্ঠানটি ভবিষ্যতে পরিবর্তন করবে কিনা কিংবা তথ্যের নিরাপত্তার জন্য অর্থের দাবী করবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে গেছেন মার্ক জাকারবার্গ। বিশ্লেষকরা বলছেন, এক্ষেত্রে ফেসবুক বড় কোনো পরিবর্তন আনলে মুখ থুবড়ে পড়বে প্রতিষ্ঠানটি। ফেসবুককে আমরা সবাই ফ্রি পরিষেবা হিসেবেই জানি। কিন্তু সোশ্যাল জায়ান্ট এই সাইটের সাম্প্রতিক বিশাল ডেটা কেলেঙ্কারিতে লক্ষণীয় যে, বিনামূল্যে ফেসবুকের সদস্য হওয়ার ভোগান্তিও কম নয়। ব্যক্তিগত তথ্য বিজ্ঞাপনদাতাদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। ফেসবুকের সিওও শেরিল স্যান্ডবার্গের মতে, ব্যবহারকারীরা টাকা দিতে ইচ্ছুক না হওয়া পর্যন্ত ফেসবুকের এই ব্যবসায়িক মডেল পরিবর্তন করা অসম্ভব। ব্যবহারকারীদের পাহাড় পরিমাণ তথ্য সংগ্রহ করে থাকে ফেসবুক, ফোন নাম্বার থেকে শুরু করে টেক্সট মেসেজ, ঠিকানা এবং অন্যান্য ডেমোগ্রাফিক তথ্য, এমনকি ব্যবহারকারীর নির্দিষ্ট আগ্রহের তথ্যও। ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত এসব তথ্য বিজ্ঞাপন নেটওয়ার্কে সহজলভ্য করা হয়, যেন বিজ্ঞাপন প্রতিষ্ঠানগুলো ফেসবুকের ভেতরে এবং এর বাইরের ব্যবহারকারীদের নির্দিষ্ট বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করতে পারে।

ফেসবুক না থাকলে কি নিরাপদ আপনি? মোটেও না। যাঁরা অনলাইনে যান কিন্তু ফেসবুক প্রোফাইল নেই তাঁদের পেছনে বেশি করে লেগে থাকে ফেসবুক। সব তথ্য জোগাড় করে রাখে। জাকারবার্গ সিনেটের শুনানিতে স্বীকার করেছেন, নিরাপত্তার জন্য ফেসবুক যাঁরা ফেসবুক ব্যবহার করেনা তাঁদের তথ্য সংগ্রহ করে। এমনকি এর জন্য বিভিন্ন ওয়েবসাইটকে পিক্সেল বা কুকি বসাতে টাকা দেয়। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ফেসবুক ব্যবহার না করলেও আপনি নিরাপদ না। আপনার তথ্য অনলাইন থেকে নিয়ে একটা শ্যাডো প্রোফাইল তৈরি করে। এ জন্য কোনো অনুমতি নেয়না। কোথায় যাবেন আপনি?