বাংলাদেশে চলতি বছরেই ফোরজি সেবা চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। আগামী মার্চে নিলাম প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এ সেবার উদ্বোধন করার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। তবে এ সেবা চালু হওয়ার আগে ২০টি প্রস্তাবনা দিয়েছে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন। মঙ্গলবার রাজধানীর তোপখানা রোডস্থ নির্মলসেন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ‘টেলিযোগাযোগ ও প্রযুক্তি খাতে নৈরাজ্য-লুটপাট বন্ধ ও ফোরজি খাতের কতিপয় প্রতিবন্ধকতা নিরসনে’ এক সংবাদ সম্মেলন এই প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়।
সংবাদ সম্মেলন লিখিত ববক্তব্যে সংগঠনের সভাপতি মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, দেশে বর্তমানে ইন্টারনেটের গতি কত তা পরিমাপ করার ব্যবস্থা নেই। তবে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের গতি নূন্যতম ৫ এমবিপিএস হিসাব করে থ্রী জি ইন্টারনেটের গতি হিসাব করা হয়। যুক্তরাজ্য ভিত্তিক প্রযুক্তির প্রতিষ্ঠান ওপেন সিগন্যালের তথ্য অনুযায়ী বর্তমান বিশ্বের ফোরজি প্রযুক্তির গড় গতি ১৬.৬ এমবিপিএস। ভারতের ৬.১৩, শ্রীলংকা ও থাইল্যান্ডে ৯.১৪, সিঙ্গাপুর ও দক্ষিণ কোরিয়ায় যথাক্রমে ৪৬.৬৪ ও ৪৫.৮৫ এমবিপিএস। এছাড়া নরওয়ে ও হাঙ্গেরীতে ৪২ এমবিপিএস।
তিনি জানান, বর্তমান বিশ্বের ১৮০টি দেশে ফোরজি চালু থাকলেও বাংলাদেশ এক্ষেত্রে নবীন। বর্তমান সরকার দেশে ফোরজি চালুর যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাতে ইন্টারনেটের সর্বনিম্ন গতি ২০ এমবিপিএস নির্ধারণ করে দিয়েছেন। কিন্তু এই গতির জন্য যে তরঙ্গ প্রয়োজন, তা কি অপারেটরদের হাতে রয়েছে? বর্তমানে যে তরঙ্গ আছে তা সব ব্যান্ড মিলিয়ে রবির ৩৬.৪ মেগাহার্টজ, গ্রামীণফোনের ৩২ মেগাহার্টজ, বাংলালিংকের ২০ মেগাহার্টজ। প্রস্তাবিত গতির জন্য প্রয়োজন ৬০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ।
মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, আমাদের দেশে টুজি ও থ্রিজি সেবার জন্য আলাদা তরঙ্গ ব্যবহৃত হয়। ফলে তরঙ্গ নিরপেক্ষ না থাকায় বর্তমান তরঙ্গ দিয়ে ফোরজি চালু করা সম্ভব নয়। ইতিমধ্যে বিটিআরসি ৯০০, ১ হাজার ৮শত ও ২ হাজার ১শত মেগাহার্টজ তরঙ্গের বিক্রির দরপত্র আহ্বান করেছেন। এছাড়াও ৭ শত ব্র্যান্ডের তরঙ্গ ও অ ব্যবহৃত রয়েছে। গ্রাহকদের অধিকার রক্ষা চতুর্থ প্রজন্মের প্রযুক্তি চালু করতে আমাদের কতিপয় প্রস্তাবনা নিম্নে তুলে ধরছি-
০১। টেলিকম খাতে আজ পর্যন্ত কী পরিমাণ লুটপাট হয়েছে তার অডিট রিপোর্ট প্রকাশ করতে হবে। অবৈধ ভিওআপি ব্যবসায়ীদের তালিকা প্রকাশ করতে হবে। প্রযুক্তি ও টেলিকম সেবা খাতের গ্রাহকদের স্বার্থ রক্ষা করার জন্য একটি আলাদা সুরক্ষা আইন ও নিষ্পত্তির জন্য আলাদা সংস্থা তৈরি করা সময়ের দাবি।
০২। ফোজি সম্বলিত হ্যান্ডসেটের ওপর আমদানী শুল্ক প্রত্যাহার করতে হবে।
০৩। নেট সমতার নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।
০৪। ইন্টারনেটের মূল্য ও টকটাইমের ওপর কর হ্রাস করে মূল্য কমাতে হবে এবং মধ্যস্বত্ত্বভোগী অপারেটর তুলে দিয়ে কলরেট কমাতে হবে।
০৫। এমএনপি’র চালুর সিদ্ধান্ত দ্রুত বাস্তবায়ন চাই।
০৬। বিটিএসের তেজষক্রিতা নিয়ন্ত্রণের জন্য মহামান্য হাইকোর্টের আদেশ দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।
০৭। তরঙ্গ নিরপেক্ষতা প্রদান করতে হবে।
০৮। জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে যে সকল সিম বিক্রি করা হয়েছে তা বন্ধ করতে হবে।
০৯। অপারেটরদের কাছ থেকে যত্রতত্র অফারের ম্যাসেজ ও শর্টকোড নাম্বার থেকে ফোন করা বন্ধ করতে হবে।
১০। রিটেইলারদের কার্যক্রম তদারকির জন্য মনিটরিং সেল চালু করতে হবে।
১১। আইএসপি লাইসেন্সধারীদের ব্যান্ডউইথ বিক্রি ও ব্যবহারের উপর নজরদারি রাখতে হবে।
১২। কলড্রপের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ ও ক্ষতিপূরণ প্রদানের সঠিক তথ্য প্রকাশ করতে হবে।
১৩। নকল ও নিম্নমানের হ্যান্ডসেট, সফটওয়ার, কম্পিউটারের যন্ত্রাংশ বিক্রির বন্ধ করতে হবে।
১৪। মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম মনিটরিং করার জন্য যৌথ মনিটরিং সেল গঠন করতে হবে।
১৫। ফেকআইডি খুলে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
১৬। পর্ণোগ্রাফি ও পাইরেসি নিয়ন্ত্রণে জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
১৭। ফেসবুক, ইউটিউব, হোয়াটসআপ, ইমো, ভাইভার কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে যৌথ চুক্তি বাস্তবায়ন করতে হবে।
১৮। সাইবারনিরাপত্তা কর্মী তৈরি করতে হবে।
১৯। ডিজিটাল আইনে ৫৭ ধারার রূপান্তর না করা।
২০। নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা দ্রুত কার্যকর করে সীমান্ত ওপারের নেটওয়ার্ক বন্ধ করতে হবে।