ব্যবসা বা স্টার্টআপের জন্য ফান্ড খুঁজছেন। এটা পাওয়া বাংলাদেশে সহজ নয়। তবে কিছু পথ তো আছে। এগুলো চেষ্টা করে দেখতে পারেন। এ রকম কয়েকটি ধাপ নিয়ে এ লেখা:
বুটস্ট্র্যাপিং স্টার্টআপ শুরু করতে হবে পকেটের টাকা দিয়েই। নিজের জমানো টাকা বা সঞ্চয়, যা দিয়ে প্রাথমিকভাবে ছোট করে কাজটা শুরু করা যায়। নিজের জমানো টাকা কিংবা আত্মীয় ও বন্ধুবান্ধবের থেকে নেওয়া অর্থ দিয়ে কাজ শুরু করাটাকে বুটস্ট্র্যাপিং বলা হয়।
ক্রাউড ফান্ডিং এখন অনেকে ক্রাউডফান্ডিং করে অর্থ জোগাড় করেন। আমাদের দেশে এটা কঠিন। তবে চেষ্টা করতে দোষ কি? এই প্ল্যাটফর্মে একজন উদ্যোক্তা শুরুতে তাঁর ভাবনা বা চ্যালেঞ্জগুলো একদল ব্যক্তি বা বিনিয়োগকারীর সামনে উপস্থাপন করেন। কেউ যদি আগ্রহী হন, তিনি আইডিয়াটিকে বাস্তবে রূপদান করতে টাকা দিতে পারেন। এভাবে এক বা একাধিক মানুষের দেওয়া টাকায় গড়ে ওঠে একটি ব্যবসা। বাংলাদেশে অপরাজয় ডট ওআরজি (oporajoy.org) নামে একটি ক্রাউড ফান্ডিংয়ের প্ল্যাটফর্ম আছে।
ফান্ডের খোঁজ করছেন? বাংলাদেশের সব ফান্ডের খোঁজখবর
এঞ্জেল ইনভেস্টরস বাংলাদেশে গত ৪ অক্টোবর বাংলাদেশ এঞ্জেলসের উদ্বোধন হয়েছে। উদ্যোক্তা কিংবা বিনিয়োগকারীরা ফান্ডের জন্য আবেদন করতে পারবেন এই লিংকের মাধ্যমে: www.bdangels.com
ভেঞ্চার ক্যাপিটাল বাংলাদেশে বর্তমানে ১১টির বেশি ভেঞ্চার ক্যাপিটাল প্রতিষ্ঠান নিবন্ধনসহ পুরোদমে উদ্যোগের ক্ষেত্রে অর্থায়নের কাজ করে যাচ্ছে। নতুন উদ্যোক্তাদের উচিত হবে, ব্যবসায় অর্থসংস্থানের জন্য ভেঞ্চার ক্যাপিটালের জোগান নিশ্চিত করা।
বিজনেস ইনকিউবেটর তরুণ উদ্যোক্তাদের ব্যবসাকে সফল করার জন্য বিভিন্ন ‘বিজনেস ইনকিউবেটররা’ এগিয়ে আসছে। বাংলাদেশে ব্যবসাসহায়ক প্ল্যাটফর্ম ওয়াইওয়াই গোষ্ঠী এখন ইনকিউবেশনে খুব ভালোভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তা ছাড়া স্টার্টআপ বাংলাদেশের আইডিয়া প্রজেক্টের মাধ্যমেও নতুন নতুন উদ্যোক্তার জন্য অর্থায়ন, মেন্টরশিপ, কাজের জায়গা ইত্যাদির ব্যবস্থা করা হয়।
বিভিন্ন প্রতিযোগিতা থেকে পুরস্কারপ্রাপ্ত অর্থ
নতুন নতুন আইডিয়া উপস্থাপনের প্রতিযোগিতা নিয়মিতই হচ্ছে। এ ধরনের প্রতিযোগিতার মাধ্যমে মূলত অসাধারণ উদ্যোগগুলোকে বের করে আনার চেষ্টা করা হয়। প্রতিযোগিতায় শ্রেষ্ঠ আইডিয়াগুলোর জন্য যে ‘প্রাইজমানি’ দেওয়া হয়, তা নেহাতই কম নয়। স্ল্যাশ, জিপি এক্সলেরেটর, বাংলালিংক ইনকিউবেটর প্রভৃতি সুবিধা রয়েছে।
ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের চলমান সংস্কৃতিতে ব্যবসার ঋণের জন্য উদ্যোক্তাদের প্রথম আকর্ষণের জায়গা হলো ব্যাংক। প্রতিষ্ঠিত কিংবা নতুন উভয় ধরনের ব্যবসার জন্যই বাংলাদেশের প্রায় সব ব্যাংকে ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা আছে। এসএমই ফাউন্ডেশন বর্তমানে ৩টি ব্যাংকের মাধ্যমে ঋণ সহায়তা দিচ্ছে। তা ছাড়া অন্যান্য ব্যাংক নিজেদের নিয়মকানুনের পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়মনীতিকে বিবেচনায় রেখে বিভিন্ন খাতের জন্য ঋণের ব্যবস্থা করেছে। একজন উদ্যোক্তাকে বুঝতে হবে, তাঁর উদ্যোগটি যে খাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত সেটির জন্য কোন ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করা উচিত।
স্টার্টআপে সরকারী অনুদান ১০ লাখ টাকা আপনিও পেতে পারেন! কিভাবে পাবেন?
আইডিএলসি স্টার্টআপ লোন: ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত, সময়: ৫ বছর।
বিনা জামানতে কর্মসংস্থান ব্যাংকের ২ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা রয়েছে। টাকার পরিমাণ আরও বৃদ্ধি করার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গৃহীত হচ্ছে।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ‘স্মল বিজনেস লোন’ সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত পাওয়া যায়। এর মধ্যে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত কোনো কোলেটারালের প্রয়োজন হয় না। সময়সীমা ৫ বছর, তবে এই ঋণ পাওয়ার জন্য কমপক্ষে ১ বছর ব্যবসাটির সময়কাল হতে হবে।
আইএফআইসি প্রান্ত নারী (উইমেন এন্ট্রাপ্রেনিউর লোন): তৃণমূল পর্যায়ের নারী উদ্যোক্তাদের দ্বারা ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পের জন্য এই ঋণ প্রদান করা হয়। মূলত জামদানি, নকশিকাঁথা, বুটিক, বিভিন্ন হ্যান্ডিক্রাফট, বিউটি পারলার, ক্যাটারিং সার্ভিস ইত্যাদি কাজের সঙ্গে যাঁরা যুক্ত এবং ব্যাংকের অন্য কোনো আর্থিক সুবিধা যাঁরা পাচ্ছেন না, তাঁদের জন্য এই বিশেষ ঋণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই ঋণসুবিধা পাওয়ার জন্য একজন নারী উদ্যোক্তাকে কমপক্ষে ২ বছর সেই ব্যবসাটির সঙ্গে যুক্ত থাকতে হবে। এটি মূলত একটি ‘টার্ম লোন’। ইকুইটি অ্যান্ড এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ফান্ড, বাংলাদেশ ব্যাংক: সফটওয়্যার, ফুড প্রসেসিং, অ্যাগ্রো-বেসড ইন্ডাস্ট্রির জন্য।
আইডিএলসি উদ্ভাবন লোন: সর্বনিম্ন ৫ লাখ, আনসিকিউরড লোন ২৫ লাখ, আংশিক সিকিউরড লোন সর্বোচ্চ ১ কোটি। সর্বনিম্ন ১৩ মাস থেকে সর্বোচ্চ ৬০ মাস পর্যন্ত এই ঋণের মেয়াদ। যাঁরা বেসিসের সদস্য, তাঁরা এই ঋণ প্রাপ্তিতে অগ্রাধিকার এবং বিশেষ সুবিধা পান। তা ছাড়া ২ বছরের ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতা বাধ্যতামূলক তবে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ১ বছরের অভিজ্ঞতাই যথেষ্ট। উদ্যোক্তার বয়স হতে হবে ২০ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে।
ক্ষুদ্রঋণ বাংলাদেশের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত এনজিও, যেমন গ্রামীণ ব্যাংক, ব্র্যাক, আশা বাংলাদেশ ইত্যাদি ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পের জন্য ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্পের আওতায় ঋণ প্রদান করে থাকে। তারা মূলত তৃণমূল পর্যায়ে এমন উদ্যোক্তাদের খুঁজে বের করে, যাঁদের জন্য ক্ষুদ্রঋণই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
স্টার্টআপগুলোর জন্য সুযোগ, আবেদনপত্র নিচ্ছে জিপি একসেলেরেটর
স্টার্টআপের জন্য সরকারি প্রকল্প
বিভিন্ন সময় সরকার বিভিন্ন প্রকল্প বা প্রতিযোগিতার মাধ্যমে চলমান সমস্যা সমাধানের উপায় খোঁজে। তা ছাড়া বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে স্টার্টআপের জন্য মূলধন দেওয়ার সুযোগও পাওয়া যায়। সে ক্ষেত্রে একজন উদ্যোক্তা তাঁর আইডিয়াটি জমা দেন, তারপর কমিটি সেটি বিচার–বিশ্লেষণের পর গ্রহণ করলে তহবিল পাওয়া যায়। স্টার্টআপের অর্থায়নের জন্যে এ ধরনের সরকারি প্রকল্পগুলো প্রোগ্রামগুলো বেশ কার্যকর। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় প্রায়ই এ ধরনের প্রকল্প হাতে নেয়। তথ্যসূত্র: প্রথম আলো।