ফ্রিল্যান্সার আইডি কার্ডে দারুণ সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। ফ্রিল্যান্সারদের আইডি কার্ড দিচ্ছে সরকার। প্রযুক্তিতে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ফ্রিল্যান্সিংয়ে এগিয়ে যাচ্ছে আমাদের দেশ।ফ্রিল্যানসারদের স্বীকৃতি দিতে সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। ব্যাংক লোন, বাচ্চাকে ভালো স্কুলে ভর্তি, বিদেশ ভ্রমণসহ নানা ধরনের কাজে প্রয়োজন হয় পেশাগত স্বীকৃতি। এমন হাজারো সমস্যা সমাধান এবং কাজে নতুন দিগন্ত খুলে দিতেই আনা হয়েছে ‘ফ্রিল্যান্সার আইডি কার্ড’।
বিশেষ সুবিধা
ফ্রিল্যান্সার আইডি কার্ড হলো বাংলাদেশ সরকার স্বীকৃত ফ্রিল্যান্সারদের পরিচয়পত্র। ইতিমধ্যে সরকার বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সারদের ফ্রিল্যান্সার আইডি কার্ড দেয়া শুরু করেছে। এক বছরে এক হাজার ডলার আয় করেছেন, এমন ব্যক্তি ফ্রিল্যান্সার আইডি কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারছেন।
সম্ভাবনাময় ফ্রিল্যান্সিং খাতের সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ভার্চুয়াল আইডি কার্ডধারী ফ্রিল্যান্সারদের সহজে ঋণ ও ক্রেডিট কার্ড সুবিধা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে এ-সংক্রান্ত একটি সার্কুলার দেশের ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়।
এতে বলা হয়েছে, তথ্য-প্রযুক্তিভিত্তিক শিল্পের মধ্যে ফ্রিল্যান্সারদের আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা ক্রমাগত বাড়ছে; যা দেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে শুরু করেছে।
আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশে পরিণত করার লক্ষ্যে সরকার ফ্রিল্যান্সিং খাতে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি, উদ্যোক্তা তৈরি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে।
সম্প্রতি তথ্য-প্রযুক্তি খাতে পারদর্শী ফ্রিল্যান্সারদের সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়ার লক্ষ্যে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ থেকে বাংলাদেশের আইটি ফ্রিল্যান্সারদের ভার্চুয়াল আইডি কার্ড দেয়া শুরু হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরও জানিয়েছে, ফ্রিল্যান্সিং খাতের প্রয়োজনীয় বিকাশের লক্ষ্যে বিদ্যমান ব্যাংকিং আইন-কানুন ও বিবি-বিধান মেনে ভার্চুয়াল আইডি কার্ডধারী আইটি ফ্রিল্যান্সারদের ঋণ সুবিধা ও ক্রেডিট কার্ড সুবিধা দিতে পারবে ব্যাংকগুলো।
ফ্রিল্যান্সার আইডি কার্ড হলো বাংলাদেশ সরকার স্বীকৃত ফ্রিল্যান্সারদের পরিচয়পত্র। ইতিমধ্যে সরকার বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সারদের ফ্রিল্যান্সার আইডি কার্ড দেয়া শুরু করেছে। এক বছরে এক হাজার ডলার আয় করেছেন, এমন ব্যক্তি ফ্রিল্যান্সার আইডি কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারছেন।
সরকারের আইসিটি ডিভিশন, স্টার্টআপ বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ ফ্রিল্যান্সার ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি (বিএফডিএস) যৌথভাবে কাজটি করছে। যেখানে ফ্রিল্যান্সাররা খুঁজে পাবেন নিজের কাজের সনদ। বিএফডিএস অনেক দিন ধরেই কাজ করছিল কীভাবে ফ্রিল্যান্সারদের একটা স্বীকৃতি দেওয়া যায়। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ডা. তানজিবা রহমান জানান, উদ্যোগটি বেসরকারিভাবেই শুরু করলেও বিষয়টি নিয়ে সরকারের ভাবনাও অনেক দিন থেকেই। তাই যৌথভাবে শুরু হলো এই উদ্যোগটি। তবে কারিগরি পুরো বিষয়টি দেখভাল করবে বিএফডিএস। দেশে অনেক বড় একটি বৈদেশিক মুদ্রা আসছে এখান থেকে। কিন্তু সঠিক দিকনির্দেশনা না থাকায় সেগুলোর সঠিক হিসাব ছিল না। অন্যদিকে, ফ্রিল্যান্সাররাও পড়ছেন নানা ধরনের সমস্যায়। এরই মধ্যে আমাদের সাইটে আট হাজার ফ্রিল্যান্সার রেজিস্ট্রেশন করেছেন। ধীরে ধীরে দেশের সব ফ্রিল্যান্সার যুক্ত হবেন। ফ্রিল্যান্সারদের জন্য এই আইডি কার্ডটি থাকবে সম্পূর্ণ ভার্চুয়াল। তবে এটি যে কেউ চাইলে প্রিন্ট দিয়ে নিতে পারবেন।
যেভাবে নেবেন নিবন্ধন: ফ্রিল্যান্সার হিসেবে নিবন্ধনের জন্য যেতে হবে (freelancers.gov.bd) লিংকে। নাম (এনআইডি অনুসারে), ই-মেইল, মোবাইল আর আট অক্ষরের পাসওয়ার্ড দিয়ে এখানে অ্যাকাউন্ট সাইনআপ করা যাবে। অ্যাকাউন্ট সাইনআপ কারার সময় ই-মেইল ভেরিফাই করতে বলা হবে। ভেরিফিকেশন শেষে নিজের অ্যাকাউন্টে লগইন করা যাবে। লগইন করার পরের কাজটি গুরুত্বপূর্ণ। ‘ফ্রিল্যান্সার আইডি’ বাটনে ক্লিক করা হলে চার ধাপের একটি ফরম আসবে। প্রথম ধাপে নাম, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর (এনআইডি চাওয়া হয় ভেরিফিকেশন সম্পন্ন করার জন্য), ফোন নম্বর দিতে হবে। দ্বিতীয় ধাপে ফ্রিল্যান্সারকে তার কাজের যাবতীয় তথ্য এবং সর্বশেষ ১২ মাসের আয়ের পরিমাণ জমা দিতে হবে। তৃতীয় ধাপে ক্যারিয়ার বিষয়ক আরও কিছু তথ্য দিতে হয় এবং সর্বশেষে ছবি সংযুক্ত করতে হয়। যেহেতু এই তথ্য ব্যক্তির এনআইডির বিপরীতে যাচাই হবে, তাই এমন ছবি নির্বাচন করতে হবে যেন এনআইডিতে থাকা ছবি আর এই ওয়েবসাইটে সংযুক্ত করা ছবির মধ্যে মিল থাকে। আবেদন জমা দেবার ৭ দিনের মাঝে যাচাই করে ইমেইলের মাধম্যে ফলাফল জানিয়ে দেওয়া হবে। যে কেউ চাইলেই নিজেকে ফ্রিল্যান্সার দাবি করে আইডি নিতে পারবেন না। এজন্য নির্দিষ্ট কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে। এর মধ্যে সংশ্নিষ্ট ব্যক্তিকে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে, শেষ ১২ মাসে অন্তত এক হাজার ইউএস ডলার আয়, অনলাইন মার্কেটপ্লেসে কাজ করার ও ইনকামের প্রমাণ এবং সঠিক পথে আয় থাকতে হবে। এই চার শর্তের সব পূরণ করতে পারলেই তিনি ফ্রিল্যান্সার হিসেবে নিবন্ধন করতে পারবেন। ফ্রিল্যান্সারের আয়ের তথ্যটি ব্যাংক স্টেটমেন্টের মাধ্যমে ভেরিফিকেশন করা হবে। আয় এক হাজার ডলার বলা হলে ব্যাংক বা আয়ের কোনো মাধ্যমে সেই ডলারের হিসাব না থাকলে আবেদন বাতিল হয়ে যাবে। তাই কোনোভাবেই ভুল তথ্য দেওয়া যাবে না। ফ্রিল্যান্সার নিবন্ধন ফি এক হাজার ৫০০ টাকা, যা কার্ড বা এমএফএসে পরিশোধ করা যাবে। নিবন্ধনটি বাতিল হলে সেই টাকা আর ফেরত হবে। প্রতি ১২ মাসে একবার তথ্য হালনাগাদ করতে হবে এবং হালনাগাদ ফি প্রতি বছরের জন্য ১৫০০ টাকা। অনেকে আবার মার্কেটপ্লেসে কাজ করেন না। তবে ফ্রিল্যান্সার সে ক্ষেত্রে অবশ্যই বিদেশে থাকা ক্লায়েন্ট কত টাকা কীভাবে পাঠিয়েছে, তার স্টেটমেন্ট দিতে হবে। সব তথ্য ঠিক থাকলে সাত কর্মদিবসের মধ্যেই ভার্চুয়াল কার্ড ইস্যু হবে। তথ্য নিশ্চিত করতে আবেদনকারী ফ্রিল্যান্সারের সঙ্গে ভিডিও কল বা অন্য যে কোনো মাধ্যমে যোগাযোগ করা হতে পারে। উপার্জনের প্রমাণ হিসেবে যে কোনো কাগজ বা ব্যাংক স্টেটমেন্ট চাওয়া হতে পারে। যদি কেউ মার্কেটপ্লেস বা সরাসরি ক্লায়েন্টের সঙ্গে কাজ না করে থাকেন, লোকালি কারও অধীনে কাজ করেন তারাও নিবন্ধন করতে পারবেন; সে ক্ষেত্রে তারা ফ্রিল্যান্সারের টিম মেম্বার হিসেবে নিবন্ধন করতে পারবেন।
সুবিধা ব্যাংক থেকে ক্রেডিট কার্ড নিতে, পাসপোর্ট-ভিসা ও সরকারি সব খাতে আবেদন করতে এখন সরকার নিবন্ধিত ফ্রিল্যান্সার আইডি থাকলেই চলবে। এ ছাড়া ভবিষ্যতে আইটি খাতে সরকার প্রদত্ত ১০% ক্যাশ প্রণোদনা পেতে এই আইডি হয়ে উঠবে গুরুত্বপূর্ণ একটি হাতিয়ার। খুব শীঘ্রই freelancers.gov.bd ওয়েব পোর্টাল এবং অ্যাপে ফ্রিলান্সারদের জন্য আরো কিছু হেল্পফুল ফিচার যুক্ত করা হবে। এই ফিচারগুলির মধ্যে রয়েছে – টিউটোরিয়াল হাব, মেন্টর মার্কেটপ্লেস, ফ্রিল্যান্সার ইভেন্টস, ফ্রিল্যান্সার্স ব্যাংকিং, ফ্রিল্যান্সার্স ওয়েলফেয়ার, কমিউনিটি ইত্যাদি। ফ্রিলান্সারদের ব্যাক্তিগত সুবিধার পাশাপাশি ফ্রিলান্সার আইডি কার্ড সরকারের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য তথ্যের উৎস হিসাবে বিবেচিত হবে। বর্তমানে সমগ্রিকভাবে ফ্রিলান্সারদের আয়ের ব্যাপারে কমবেশি তথ্য জানা থাকলেও সরকারি বা বেসরকারি কোন পর্যায়ে দেশব্যাপী ফ্রিলান্সিং পেশার বাস্তব চিত্র ও বিস্তারিত তথ্য জানা নেই। এই কারণে দেশব্যাপী নতুন ফ্রিলান্সার গড়ে তোলা ও তাদেরকে সফলতার গন্তব্যে পৌছে দেবার পরিকল্পনার কাজ ব্যাহত হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে ফ্রিলান্সার আইডি কার্ডের মাধ্যমে দেশের ফ্রিলান্সারদের বাস্তব চিত্র ফুটে উঠবে।