ই-কমার্স

বাজেটে ই-কমার্সের জন্য কি কি প্রস্তাব করা হচ্ছে?

By Baadshah

April 19, 2018

ই-কমার্স যুগ আসছে বলা যায়। ই-কমার্সকে সামনে এগিয়ে নেওয়ার সময় এখনই। দেশের ইন্টারনেট সেবানির্ভর বাজারকে সমৃদ্ধ করতে বেশ কিছু সুপারিশ করেছে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব)। সুপারিশগুলো আইসিটি মন্ত্রনালয়ে ইতিমধ্যে জমা দেওয়া হয়েছে। সংগঠনটি বর্তমান অর্থ-আইন সংশোধনের পাশাপাশি খাতসংশ্লিষ্টদের জন্য রফতানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ প্রণোদনা চেয়েছে। সঙ্কুচিত অনলাইন লেনদেন প্রক্রিয়া প্রসারিত করে এক হাজার ডলারে উন্নীত করার প্রস্তাব দিয়েছে। অফিস ও গোডাউন ভাড়ার ক্ষেত্রে মূসক অব্যাহতি চেয়েছে। ‘ই-কমার্স ও অনলাইন শপিং’ থেকে উদ্ভূত আয়কে করমুক্ত করতে জোর দাবি জানিয়েছে ই-ক্যাব। সংগঠনটি বলছে, ‘অনলাইন বিক্রেতারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অতি ক্ষুদ্র উৎপাদনকারী বা সরবরাহকারীদের কাছ থেকে পণ্য সংগ্রহ করে ও এইসব ক্ষুদ্র উৎপাদনকারী বা সরবরাহকারী মূসক নিবন্ধনের আওতায় পড়ে না। তাছাড়া সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের অন্তরায়। ক্যাশ লেস সোসাইটি বাস্তবায়নের অন্তরায়। তাই ‘ই-কমার্স ও অনলাইন শপিং’কে ITES-এর থেকে অন্তর্ভুক্ত করা এবং ‘ই-কমার্স ও অনলাইন শপিং’ থেকে উদ্ভূত আয় করযোগ্য আইনের বহির্ভূত করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। আর যেসব কোম্পানি শুধু ই-কমার্স কোম্পানি হিসেবে ব্যবসায় পরিচালনা করছে এবং লোকসান পর্যায়ে আছে, তাদের ক্ষেত্রে ন্যূনতম করহার ধার্য করা Gross Receipts-এর ০.১ শতাংশ ও যারা পরিচালনাগত মুনাফা করছে, তাদের ক্ষেত্রে ন্যূনতম করহার Gross Receipts-এর ০.৩ শতাংশ ধার্যের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। মূসক সম্পর্কিত প্রস্তবনায় ‘অনলাইন পণ্য বিক্রয়’-এর বিদ্যমান ব্যাখ্যা পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে ‘অনলাইন পণ্য বিক্রয়’ অর্থ ‘ইলেক্ট্রনিক নেটওয়ার্ক ব্যবহারের মাধ্যমে সেসব পণ্য ও সেবার কেনাবেচাকে বোঝাবে, যা ইতোপূর্বে কোনো উৎপাদনকারী বা সরবরাহকারীর কাছ থেকে মূসক পরিশোধপূর্বক (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে; উৎপাদনকারী বা সরবরাহকারী যারা মূসক নিবন্ধনের আওতায় নেই, সেক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়) গৃহীত হয়েছে কোনো নিজস্ব বিক্রয়কেন্দ্র নেই’ হিসেবে পরিমার্জনের প্রস্তাব করা হয়েছে।

নিচে ই-ক্যাবের পক্ষ থেকে দেয়া উল্লেখযোগ্য প্রস্তাবগুলো তুলে ধরা হলো-

অনলাইন লেনদেনের সীমা বাড়ানো : বেসিস সদস্যদের মতো ই-ক্যাব সদস্যদের জন্য অনলাইন লেনদেনের সুবিধা চালুর দাবি জানিয়ে বাৎসরিক অনলাইন লেনদেনের সীমা ৭০০০ মার্কিন ডলার থেকে বাড়িয়ে ২০০০০ মার্কিন ডলারে উন্নীত করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এই উদ্যোগ অনলাইনে কেনাকাটা করকে উৎসাহিত করার পাশাপাশি ডিজিটাল মার্কেটিং, ওয়েব হোস্টিং, সার্ভার হোস্টিংসহ ইত্যাদি কাজে অবৈধ লেনদেন বন্ধ হবে বলে যুক্তি তুলে ধরা হয়েছে। কর ও ভ্যাট মওকুফ : প্রস্তবনায় আইসিটি, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, অনলাইন ট্রানজেকশন ব্যবসায়ের সাথে জড়িত কোম্পানিসমূহ এবং ই-কমার্স উদ্যোক্তাদের আর্থিক ও নীতিগত সমর্থন দেয়ার লক্ষ্যে তাদের ব্যবসায়ের ওপর থেকে কর ও ভ্যাট মওকুফ করা এবং এজন্য বাজেট বরাদ্দ রাখার দাবি করা হয়েছে। একই সাথে বার্ষিক বা অর্ধবার্ষিক রিবেট প্রোগ্রাম সাজিয়ে সবচেয়ে সফল প্রশিক্ষণদাতাকারী আইটি কোম্পানি/সংস্থাগুলোর জন্য প্রশিক্ষণ দানের খরচ হিসেবে নির্দিষ্ট পরিমাণ বা পুরোপুরি ভ্যাট মওকুফ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এক্ষেত্রে কার্যকর এবং মানসম্মত প্রশিক্ষণদাতাদেরকে যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে এই সুবিধা দেয়া হবে বলে মত দিয়েছে সংগঠনটি।

ক্লাস্টার বরাদ্দ রেখে ঋণ : ই-কমার্স উদ্যোক্তাদের জন্য একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ক্লাস্টার বরাদ্দ দিয়ে তাদেরকে সহজ ঋণ সুবিধা দেয়ার দাবি তুলে ই-ক্যাব বলেছে- বৈশ্বিক ই-বাণিজ্য বাজারের আকার ৫০০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি এবং এ রকম বড় বাজারে বাংলাদেশ মাত্র একটি স্টার্টার। সুতরাং, আমাদের দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য সরকারকে অবশ্যই সেক্টরটি লালন-পালন করতে হবে। বর্তমানে প্রায় সব ব্যবসায়ই কোনো না কোনোভাবে ই-কমার্সের সাথে যুক্ত। তাই ই-কমার্স বাড়ানোর মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দিকে অগ্রসর হবে।

পাসপোর্ট কোটায় বরাদ্দ বাড়ানো : বিদেশী মুদ্রায় অনলাইনে লেনদেন বাড়ানোর জন্য পাসপোর্ট কোটার ভিত্তিতে বিদ্যমান বরাদ্দ করা কোটা বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বর্তমানে সামাজিক মিডিয়া মার্কেটিংয়ের বেশিরভাগ লেনদেনগুলো অবৈধ চ্যানেলগুলোর মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়, যার জন্য সরকার বিপুল রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হয়। যদি সরকার এই লেনদেনগুলো আনুষ্ঠানিক চ্যানেলের মধ্যে আনতে প্রয়োজনীয় সুবিধা দেয়, এটি ই-কমার্স শিল্পকে প্রসার করতে সাহায্য করবে এবং রাজস্ব আয় বাড়াবে।

ক্লাউডভিত্তিক তথ্যকেন্দ্র স্থাপন : ক্লাউড মেকানিজমের মাধ্যমে নিজস্ব ডাটা সেন্টার চালু করার জন্য এখনই সঠিক সময়। বিশ্ব এখন ক্লাউড প্রযুক্তির দিকে এগুচ্ছে। আমাদের এখনো এ ব্যাপারে কিছু নিষেধাজ্ঞা আছে। যদিও কিছু সরকারি সংস্থা সম্প্রতি ক্লাউডভিত্তিক ডাটা কেন্দ্র স্থাপন করেছে, তবে এটি বেসরকারি সংস্থাগুলোর মাধ্যমে অ্যাক্সেসযোগ্য নয়। এমন পরিস্থিতিতে পাবলিক ডাটা সেন্টার স্থাপন করার প্রস্তাব দিয়েছে ই-ক্যাব। এই উদ্যোগটি সব প্রাইভেট সংস্থার জন্য তথ্য সংগ্রহের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা এবং ডাটা লসের প্রতিরোধে সহায়ক হবে বলে মনে করছে সংগঠনটি। এছাড়া প্রস্তাবনায় বিশেষ শর্তে বাংলাদেশ থেকে চাকরির আউটসোর্সিংয়ের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখা বিদেশী সংস্থাগুলোর জন্য ট্যাক্স রিবেট দেয়ার জন্য বাজেট বরাদ্দ চেয়েছে ই-ক্যাব। ভিসি তহবিলের ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন কর্মশালা, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম ইত্যাদি এবং ভিসি প্রদর্শনীর জন্য বছরে ৩ থেকে ৫টি বৃহৎ মেলা এবং অনুষ্ঠানের আয়োজনের প্রস্তাব দিয়েছে। দাবি তুলেছে, আইসিটি শিল্পের জন্য বিশেষজ্ঞ ও উপযুক্ত মানবসম্পদ তৈরির বিষয়ে। এজন্য রেন্টাল বেসিসে প্রদানের জন্য হাইটেক প্রশিক্ষণকেন্দ্র তৈরির প্রস্তাবও দিয়েছে। সাইবার নিরাপত্তায় সংশ্লিষ্টদের দক্ষতা উন্নয়নে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। যোগ্য আইসিটি ও ই-কমার্স কোম্পানিগুলোকে শনাক্তকরণ ও চিহ্নিতকরণের লক্ষ্যে সার্টিফিকেশন প্রোগ্রাম চালুর প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।