‘দি সোশ্যাল নেটওয়ার্ক’ নামে ২০১০ সালে যে চলচ্চিত্র তৈরি হয়েছিল, সেখানে মার্ক জাকারবার্গের চরিত্রের একটি সংলাপ ছিল- “স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা অনলাইনে যায়, কারণ তাদের বন্ধুরা অনলাইনে। তাই একজন সরে পড়লে, অন্যরাও সরে পড়ে।”ফেসবুকের ব্যাপারে ঐ বাক্যই ধীরে ধীরে সত্য প্রমাণিত হচ্ছে। অন্তত আমেরিকাতে।
সামাজিক যোগাযোগের জন্য ১৩ থেকে ১৭ বছরের কিশোর তরুণদের মধ্যে ফেসবুক এখন আর সবচেয়ে জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম নয়। তালিকার প্রথম তিনটির মধ্যেও ফেসবুক এখন আর নেই। গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিউ রিসার্চ সেন্টার বলছে, তরুণরা প্রচণ্ডভাবে ইউটিউবে ঝুঁকে পড়ছে। ৮৫ শতাংশই বলছে, তারা ইউটিউব ব্যবহার করে। তারপরই রয়েছে ইনস্টাগ্রাম এবং স্ন্যাপচ্যাট।
আমেরিকাতে কিশোর তরুণদের মধ্যে ফেসবুকের অবস্থান এখন চতুর্থ। ৫১ শতাংশ তরুণ-তরুণী এখনও ফেসবুক ব্যবহার করছে। কিন্তু ২০১৫ সাল থেকে ফেসবুক ২০ শতাংশ ব্যবহারকারী হারিয়েছে। তবে এখনও অপেক্ষাকৃত অসচ্ছল পরিবারের সন্তানদের কাছে ফেসবুকের আবেদন রয়েছে।
বিভিন্ন পরিসংখ্যান ফেসবুকের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান জিবিএইচ ইনসাইটের ড্যানিয়েল আইভস্ বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে ফেসবুক নিয়ে যে জল্পনা চলছিল, সর্বশেষ গবেষণায় তা সত্য বলে প্রমাণিত হচ্ছে। ফেসবুকের মালিক মার্ক জাকারবার্গ বলছেন, ২০১৭ সালের শেষ তিন মাসে ফেসবুকে কাটানোর সময় ৫ কোটি ঘণ্টা কমেছে। তিনি বলেন, ভিডিওর সংখ্যা কমানোর ফলে এটি হয়েছে।
তরুণদের সামাজিকমাধ্যম ব্যবহারের প্রবণতা নিয়ে গবেষণা করছেন যুক্তরাষ্ট্রের কানসাস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হুনজিন সো। কেন ফেসবুক ছেড়ে তরুণরা ইনস্টাগ্রাম এবং স্ন্যাপচ্যাটের দিকে ঝুঁকছে তার কতগুলো কারণ তিনি দিয়েছেন। ফেসবুকে বিভিন্ন বয়সীদের গতিবিধি, বিশেষ করে তাদের বাবা-মা এবং গুরুজনদের অবস্থানের কারণে অনেক তরুণ-তরুণী এই প্লাটফর্ম ছেড়ে চলে যাচ্ছে। বন্ধুদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগের জন্য অনেকে আর ফেসবুক ব্যবহার করে না। তিনি বলেন, অনেক তরুণ আমাকে বলেছে তারা ফেসবুকে তখনই কিছু পোস্ট করে যখন তাদের বয়সী স্বজনরা ফটো দেখতে চায়। ইউটিউব, স্ন্যাপচ্যাট এবং ইনস্টাগ্রামের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তার অন্যতম প্রধান কারণ- এসব প্ল্যাটফর্মে ছবি এবং ভিডিওর প্রাধান্য।
তবে তরুণদের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা হারালেও, সামগ্রিকভাবে এখনও ফেসবুক সবচেয়ে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। ২০১৮ সালের প্রথম তিন মাসে নতুন চার কোটি ৮০ লাখ মানুষ প্রতিদিন ফেসবুকে ঢুকছে। এছাড়া তরুণদের অন্যতম জনপ্রিয় মাধ্যম ইনস্টাগ্রামের মালিকানা ফেসবুকের হাতে।
তথ্যসূত্র: বিবিসি বাংলা।