দেশে স্মার্টেফান ব্যবহারকারী বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বড় হচ্ছে অ্যাপের বাজার। ফোরজির বিস্তার আর সাশ্রয়ী দামে স্মার্টফোন পাওয়ায় অ্যাপের বাজার আরও বেড়ে যাবে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের জানুয়ারিতে দেশে মোট স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ২ কোটি ৭৫ লক্ষ। ২০২০ সালে বাংলাদেশে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৫ কোটি দাঁড়াতে পারে। বিশ্বের মোবাইল অপরেটরদের সংগঠন গ্লোবাল সিস্টেম ফর মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের (জিএসএম) এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২০ সালে বাংলাদেশে স্মার্টফোন ব্যবহারকারী হবে ৬০ শতাংশ। ফলে ২০ সালে স্মার্টফোনের ব্যবহার বৃদ্ধিতে শীর্ষ ১০টি দেশের মধ্যে ৭ নম্বরে উঠবে বাংলাদেশ।
- ২০১৭ সালে দেশে অ্যাপের বাজার ছিল ৫০০ কোটি টাকার
- ২০১৮ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮০০ থেকে এক হাজার কোটি টাকা
বিটিআরসির তথ্য অনুযায়ী, দেশে মোবাইল ব্যবহারকারী বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশে মোবাইল সংযোগকারীর সংখ্যা গত মে মাস পর্যন্ত ১৫ কোটি ৭ লাখ ২০ হাজার। মার্চ মাস শেষে গ্রাহক সংখ্যা ছিল ১৫ কোটি ৩ লাখ ৩০ হাজার। এমন তথ্য জানায়, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)।
বিটিআরসির পরিসংখ্যান অনুযায়ী মে মাসের শেষে দেশের সবচেয়ে বড় অপারেটর গ্রামীণ ফোনের গ্রাহক সংখ্যা ৬ কোটি ৮৬ লাখ ৯০ হাজার। বাংলালিংকের ৩ কোটি ৩৩ লাখ ৪০ হাজার। রবির ৪ কোটি ৫০ লাখ ২০ হাজার। রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল অপারেটর টেলিটকের গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৭ লাখ ৫০ হাজার।
স্মার্টফোনের ব্যবহার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশে বাড়ছে অ্যাপ্লিকেশন বা অ্যাপসের ব্যবহার। চাহিদা থাকায় অনেক দেশীয় প্রতিষ্ঠান এখন মুঠোফোন অ্যাপসের উন্নয়ন ও বাজারজাত করছে। গত বছরের নভেম্বরে সুখবর দেয় গুগল। এখন থেকে ডেভেলপাররা বাংলাদেশ থেকে এ টেক জায়ান্টের অ্যাপ্লিকেশন বাজার ‘গুগল প্লে’তে অ্যাপ বিক্রি করতে পারেন। গুগলের সাপোর্ট সেন্টারে ‘লোকেশনস ফর ডেভেলপার অ্যান্ড মার্চেন্ট রেজিস্ট্রেশন’ বিভাগে বাংলাদেশের নাম যুক্ত করা হয়।
স্মার্টফোনে কমপক্ষে তিন ক্লিকে নানা ধরনের তথ্যসেবা পেতে যে সফটওয়্যার ব্যবহৃত হয়, তাকেই অ্যাপস বা অ্যাপ্লিকেশন বলে। কিছু অ্যাপস স্মার্টফোনে আগে থেকেই প্রবেশ করানো থাকে, যেগুলো বিনা মূল্যে ব্যবহার করা যায়। আর কিছু অ্যাপস অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনে গুগলের প্লে স্টোর, অ্যাপলের আইফোনের জন্য অ্যাপ স্টোর থেকে ডাউনলোড করে ব্যবহার করতে হয়।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) হিসাব অনুযায়ী, তাদের অন্তর্ভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে প্রায় ১০০ টিরও বেশি প্রতিষ্ঠান এখন শুধু অ্যাপস তৈরির কাজ করছে। এ ছাড়া আরও অনেক সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান আছে, যাদের মুঠোফোন অ্যাপসভিত্তিক সফটওয়্যার তৈরির ক্ষমতা রয়েছে। এর বাইরে ব্যক্তি পর্যায়ে অনেকেই ফ্রিল্যান্সার হিসেবে অ্যাপস তৈরি করছেন।
সব মিলিয়ে ২০১৭ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশে এখন কমপক্ষে ৫০০ কোটি টাকার অ্যাপ বাজার দাঁড়ায়।
তথ্যপ্রযুক্তির উন্নতি, গুগল প্লেস্টোরে অ্যাপ বিক্রি সুবিধা ও বিভিন্ন উদ্যোগে অ্যাপ তৈরির প্রশিক্ষণ বাংলাদেশে অ্যাপ বাজারে বড় প্রভাব ফেলছে।
বাংলাদেশেও অ্যাপের বাজার ক্রমেই বাড়ছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হিসাব বলছে, বর্তমানে দেশের অ্যাপ মার্কেটের পরিমাণ বর্তমানে ৮০০ থেকে ১ হাজার কোটি টাকা। দেশে একদিকে অ্যাপ ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ছে, অন্যদিকে বাড়ছে নির্মাতার সংখ্যাও। বাংলাদেশ থেকে এখন সরাসরি অ্যাপ স্টোরে অ্যাপ সরবরাহ করা যায়। এতে নির্মাতারা বেশ আগ্রহী হচ্ছেন। ফলে অ্যাপের বাজার আরও বড় হচ্ছে।
স্টাটিসটার তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮সালের জুন মাস পর্যন্ত প্লেস্টোরে ৩৩ লাখ অ্যাপ রয়েছে। অন্যদিকে অ্যাপলের অ্যাপ স্টোর রয়েছে প্রায় ২৪ লাখ অ্যাপ। অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপগুলোর মধ্যে বিশ্বে জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছে টুলস, কমিউনিকেশন, ভিডিও প্লেয়ার্স অ্যান্ড এডিট, ভ্রমণ ও স্থানীয় বিভিন্ন অ্যাপ। অন্যদিকে আইওএসের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে ইউটিলিটিস, সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং, ছবি, ভিডিও ও গেমভিত্তিক অ্যাপ। অ্যাপ নিয়ে কাজ করা গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠান অ্যাপ এনি বলছে, ২০২১ সালে বৈশ্বিক অ্যাপ মার্কেটের মূল্য দাঁড়াবে ৬ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলার। যা ২০১৬ সালে ছিল ১ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন। অর্থাৎ পাঁচ বছরে বৈশ্বিক অ্যাপ মার্কেটের আকার বাড়বে ৩৮০ শতাংশ।
বিশ্বজুড়ে অ্যাপের বাজার ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার কারণ সম্পর্কে অ্যাপ এনি জানায়, বিশ্বে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ছে। মানুষ এখন অ্যাপে অনেক বেশি সময় দিচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির গবেষণা বলছে, ব্যবহারকারীরা ২০১৬ সালে অ্যাপে সময় ব্যয় করেছেন ১ দশমিক ৬ ট্রিলিয়ন ঘণ্টা। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২১ সালে এটা ৩ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন ঘণ্টায় পৌঁছাবে।
অ্যাপের এই বিপ্লব ঘটার কারণ হলো, মানুষ খুব সহজেই অ্যাপ ব্যবহার করে কাজ করতে পারছে। যেসব সেবা আগে নিজে উপস্থিত থেকে নিতে হতো, সেগুলো এখন ঘরে বসেই নেওয়া সম্ভব হচ্ছে। এতে একদিকে অর্থ ও সময় বেঁচে যাচ্ছে, অন্যদিকে কমছে বাড়তি জটিলতাও। ফলে অ্যাপের প্রতি ঝুঁকছে মানুষ।
অ্যাপ এনির হিসাব বলছে, অ্যাপ ডাউনলোডের দিক থেকে শীর্ষস্থানে রয়েছে চীন। দীর্ঘদিন ধরে এ স্থান দখল করে রেখেছে দেশটি। তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ভারত। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রকে পেছনে ফেলে দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে তারা। তিনে অবস্থান করছে যুক্তরাষ্ট্র।
বিশেষজ্ঞরা জানান, দেশে ভালো অ্যাপস ও গেম ডেভেলপার থাকলেও বিশ্বব্যাপী গেমের বাজারে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ খুবই কম। দীর্ঘমেয়াদী ও কৌশলগত পরিকল্পনা, অ্যাপস ও গেমসের বিপণন এবং সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এ খাতে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।