৩৩ বছর ধরে বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস) তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে। ব্রিটিশ এবং পাকিস্তান শাসনের পর বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ হিসেবে পৃথিবীতে সমাদৃত ছিল। কৃষিপ্রধান দেশকে প্রযুক্তিতে এগিয়ে নেয়ার জন্য যাদের অবদান রয়েছে, তাদের আমি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। ছোট পরিসরে আমরা প্রযুক্তি নিয়ে কাজ শুরু করে আজ আমরা দেশকে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ এ রূপান্তর করতে পেরেছি। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে নিজেদের সক্ষমতা প্রকাশ করতে আমাদের সরকার বরাবরের মতোই কার্যকর ভূমিকা পালন করছে। ২০০৮ সালে বাংলাদেশই প্রথম ‘ডিজিটাল’ শব্দটি ব্যবহার করেছে। আমাদের ছেলেরাই বিশ্ব প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় স্বর্ণ জিতেছে।
১৪ জুলাই (মঙ্গলবার) রাতে বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস) আয়োজিত ‘ডিজিটাল ট্রান্সফর্মেশন অ্যান্ড ইমপ্লিমেন্টেশন অব ব্লকচেইন’ শীর্ষক ওয়েবিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার।
তিনি আরো বলেন, দক্ষ এবং অভিজ্ঞ নেতৃত্বে ব্লকচেইনেও আমরা সফলতা পাবো এবং দৃঢ়ভাবে এগিয়ে যাবো। অনুকরণ নয়, জনগণের প্রয়োজনেই দেশে ব্লকচেইন, আইওটি অথবা আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্স এবং রোবটিকসের মতো অন্যান্য আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে । তবে জনঘনত্বের বিবেচনায় চালকহীন গাড়ি এবং রোবট ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করা হবে। প্রযুক্তিতে নিজেদের সমৃদ্ধি এবং প্রাত্যহিক জীবনে প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে পারলে অধিক জনসংখ্যার এই দেশ একদিন পৃথিবীর ধনী দেশগুলোর মধ্যে অন্তভূর্ক্ত হবে।
ডিজিটাল বাংলাদেশের অগ্রগতির কথা উল্লেখ করে টেলিকম মন্ত্রী বলেন, আমি এখন যে চেয়ারটিতে বসে আছি, গত তিনমাস ধরে এখানে বসেই আমি আমার মন্ত্রণালয়ের সব কাজ করেছি। এখনো পর্যন্ত আমার দপ্তরের কোন ফাইল পেন্ডিং নেই। এটাই কৃষিপ্রধান দেশ থেকে ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিণত হওয়ার সুফল। স্বশরীরে এর আগে আমি যতো মিটিং এ অংশগ্রহণ করেছি এই সংকটময় সময়ে তারচেয়ে তিনগুণ মিটিং এ আমি অংশগ্রহণ করতে পেরেছি। কপি পেস্ট নয় বরং আমরা আমাদের মেধার স্বদব্যবহার করে দেশের এই সিস্টেমকে দিনকে দিন উন্নত করতে পেরেছি। দেশের প্রত্যন্থ অঞ্চলে বসবাসকারী একজন কৃষকও আজ মোবাইল ব্যাংকির সেবার আওতায় অন্তভূর্ক্ত।
ওয়েবিনারের বিশেষ অতিথি ছিলেন ওয়ার্ল্ড ইনফরমেশন অন টেকনোলজি অ্যান্ড সার্ভিসেস অ্যালায়েন্সের (উইটসা) মহাসচিব জেমস পয়সান্ট। তিনি ব্লকচেইন প্রসঙ্গে বাংলাদেশের অগ্রগতির ভূয়সী প্রশংসা করেন। ব্লকচেইনের উপর সেমিনার আয়োজন করার জন্য তিনি বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতিকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
ওয়েবিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিসিএস সভাপতি মো. শাহিদ-উল-মুনীর। তিনি বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে প্রযুক্তি মানুষকে প্রতিদিন জীবন বদলে দেয়ার চ্যালেঞ্জ দিচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তির এখন কোন নির্দিষ্ট ক্ষেত্র নেই। আমাদের প্রতিটি কাজেই আমরা প্রযুক্তির সহায়তা নিচ্ছি। স্মার্টফোনে রয়েছে এখন মিলিয়নের বেশি অ্যাপস। মুঠোফোনেই বাসা বা অফিসের কঠিন কাজগুলো সমাধান হচ্ছে। আইওটি, বিগ ডাটা, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই), ব্লকচেইন এবং ক্লাউড কম্পিউটটিংয়ের মতো প্রযুক্তিগুলো ই-কমার্স থেকে শুরু করে বৈশ্বিক অর্থনীতিতেও ভূমিকা রাখছে। শিক্ষা, সংস্কৃতি, চিকিৎসা এমনকি প্রাত্যহিক জীবনেও প্রযুক্তি ছাড়া মূলত আমরা পরিপূর্ণ নই। ব্লকচেইনকে কাজে লাগিয়ে দেশকে প্রযুক্তি খাতে সমৃদ্ধ করার মোক্ষম সময় এখনি। আশা করছি এই বিষয়ের সেমিনার থেকে শ্রোতারা উপকৃত হবেন এবং আমাদের নীতি নির্ধারকরা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারবেন।
ওয়েবিনারে মডারেটর ছিলেন বিসিএস এর উপদেষ্টা শাফকাত হায়দার। তিনি বলেন, কোভিড-১৯ এর প্রভাব আমাদের জীবনকে হঠাৎ করেই বদলে দিয়েছে। এই বদলে যাওয়ার মধ্যেই যে বিষয়টির উপর আমরা অতি নির্ভরশীল হয়ে ওঠেছি সেটা প্রযুক্তি। সুসংবাদের বিষয়টি হলো বাংলাদেশেও ব্লকচেইন নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। আজ যারা এখানে ব্লকচেইন নিয়ে নিজেদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করবেন তারা পৃথিবী জুড়ে ব্লকচেইন নিয়ে কাজ করছেন।’
ব্লকচেইন সম্পর্কে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ভারতের হায়দ্রাবাদ থেকে আইবিএম এর গ্লোবাল এক্সিকিউটিভ চেইন হিরন শাহ, আইবিএম হাইব্রিড ক্লাউড ইন্টিগ্রেশনের চ্যানেল অ্যান্ড অ্যালাইয়েন্স বিভাগের এশিয়া প্যাসিফিক প্রধান ম্যাট কাডাউর এবং দ্য কম্পিউটার্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আতিক-ই-রব্বানি, এফসিএ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ১৫০০ এর বেশি প্রযুক্তিপ্রেমী সেমিনারটি উপভোগ করেন।
সেমিনারে বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিল (বিপিসি) এর কো-অর্ডিনেটর ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব এ.এইচ.এম. শফিকুজ্জামান, বিসিএস মহাসচিব মুহাম্মদ মনিরুল ইসলাম এবং যুগ্ম মহাসচিব মো. মুজাহিদ আল বেরুনী সুজনসহ দেশি বিদেশি সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।