প্রযুক্তি খবর

ফেসবুক ব্যবহারে বাড়তি টাকা; কতটুকু জরুরী?

By Baadshah

March 31, 2018

আজকাল কিশোর-তরুন সবার কাছে ইন্টারনেট ব্যবহার একটি মৌলিক চাহিদার মতো হয়ে গিয়েছে। আর ইন্টারনেট ব্যবহারের মূল মাধ্যম হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে ফেসবুক। তরুণদের ইন্টারনেটে ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মাত্রাতিরিক্ত আসক্তি বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতেও মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সম্প্রতি ফেসবুককে ‘ডিজিটাল আফিম’/ডিজিটাল কোকেন’ নামেও আখ্যায়িত করা হচ্ছে। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে হতাশা থেকে শুরু করে ঘুম কম হওয়াসহ নানা অসুস্থতার জন্যও একে দায়ী করা হচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় ইয়ংগার জেনারেশন একবার ফেসবুকের মধ্যে ঢুকলে বের হতে চায় না। আসলেই চিন্তার বিষয়!

এই চিন্তা থেকে উত্তরণের জন্য আমাদের দেশে কিছু পরিকল্পনা করা হচ্ছে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে ফেসবুক সহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে আলাদা মূল্য নির্ধারণের পরিকল্পনা নিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। সম্প্রতি রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ এ পরিকল্পনার কথা জানান।

‘স্বল্পোন্নত দেশ হতে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে টেলিযোগাযোগ সেক্টরের ভূমিকা’ শীর্ষক এক আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, তরুণ প্রজন্মের সোস্যাল মিডিয়া আসক্তি ঠেকাতে ইন্টারনেটে বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহারে ভিন্ন মূল্য নির্ধারণ করার পরিকল্পনা রয়েছে বিটিআরসির। তিনি আরও বলেন, এটা অনস্বীকার্য যে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ইন্টারনেট বর্তমানে সবার হাতে হাতে পৌঁছে গেছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট ঘাঁটায় (ব্রাউজ) প্র্যাকটিক্যালি ইয়ং জেনারেশন খুব একটা ক্রিয়েটিভ হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না।

তিনি আরও বলেন, ‘আজকে আমি দেখেছি ইয়ংগার জেনারেশনের ভেতরে ম্যাক্সিমাম ব্যবহার করে ফেসবুক চ্যাটিং করার জন্য। এটি ক্রিয়েটিভ ইউজ না।’ এই অবস্থা থেকে উত্তরণে ‘সামাজিক বিপ্লব’ দরকার মন্তব্য করার সঙ্গে নিজের সংস্থার পক্ষ থেকে কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেন বিটিআরসি চেয়ারম্যান।

তিনি বলেন, খুব শিগগিরই প্রস্তাব করবো যে যাতে ইন্টারনেটে ক্রিয়েটিভ ইউজের জন্য কোনো বন্দোবস্ত করা যায়। কোনো একটা বিশেষ রেইট দেওয়া যায় ফেসবুক ব্যবহারের জন্য, আবার ক্রিয়েটিভ ইউজ যদি করা যায়, তাহলে আরেক রকমের রেট। তাহলে হয়তবা ফেসবুক ব্যবহার না করে জ্ঞান আহরণের জন্য চেষ্টা করবে।

যুগের প্রয়োজনে আমরা প্রযুক্তির নানাবিধ ব্যবহার করে থাকি। আর ফেসবুক এমন একটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যার মাধ্যমে আমরা প্রচুর মানুষের সাথে যোগাযোগ রাখতে পারি। সব প্রযুক্তির ক্ষেত্রেই কিছু সুবিধা এবং কিছু অসুবিধা থাকে যা নির্ভর করে আমাদের ব্যবহারের উপর। ফেসবুক এর মাধ্যমে নিঃসন্দেহে অনেক ভালো কাজ হচ্ছে আবার অনেক খারাপ কাজও হচ্ছে।

একটি কথা প্রচলিত আছে “অতিরিক্ত যে কোনো কিছুই খুব খারাপ (Excess everything is very bad)” আর এই কথাটি আমাদের তরুন সমাজের ফেসবুক আসক্তির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। তবে শুধুমাত্র অতিরিক্ত টাকা আরোপ করা হলেই যে ফেসবুক আসক্তি থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে তা নয়, হয়তো কিছুটা অসক্তি কমবে অসচ্ছল পরিবারের ক্ষেত্রে। তবে সে ক্ষেত্রে আসক্তি মেটানোর বাড়তি টাকা পাওয়ার জন্য অন্য পন্থা অবলম্বনের আশংকা অমূলক নয়।

সার্বিক বিবেচনায় ইন্টারনেটে ফেসবুক ব্যবহারে নির্দিষ্ট টাকা ব্যয় তরুণ প্রজন্মের সোস্যাল মিডিয়া আসক্তি কিছুটা কমাতে হয়তো সক্ষম হবে তবে প্রযুক্তির সদ্ব্যবহার করার জন্য সবার আগে যা প্রয়োজন তা হচ্ছে – প্রতিটি মানুষের মধ্যে মানবিক মূল্যবোধ সৃষ্টি করা। এই মূল্যবোধ- পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সমাজকেই সৃষ্টি করে দিতে হবে। আর তাহলেই প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার সম্ভব হবে।