বাংলাদেশকে বিশেষ করে বাংলা ভাষাকে গুরুত্ব দিচ্ছে গুগল। তাদের ইউটিউবেও বাংলা কনটেন্ট বাড়ছে। এবার তাই বাংলাদেশে ইউটিউবের অফিস খোলার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। বাংলা ট্রিবিউনের এক খবরে বলা হয়েছে, অক্টোবরে বাংলাদেশে অফিস চালু করছে ইউটিউব । ইউটিউবের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে আসছে। তারা বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবেন।
বিশ্বের ৬১তম দেশ হিসেবে বাংলাদেশে অফিস চালু করতে যাচ্ছে ইউটিউব। ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি, ডিজিটাল বিপণনের বড় ক্ষেত্র তৈরি, বাজেট বৃদ্ধি, কনটেন্ট বৃদ্ধি, চ্যানেলের সংখ্যা বৃদ্ধি ইত্যাদিতে চোখ পড়েছে পোর্টালটির কর্তাদের। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের পরেই বাংলাদেশ অবস্থান করছে বলে মনে করছেন ইউটিউবের কর্মকর্তারা। বিভিন্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে ইউটিউব চ্যানেলে নাটক প্রচার, কিছু কিছু গান ‘কোটি ভিউ’ পাওয়ায় বাংলাদেশের বাজারটিকে ‘অমিত সম্ভাবনাময়’ বলে মনে করছে ইউটিউব।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, ‘আমরা আশা করছি, মাস দুয়েকের মধ্যে বাংলাদেশে ইউটিউবের অফিস চালু হবে। ইউটিউব মনে করছে, বাংলাদেশ তার জন্য নতুন বিজনেস হাব হবে। ইউটিউব এলে বিষয়টি (রেসপন্স পাওয়া) আমাদের জন্য সহজ হয়ে যায়।’ একটি স্যাটেলাইট চ্যানেলের কর্ণধার তাকে (মন্ত্রীকে) জানিয়েছেন, তারা সম্প্রতি ইউটিউব থেকে একটি ‘গোল্ডেন বাটন’ পেয়েছেন। এমনকি, সিএমএস–এর (কনটেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম) দায়িত্বও পেয়েছেন।
প্রসঙ্গত, কোনও চ্যানেল ১০ লাখ গ্রাহকের মাইলফলক অর্জন করলে স্বীকৃতিস্বরূপ ইউটিউবের পক্ষ থেকে (পক্ষান্তরে গুগলের পক্ষ থেকে) গোল্ডেন প্লে বাটন দেওয়া হয়। দেশের একাধিক স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলে ইউটিউবে তাদের চ্যানেলের গ্রাহকপ্রিয়তার কারণে অ্যাপ্রিসিয়েশন হিসেবে গোল্ডেন প্লে ও সিলভার প্লে বাটন পেয়েছে।
কি সুবিধা পাওয়া যাবে?
বাংলাদেশে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ফেসবুকের চেয়ে ইউটিউবের ভিউ বেশি হচ্ছে। ইউটিউব দেশে অফিস চালু করলে কনটেন্ট ফিল্টারিং, কনটেন্ট প্রত্যাহার, বিজ্ঞাপন দেওয়া ইত্যাদি বিষয়গুলো সহজ হয়ে যাবে। অন্যদিকে, যারা ব্যক্তি এবং প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগে ইউটিউবে চ্যানেল তৈরি করেছেন তারাও সরাসরি পোর্টালটির সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের আয়, চ্যানেল ব্লক করে দেওয়া ইত্যাদির বিষয়ে কথা বলতে পারবেন।
ইউটিউব থেকে প্রচুর টাকা আয়ের উপায়
আপনি কি ভালো ভিডিও করতে পারেন? এডিটিং জানেন? না জানলে আগে শিখে নিন। খুলে ফেলুন ইউটিউব চ্যানেল। চ্যানেল খুলে হাজার পাঁচেক সাবসক্রাইবার করে ফেলুন। ভালো মানের ভিডিও পোস্ট করে ভিউ বাড়ান। ভিডিও দেখার সময় বাড়ান। এরপর অ্যাপ্লাই করুন গুগলের অ্যাডসেন্সর জন্য।ইউটিউব চ্যানেল খুলে অনেকে লাখ লাখ টাকা ইনকাম করছেন। আপনি বসে থাকবেন কেন?
একজন ইউটিউবারের গল্প জানি, যিনি মফস্বলে বাস করেন।কি করবেন বুঝতে পারছিলেন না। পরে একটি ইউটিউব চ্যানেল করে তাতে ভিডিও পোস্ট করতে থাকেন। একটি ভিডিও কয়েক মিলিয়ন হিট হয়ে যায়। এরপর তাকে পায় কে? মাসে তার ও চ্যানেল থেকে লাখ টাকা আয় আসছে।
তবে, এখন ইউটিউব কর্তৃপক্ষ মানে গুগল চ্যানেলের বিষয়ে খুব কড়া। মনিটাইজ করতে গেলে অনেক কাঠখড় পোহাতে হবে। আর সাবসক্রাইবার জোগাড় করাও অনেক কঠিন কাজ। কিন্তু দিনশেষে ভালো কনটেন্ট, পরিশ্রম, ইনভেস্ট আর প্রচেষ্টা থাকলে অবশ্যই পারবেন।
এর মধ্যে, গুগল ভিডিও নির্মাতাদের আরও সুখবর দিয়েছে।বিজ্ঞাপন না দেখে ভিডিও দেখার দিন শেষ। ইউটিউব প্ল্যাটফর্মে সহজে এড়াতে পারবেন না এমন বিজ্ঞাপন চালু করতে যাচ্ছে গুগল কর্তৃপক্ষ। এতে অবশ্য ইউটিউব ভিডিও নির্মাতাদের লাভ হবে। তারা ইউটিউব চ্যানেল থেকে আরও বেশি আয় করতে পারবেন।
গুগল কি চায় এখন?
গুগল কর্তৃপক্ষ ইউটিউব চ্যানেলগুলোর জন্য বিশেষ পর্যবেক্ষণ প্রক্রিয়া চালু করেছে। এ ছাড়া যেসব চ্যানেলে ১০ হাজারের কম ভিউ রয়েছে, সেগুলোতে বিজ্ঞাপন দেখানো বন্ধ করে দিয়েছে। গুগল কর্তৃপক্ষ বলছে, আপত্তিকর ও পাইরেটেড ভিডিও প্রদর্শন করে অর্থ আয়ের সুবিধা বন্ধ করতে এ উদ্যোগ নিয়েছে তারা।
কিভাবে শুরু করবেন?
নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেল শুরু করবেন ভাবছেন? কাজটি কিন্তু মোটেও সোজা নয়৷ প্রতি পদক্ষেপেই প্রয়োজন সৃজনশীল চিন্তাভাবনার৷ ইউটিউব একটি চটজলদি উপার্জনের পথ, ভাবনাটিই ভুল৷ একটি ভাইরাল ভিডিওকে মাধ্যম করে চ্যানেলটিকে দীর্ঘদিন চালানো সম্ভব নয়৷ ভিডিয়োর নতুনত্বের উপরেই নির্ভর করবে চ্যানেলটির আয়ু৷ তাই, বেছে নিন নিত্যনতুন বিষয়৷ যা সাবসক্রাইবারের সংখ্যা বাড়তে সাহায্য করবে৷
একটি প্রচলিত ভুল ধারণা রয়েছে৷ অনেকেই ভাবেন কতজন ভিডিওটি দেখছেন সেটিই পরে ইউটিউব মানিতে পরিবর্তিত হয়ে চলেছে৷ কিন্তু, বিষয়টি সম্পূর্ণ অন্য৷ ইউটিউবে ভিডিও শুরু হওয়ার পূর্বে একটি বিজ্ঞাপন দেখা যায়৷ যেটিকে দর্শক এড়িয়ে যেতে পছন্দ করেন৷ আশ্চর্যের বিষয়, সেটিই আপনার অ্যাকাউন্টের লাভের পরিমানকে বাড়ায়৷ ভিডিওটিতে বিজ্ঞাপন যোগ করার জন্য ইউটিউব পার্টনার প্রোগামে সাইন-আপ প্রয়োজন৷ ১০০০ বেশী সাবসক্রাইবার থাকলে তবেই প্রোগামটির সঙ্গে যুক্ত হওয়া যায়৷
কীভাবে ইউটিউব চ্যানেল খুলবেন?
গুগল অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ইউটিউবে সাইন-আপ করুন৷ অ্যাকাউন্টটিকে আকর্ষণীয় করার জন্য একটি কভার ইমেজ দিন৷ আগে থেকেই বেশ কয়েকটি বিষয়কে তৈরী রাখুন৷ সঠিক বিষয়ের নির্বাচন আপনার সাসক্রাইবার বাডা়তে সাহায্য করবে৷ এর ফলে দ্রুত আপনি ইউটিউব পার্টনার প্রোগামটির সঙ্গে যুক্ত হতে পারবেন৷ সেখান থেকেই বিজ্ঞাপন পাবেন এবং সেটিই আপনার আয় বাড়াতে সাহায্য করবে৷ ইতিমধ্যেই আপনার চ্যানেলটি যদি প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়৷ তবে, আপনি যুক্ত হতে পারেন অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে৷ যদি চ্যানেলটি খাবার সংক্রান্ত হয় তবে বিভিন্ন রেস্ট্রোরেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিজ্ঞাপন নিতে পারেন৷ এক্ষেত্রে বিজ্ঞাপনের মূল্য চ্যানেলটির সাবসক্রাইাবেরর উপর নির্ভর করবে৷
ভিডিও নির্মাতাদের চ্যানেলের ভিউ যদি ১০ হাজার পার হয় তবেই চ্যানেল মানিটাইজ করার জন্য আবেদন করতে পারবে। নতুন চ্যানেল নির্মাতাদের এরপর রিভিউ প্রসেসের মধ্যে দিয়ে যেতে হবে। ইউটিউবের নিয়মনীতি মানা হয়েছে কিনা সব যাচাই বাছাই করা হবে। এ ছাড়া বিজ্ঞাপনের রেট কমে গেছে। প্রতি ব্যানার অ্যাডের ১০০০ ভিউয়ের জন্য এখন মাত্র ৮ সেন্ট করে দেয় গুগল। তবে রোল আউট অ্যাডের প্রতি ১০০০ ভিউয়ের জন্য পাঁচ থেকে ৮ ডলার পর্যন্ত পাওয়া যায়। এখনকার সত্যিকারের ইউটিউবারদের জন্য এটাই এখন সুযোগ। নিজের ভিডিও ব্লগ বা ভ্লগ তৈরি করে তাতে দর্শক টানতে পারলেই বিশাল ইনকাম।
তথ্যসূত্র: বাংলা ট্রিবিউন ও প্রথম আলো।
ইউটিউব কমিউনিটি গাইডলাইনের খুঁটিনাটি
ইউটিউব থেকে প্রচুর টাকা আয়ের উপায়