মজার ব্যাপার হল স্পেস এক্স spaceX এর এটাই সেই প্রথম রকেট (falcon heavy Block 5 ) যা দিয়ে নাসা মহাকাশচারীদের পৃথিবীর বাহীরে পাঠাবে । সেহেতু এটা আমেরিকানদের জন্যও গর্বের বিষয়। এইসব রকেট (falcon heavy Block 5 ) এক সময় চন্দ্র অভিযানেও যাবে তারপর আরও দূরে, কিন্তু কাকতালীয় ভাবে আমারাই প্রথম কাস্টমার, spaceX এর আগের গুলো ছিল এক্সপেরিমেন্টাল রকেট। । ইউটিউব এ দুনিয়া জুড়ে এক নাম্বার trending হয়ে ছিল ১২ মে এ রকেট।
ফ্যালকন-৯ ব্লক ৫ রকেট। এ রকেটে করেই মহাকাশে গেছে ।
স্পেসএক্সের প্রধান নির্বাহী এলন মাস্ক বলেন, একই রকেট ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পুনর্ব্যবহার বেশ কঠিন। আগামী বছর এ বাধা দূর হতে পারে। প্রতিষ্ঠানটির তৈরি সর্বশেষ ও চূড়ান্ত সংস্করণটি ১০ বারের বেশি মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা যেতে পারে। এমনকি তা ১০০ বার পর্যন্ত পাঠানো হতে পারে।
ফ্যালকন-৯ রকেটের নতুন সংস্করণের প্রথম সফল উৎক্ষেপণ এটি। এটিকে ফ্যালকন-৯ ব্লক ৫ রকেট বলা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান নাসার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে এটি উৎক্ষেপণ করা হয়।
রকেটটির নতুন বুস্টার সফলভাবে পৃথিবীতে ফিরে আসে এবং তা নেমে আসে আটলান্টিকে ভাসমান ড্রোন শিপে। এ বুস্টার এখন কয়েক মাস ধরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাবে স্পেসএক্স। এরপর তা আবার ওড়ানোর কাজে লাগানো হবে। মাস্কের লক্ষ্য হচ্ছে রকেট দুবার ওড়ানোর আগে যাতে রক্ষণাবেক্ষণ সময় কম লাগে, তা ঠিকঠাক করা। অর্থাৎ উড়োজাহাজের মতোই রকেট একাধিকবার ব্যবহার করা হলে খরচ কম হবে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার শেষ মুহূর্তে রকেট উৎক্ষেপণ বন্ধ হলে মাস্ক বলেছিলেন, ‘এটা সত্যিকার অর্থে কঠিন কাজ। আমাদের প্রায় ১৬ বছরের অক্লান্ত পরিশ্রম, ছোটখাটো অনেক উন্নতি, নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। আমাদের এখনো এটি নিয়ে পরীক্ষা চালাতে হবে। যাতে মনে হয়, আমরা এখনো এটি করতে পারিনি। কিন্তু এটা করা সম্ভব।’
রকেটের নতুন মডেলটি তৈরি করতে স্পেসএক্স এর ইঞ্জিনের পারফরম্যান্স বাড়িয়েছে, রকেটের বিভিন্ন অংশ মজবুত করেছে। এ ছাড়া এর ল্যান্ডিং গিয়ারকে করেছে উন্নত।
মাস্ক চান রকেটের শুধু প্রথম স্টেজ নয়, এ ধরনের রকেট ব্যবহারের পর তার পুরোটা যেন আবার কাজে লাগানো যায়। খরচের প্রায় ৬০ শতাংশ সেখানেই ব্যয় হয়।
বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট বহনকারী রকেটটির ২টি স্টেজ রয়েছে। উৎক্ষেপণের দেড় মিনিটের মাথায় বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটটিকে বহনকারী রকেট ফ্যালকন-৯ ম্যাক্স কিউ অতিক্রম করে। নির্দিষ্ট উচ্চতায় পৌঁছে রকেটের স্টেজ-১ খুলে যায়। কাজ শুরু করে স্টেজ-২। এরপর সফলভাবে পৃথিবীতে ফিরে আসে স্টেজ-১ এবং নেমে আসে আটলান্টিকে ভাসমান ড্রোন শিপে। ফ্যালকন-৯-এর স্টেজ-২ ২টা ৪৭ মিনিটে পৌঁছে যায় জিওস্টেশনারি ট্রান্সফার অরবিটে। মহাশূন্যে ভাসতে থাকে বাংলাদেশের প্রথম যোগাযোগ স্যাটেলাইট। এরপর বঙ্গবন্ধু-১-এর নিয়ন্ত্রণ নেয় যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি ও দক্ষিণ কোরিয়ার তিনটি গ্রাউন্ড স্টেশন। মহাকাশের ১১৯.১ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে নিজস্ব অরবিটাল স্লটে জায়গা করে নিতে ৩৬ হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হবে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটকে।
মাস্ক বলেন, ‘পরীক্ষা না চালানো এমন কোনো রকেটে কি আপনারা কি উঠতে চাইবেন?’ তাই ফ্যালকন-৯ রকেটের ৩০টি পরীক্ষামূলক ফ্লাইট পরিচালনা করতে চান তিনি। এরপরই নামবেন বিশাল আকারের মনুষ্যবাহী রকেট তৈরির দিকে। ইতিমধ্যে ‘বিএফআর’ নামে এ ধরনের রকেট তৈরি নিয়ে কাজ শুরু করেছে তাঁর প্রতিষ্ঠান।
এদিকে এবিসি নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ সফল হওয়ায় পুরো বাংলাদেশ রোমাঞ্চিত। দেশে ইন্টারনেট সম্প্রসারণ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো অবস্থায় জরুরি সেবা দিতে এটি কাজে লাগানো হবে।
যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন একে ঐতিহাসিক মুহূর্ত ও বাংলাদেশের মানুষের জন্য গর্বের বিষয় বলে মন্তব্য করেছেন।
বিজনেস ইনসাইডার ফ্যালকন-৯ রকেট সম্পর্কে জানিয়েছে, ২০১০ সালে এ মডেলের রকেটের উদ্বোধনের পর এখন পর্যন্ত ৫৬টি মিশন পরিচালনা করেছে স্পেসএক্স। এর মধ্যে এ বছরে ফ্যালকন-৯ ব্যবহার করে আটটি ফ্লাইট পরিচালিত হয়েছে। মাস্ক তাই এ রকেটকে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য রকেট বলেই বর্ণনা করেন।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ মিশন সফল হওয়ার রোমাঞ্চিত মহাকাশ গবেষণা সংস্থা স্পেসএক্সের কর্মকর্তারাও। তাদের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে গতকাল শুক্রবার উৎক্ষেপণ করা হয় স্যাটেলাইটটি। উৎক্ষেপণ করার ৩৩ মিনিট পর সেটি জিওস্টেশনারি ট্রান্সফার অরবিটে পৌঁছানো সম্ভব হয়।
এ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের জন্য প্রথমবারের মতো ফ্যালকন-৯ ব্লক ৫ রকেট ব্যবহার করা হয়েছে। এ মডেলের রকেটের চূড়ান্ত ও হালনাগাদ সংস্করণ ছিল এটি। এ রকেট এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যাতে কম রক্ষণাবেক্ষণ করেই ১০ বা তার বেশিবার ব্যবহার করা যাবে।
রকেট উৎক্ষেপণের স্টেজ ছিল দুটি। নির্দিষ্ট উচ্চতায় পৌঁছে রকেটের স্টেজ-১ খুলে যায়। কাজ শুরু করে স্টেজ-২। এরপর সফলভাবে পৃথিবীতে ফিরে আসে স্টেজ-১ এবং নেমে আসে আটলান্টিকে ভাসমান ড্রোন শিপে। ফ্যালকন-৯-এর স্টেজ-২ পৌঁছে যায় জিওস্টেশনারি ট্রান্সফার অরবিটে। মহাশূন্যে ভাসতে থাকে বাংলাদেশের প্রথম যোগাযোগ স্যাটেলাইট। এরপর বঙ্গবন্ধু-১-এর নিয়ন্ত্রণ নেয় যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি ও দক্ষিণ কোরিয়ার তিনটি গ্রাউন্ড স্টেশন। মহাকাশের ১১৯.১
এ মিশনের গুরুত্ব সম্পর্কে এক বিবৃতিতে স্পেসএক্স বলেছে, বাংলাদেশের প্রথম জিওস্টেশনারি স্যাটেলাইটটি ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট লঞ্চিং প্রজেক্ট’ নামে উন্নয়ন করা হয়। বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনের (বিটিআরসি) তত্ত্বাবধানে স্পেস পার্টনারশিপ ইন্টারন্যাশনাল (এসপিআই) এতে কারিগরি সহায়তা দেয়। স্যাটেলাইটে ২৫ কু-ব্যান্ড ও ১৪ সি-ব্যান্ড ট্রান্সপন্ডার রয়েছে, যা তৈরি করেছে থ্যালেস অ্যালিনা স্পেস। এটি তৈরি হয়েছে স্পেসবাস ৪০০০ বি ২ প্ল্যাটফর্মে, যা বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিসিএসসিএল) পরিচালনা করবে।
বাংলাদেশ ও আশপাশের এলাকায় সেবা দিতে পারবে এ স্যাটেলাইট। বাংলাদেশ ও বঙ্গোপসাগরের জলসীমা এর কু-ব্যান্ডের অধীনে থাকবে। এর সঙ্গে ভারত, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, ফিলিপাইন ও ইন্দোনেশিয়ায় সেবা দিতে পারবে। এ ছাড়া ডিটিএইচ সেবা, ভিডিও ও ভিস্যাট সেবা দিতে পারবে দেশজুড়ে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট সংযোগ দিতে সক্ষম হবে। কমপক্ষে ১৫ বছর এ মিশন অব্যাহত থাকবে।