জাকারবার্গ বলেছেন, ফেসবুক ফ্রি থাকবে তবে বিজ্ঞাপনমুক্ত সংস্করণের চিন্তা একেবারে ঝেড়ে ফেলেননি তিনি।ফেসবুককে আমরা সবাই ফ্রি পরিষেবা হিসেবেই জানি। কিন্তু সোশ্যাল জায়ান্ট এই সাইটের সাম্প্রতিক বিশাল ডেটা কেলেঙ্কারিতে লক্ষণীয় যে, বিনামূল্যে ফেসবুকের সদস্য হওয়ার ভোগান্তিও কম নয়। ব্যক্তিগত তথ্য বিজ্ঞাপনদাতাদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে।
ফেসবুকের সিওও শেরিল স্যান্ডবার্গের মতে, ব্যবহারকারীরা টাকা দিতে ইচ্ছুক না হওয়া পর্যন্ত ফেসবুকের এই ব্যবসায়িক মডেল পরিবর্তন করা অসম্ভব।
ব্যবহারকারীদের পাহাড় পরিমাণ তথ্য সংগ্রহ করে থাকে ফেসবুক, ফোন নাম্বার থেকে শুরু করে টেক্সট মেসেজ, ঠিকানা এবং অন্যান্য ডেমোগ্রাফিক তথ্য, এমনকি ব্যবহারকারীর নির্দিষ্ট আগ্রহের তথ্যও। ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত এসব তথ্য বিজ্ঞাপন নেটওয়ার্কে সহজলভ্য করা হয়, যেন বিজ্ঞাপন প্রতিষ্ঠানগুলো ফেসবুকের ভেতরে এবং এর বাইরের ব্যবহারকারীদের নির্দিষ্ট বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করতে পারে।
ব্যক্তিগত তথ্যের এই বাণিজ্যিক ব্যবহার সীমাবদ্ধ করতে ব্যবহারকারীরা তাদের প্রাইভেসি সেটিংস পরিবর্তন করতে পারেন কিন্তু ব্যবহারকারীরা যদি লক্ষ্যপূর্ণ বিজ্ঞাপন থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্তি চান, তাহলে ফেসবুককে অর্থ প্রদান করতে হবে- এনবিসি নিউজের দ্য টুডে অনুষ্ঠানে এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন স্যান্ডবার্গ। তিনি বলেন, ‘কিন্তু আমরা তা চাই না। কেননা এর ফলে ফেসবুক পেইড সেবায় পরিণত হবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘ব্যবহারকারীর তথ্য ফেসবুক বিক্রি করে না কিন্তু আমাদের সেবা আপনার তথ্যের ওপর নির্ভরশীল।’
ব্যবহারকারীদের বিশ্বাস পুনরায় অর্জন করার জন্য এবং ভবিষ্যতে ব্যক্তিগত তথ্যের অপব্যবহার প্রতিরোধে ফেসবুকের নতুন পদক্ষেপগুলো নিয়ে বিগত কয়েকদিন ধরেই ফেসবুকের সিইও মার্ক জাকারবার্গ এবং সিওও শেরিল স্যান্ডবার্গ কথা বলছেন। সম্প্রতি ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকার মাধ্যমে সাড়ে আট কোটির বেশি ফেসবুক ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য অগোচরে অপব্যবহারের ঘটনা ফাঁস হয়। এ ঘটনার পর থেকে ব্যাপক সমালোচিত ফেসুবক। আরো অসংখ্য ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্যের অপব্যবহার রোধে কাজ করছে সোশ্যাল জায়ান্ট সাইটটি।
স্যান্ডবার্গ জানান, ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকা কীভাবে ব্যবহারকারীদের তথ্য হাতিয়ে নিয়েছে তা জানতে অভ্যন্তরীণ তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে ফেসবুক। তদন্তে তথ্যের অপব্যবহারের আরো ঘটনা উন্মোচন হতে পারে বলেও তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন। স্যান্ডবার্গ স্বীকার করেছেন যে, গ্রাহক তথ্য সুরক্ষায় তাদের আরো সক্রিয় হওয়া উচিত ছিল।
স্যান্ডবার্গ বলেন, ‘কয়েক বছর আগে ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকা তাদের আশ্বাস দিয়েছিল, ব্যবহারকারীদের সংগৃহীত তথ্য কাজের প্রয়োজন শেষে মুছে ফেলেছে। বিষয়টির নজরদারি করা আমাদের উচিত ছিল। তাদের কাছে কী আছে, তা খুঁজে পেতে আমরা একটি ফরেনসিক তদন্তের চেষ্টা করছি।’
ব্লুমবার্গকে দেওয়া অন্য একটি সাক্ষাৎকারে স্যান্ডবার্গ জানিয়েছিলেন, এ ঘটনার পর বেশ কয়েকটি ব্র্যান্ডের সঙ্গে ডিজিটাল বিজ্ঞাপন স্থগিত করেছে ফেসবুক। তবে জাকারবার্গ বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করেছেন যে, গোপনীয়তা সংক্রান্ত কেলেঙ্কারি ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা কিংবা বিজ্ঞাপন ব্যবসাকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করেনি। গত সপ্তাহে জাকারবার্গ ঘটনায় দায় স্বীকার করে জানিয়েছিলেন যে, এই সমস্যা মোকাবেলার যোগ্য ব্যক্তি তিনি। জাকারবার্গ আরো জানান, ফেসবুকের গোপনীয়তা সমস্যা সমাধানের জন্য কয়েক বছর লাগবে।
ফেসবুক ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য অপব্যবহারের ঘটনায় আগামী মঙ্গলবার এবং বুধবার, মার্কিন কংগ্রেসের সামনে সাক্ষ্য দিতে রাজি হয়েছেন জাকারবার্গ।
ফেসবুক ব্যবহারে কি টাকা লাগবে?
