১৯৯৮ সালের বন্যার পরে বিশেষজ্ঞরা এই বছরের বন্যাকে সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী বন্যা হিসেবে বিবেচনা করছেন যা ৩৩টি জেলা এবং ৫৫ লক্ষ মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। আর এই বছরের বন্যার সাথে সাথে করোনাভাইরাসের প্রকোপ মানুষের দুর্দশাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। ফলে লক্ষ লক্ষ মানুষ এখন দারিদ্রতার শিকার। দুর্যোগে সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠানগুলো যেন বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ, ত্রাণদাতা ও স্বেচ্ছাসেবীদের কাছে পৌঁছাতে সক্ষম হয় তা নিশ্চিত করার জন্য ফেসবুক ব্র্যাক এবং বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি (বিডিআরসিএস)-কে ডিজিটাল সহায়তা দিয়ে প্রস্তুত রাখতে একটি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে যাতে করে দুর্যোগ কবলিত মানুষকে সহায়তা করার জন্য ফেসবুকের টুলস ও প্রোডাক্টগুলো সঠিকভাবে ব্যবহার করা যায়। ফেসবুক বিডিআরসিএস এবং ব্র্যাক দুর্যোগ কবলিত এলাকার মানুষের কাছে পৌঁছানোর জন্য যে ব্যবস্থাপনা ও প্রস্তুতি গ্রহণ করে তা প্রচার করতেও সহায়তা করেছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রনালয়ের সচিব মো: মহসিন বলেছেন, “ডিজিটাল বাংলাদেশের লক্ষ্য পূরণে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি মোকাবেলায় ইতোমধ্যেই বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ফেসবুকের মতো একটি বিশ্বমানের সংস্থা যখন বাংলাদেশের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ মানুষদের সহায়তায় এগিয়ে আসে তখন বেশিসংখ্যক মানুষকে নিযুক্ত করা আমাদের জন্য আরও সহজ হবে। বাংলাদেশে দুর্যোগ মোকাবেলায় ফেসবুক, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি এবং ব্র্যাক-এর এই উদ্যোগকে আমি সাধুবাদ জানাই।” ব্র্যাক হিউম্যানিটারিয়ান প্রোগ্রামের পরিচালক সাজেদুল হাসান ব্র্যাকের সাথে অংশীদারিত্বের জন্য ফেসবুককে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “বন্যা-পরবর্তী কার্যক্রম যেমন- কাজের অভাব, বিশুদ্ধ পানির অভাব, মহামারীর প্রকোপ ইত্যাদি বন্যা চলাকালীন কার্যক্রমের মতোই চ্যালেঞ্জিং। দুর্যোগ মোকাবেলা কার্যক্রমে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়াতে আমাদের সহায়তা করার জন্য ফেসবুককে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।” দেশের বিভিন্ন এলাকা বন্যা কবলিত হওয়ার পর পরই সরকার এবং অন্যান্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সমন্বয়ে ব্র্যাক নিজস্ব তহবিলের মাধ্যমে জরুরি সহায়তা প্রদান শুরু করে। এই কার্যক্রমের মাধ্যমে ব্র্যাক সতর্ক বার্তা ছড়িয়ে দেয়া এবং করোনা প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি শুকনো খাবার ও স্যালাইন বিতরণ করে। এছাড়াও লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ এই সাতটি জেলার ৫০,০০০ পরিবারকে ২০০০ টাকা করে নগদ সহায়তাও প্রদান করেছে সংস্থাটি। বন্যার শুরু হওয়ার পর থেকেই বিডিআরসিএস ৩৬টি জেলায় এক হাজারেরও বেশি স্বেচ্ছাসেবক পাঠিয়ে ৫ লক্ষ ৬০ হাজারেরও বেশি পরিবারকে পান করার জন্য পানি, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার প্রয়োজনীয় সামগ্রী, খাদ্য এবং নগদ অর্থ সহযোগিতা প্রদান করেছে। বিডিআরসিএসের স্বেচ্ছাসেবকরা জেলা প্রশাসনের সাথে যুক্ত হয়ে বন্যার সময় ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের জীবন বাঁচাতে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়েও সাহায্য করেছেন। দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা (ডিআরএম)-এর পরিচালক মোঃ বেলাল হোসেন বলেন, “সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া বন্যায় অনেক মানুষই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুর্যোগের শুরু থেকেই বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে শুধুমাত্র বিভিন্ন সতর্কতামূলক বার্তা দিয়েই নয় বরং ক্ষয়ক্ষতি কমানোর লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছি। বন্যা পরবর্তী সময়ে আমাদের লক্ষ্য ছিল ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পুনর্বাসন, স্যানিটেশন ও স্বাস্থবিধি মেনে চলার সামগ্রী পৌঁছে দেয়া, প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা এবং উপার্জনের ব্যবস্থা করে দেয়া। ফেসবুকের সাথে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে আমরা ক্ষতিগ্রস্থ জনগণের জন্য প্রয়োজনীয় ও প্রাসঙ্গিক তথ্য সরবরাহ করতে পেরেছি। এই বছরের বন্যাতে আমাদের কার্যক্রমের একটি রেকর্ড রাখার পাশাপাশি পরবর্তী দুর্যোগ মোকাবেলায় ফেসবুক প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের মাধ্যমে উপযুক্ত জ্ঞান কাজে লাগিয়ে যাতে আরও ভালোভাবে প্রস্তুত থাকতে পারি সেই প্রত্যাশাই করছি।” ফেসবুক হলো স্বেচ্ছাসেবক এবং ত্রাণদাতাদের একটি বৃহত্তম প্ল্যাটফর্ম যা পৃথিবীকে আরও সুন্দর করে তুলতে সহায়তা করে আসছে। ফেসবুকের ক্রাইসিস রেসপন্স টুলটি দুর্যোগ কবলিত এলাকার মানুষকে পুনর্বাসন, খাদ্য, পানি, পরিবহন ও স্বেচ্ছাসেবীমূলক কার্যক্রম সংক্রান্ত সহযোগিতা পৌঁছে দিতে সাহায্য করে। এছাড়াও এই বছরের শুরুর দিকে করোনাভাইরাসের প্রকোপ থেকে বাংলাদেশের মানুষকে সুরক্ষিত এবং সতর্ক রাখতে কোভিড-১৯ ইনফরমেশন সেন্টার এর মতো বিভিন্ন প্রোডাক্ট, টুলস ও ফিচার এনেছে। ফেসবুকের দক্ষিণ এশিয়ার পাবলিক পলিসি ডিরেক্টর, অশ্বানী রানা বলেন, “সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ ও পরিবারগুলোর প্রতি আমরা সহানুভূতিশীল | দুর্যোগের সময় মানুষ তাদের প্রিয়জনদের খোঁজ নিতে ফেসবুক ব্যবহার করেন। অনেকেই দুর্যোগ কবলিত এলাকার মানুষদের সাহায্য করতেও ফেসবুক ব্যবহার করেন। বাংলাদেশের বন্যা কবলিত পরিবারদের পাশে দাঁড়াতে এবং তাদের চাহিদাগুলো আরও ভালোভাবে পূরণ করতে ব্র্যাক এবং বিডিআরসিএস-এর মতো সংস্থাগুলোর পাশে দাঁড়ানো আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। আমরা বাংলাদেশকে আমাদের সমর্থন জোরদার করতে স্থানীয় অংশীদারদের সাথে নিবিড়ভাবে কাজ চালিয়ে যাব।” ব্র্যাক এবং বিডিআরসিএসের জরুরি ত্রাণ তহবিলে সাহায্য করতে ক্লিক করুন: • ব্র্যাক: https://www.brac.net/flood2020/#donate-options • বিডিআরসিএস: http://www.bdrcs.org/donate
ব্র্যাক সম্পর্কিত ব্র্যাক একটি আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা যা দারিদ্র্য, সামাজিক শোষণ এবং বিভিন্ন মানবিক বিপর্যয় রুখতে বহুমাত্রিক সমাধান দিতে ও সেগুলোর সুষ্ঠ প্রয়োগে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। স্যার ফজলে হাসান আবেদ কেসিএমজি ১৯৭২ সালে উত্তর-পূর্ব বাংলাদেশে একটি ছোট ত্রাণ ও পুনর্বাসন প্রকল্প হিসেবে ব্র্যাক প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বিগত ৪৮ বছরে ব্র্যাক বিশ্বের অন্যতম কার্যকর উন্নয়ন সংস্থা হিসেবে গড়ে উঠেছে, যা দুর্গম এলাকার দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী প্রান্তিক মানুষকে বাস্তবিক ও প্রাসঙ্গিক সমাধান প্রদান করে আসছে এবং বিভিন্ন বিপর্যয়ে দুর্যোগ পরবর্তী কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ব্র্যাক বর্তমানে এশিয়া ও আফ্রিকার ১১ টি দেশের ১০০ কোটিরও বেশি মানুষকে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেয়ার মাধ্যমে তাদের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ব্র্যাক টেকসই তহবিলকে অগ্রাধিকার দেয় এবং মূলত বাংলাদেশে নিজস্ব তহবিলের মাধ্যমে বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মসূচী, ক্ষুদ্র ঋণ, সামাজিক উদ্যোগ, একটি বিশ্ববিদ্যালয়, ব্যাংক এবং বিভিন্ন প্রকল্পে বিনিয়োগ করছে। বিশ্বের এক নম্বর বেসরকারি সংস্থা হিসেবে ব্র্যাক টানা পঞ্চমবারের মতো ২০২০ সালে জেনেভা ভিত্তিক ইনডিপেন্ডেন্ট মিডিয়া সংস্থার এনজিও অ্যাডভাইসর অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে। বিডিআরসিএস সম্পর্কিত বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের সহায়ক হিসাবে বাংলাদেশ রেডক্রস সোসাইটি (বিডিআরসিএস) ১৯৭৩ সালের ৩১ শে মার্চ রাষ্ট্রপতির ১৯৭৩ পিও-১৬ জারির মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশে কার্যক্রম শুরু করে। দেশের বৃহত্তম দাতব্য সংস্থা হওয়ায় বিডিআরসিএস বিভিন্ন মানবিক বিপর্যয়ে আর্তমানবতার সেবা প্রদান করে থাকে এবং মানুষকে তাদের জীবন বাঁচাতে ও পুনর্নির্মাণে সহায়তা করে। বিডিআরসিএসের সারাদেশে পাঁচ লক্ষেরও বেশি স্বেচ্ছাসেবক এবং বিশ্বব্যাপী আজীবন সদস্যপদপ্রাপ্তদের একটি সুবিশাল নেটওয়ার্ক রয়েছে যারা মানবতার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। ফেসবুক সম্পর্কিত ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত ফেসবুকের লক্ষ্য হলো মানুষকে সংযুক্ত করে পুরো বিশ্বকে এক করা। বিশ্বজুড়ে মানুষ ফেসবুককে বন্ধুদের ও পরিবারের সাথে সংযুক্ত থাকতে, বিশ্বে চলমান ঘটনা সম্পর্কে জানতে এবং তাদের কাছে যা গুরুত্বপূর্ণ এবং তা শেয়ার ও প্রকাশ করার একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করে।