অ্যাপ রিভিউ

বিকাশ অ্যাপে কি কি সুবিধা আছে, কিভাবে পাবেন?

By Baadshah

May 17, 2018

বিকাশ কার নেই? যার নেই সে এখনো ডিজিটাল নয়। তবে দেড় লাখ টাকার ওপরে যাদের লেনদেন তারা বিকাশে না থাকাই ভালো। তারা চলে যেতে পারেন ব্যাংকের লেনদেনে। একথা কামাল কাদিরের। বিকাশের সিইও তিনি। ব্যাংকিং সেবার সুবিধা বঞ্চিত বা ব্যাংকিং সেবার বাইরে থাকা সাধারণ মানুষের আর্থিক অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্য নিয়ে যাত্রা শুরু করে বিকাশ। দেশের অভ্যন্তরে টাকা পাঠানোর পাশাপাশি আরও নানা সেবা দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। গ্রাহকদের যেকোনো লেনদেন আরও সহজ, দ্রুত ও নিরাপদ করতে ব্র্যাক ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানটি চালু করেছে অ্যাপ। ২০১০ সালে বাংলাদেশে

বিকাশ কার্যক্রম শুরু করলেও ২০১১ সালে পুরোপুরি মাঠে নামে। দীর্ঘ ৭ বছর পর প্রযুক্তির হালের এই সংস্করণ অ্যাপকে ধরে ফেলেছে তারা। মঙ্গলবার রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে এক অনুষ্ঠানে সেই সম্পর্কেই পরিচিতি তুলে ধরেন বিকাশের কর্মকর্তারা। অনুষ্ঠানের শুরুতে বিকাশের যাত্রা থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত পথপাড়ি পর্যন্ত তথ্য তুলে ধরেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী (সিইও) কামাল কাদীর। এরপর অ্যাপ ও তার ব্যবহার নিয়ে তথ্য বিশ্লেষণ করেন প্রধান বিপণন কর্মকর্তা মীর নওবত আলী। প্রধান নির্বাহী এসময় বলেন, অ্যাপ আনতে আমরা সময় নিয়েছি। আমরা চাচ্ছিলাম- আগে সাধারণ মানুষের স্মার্টফোন সম্পর্কে ভালো ধারণা তৈরি হোক। আমরা যদি ২০১১ সালেই অ্যাপ আনতাম তাহলে হয়তো আমাদের সাধারণ মানুষকে অ্যাপ সম্পর্কে আগে পড়িয়ে নিতে হতো। তিনি বলেন, সব ধরনের মানুষ সম্পর্কে গবেষণা করেই এই অ্যাপ তৈরি করা হয়েছে। এখানের শিক্ষিত শ্রেণির মানুষের জন্য যেমন সুবিধা রাখা হয়েছে, তেমনি যারা কম অক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন তাদের জন্য ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বাংলা ছাড়াও ইংরেজি ভাষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ‘ছবি ও লেখা সমৃদ্ধ এই অ্যাপে ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্স বা মৌখিক নির্দেশনারও সুবিধা আছে। অর্থাৎ যেকোনো লেনদেনের ক্ষেত্রে কি পদক্ষেপ নিতে হবে তা সুনির্দিষ্ট ধাপে গ্রাহকের পছন্দ অনুযায়ী বাংলা বা ইংরেজি ভাষায় নির্দেশনা দেয় এই অ্যাপ।’ কামাল কাদীর বলেন, বিকাশে লেনদেনের ক্ষেত্রে এখন আর প্রাপকের নম্বর টাইপ করার দরকার নেই। বিকাশ অ্যাপে সেন্ড মানি, বাই এয়ারটাইম (মোবাইলে রিচার্জ) ও রিকোয়েস্ট মানি লেনদেনের সময় সরাসরি কন্ট্যাক্ট লিস্ট থেকে নম্বর নেয়া যাবে। ফলে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা নেই। ভুল এড়াতে রাখা হয়েছে কিউআর কোড ব্যবস্থাও। নতুন অ্যাপ ব্যবহারের কিছু ছাড় দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। বলেন, আমরা প্রোমোশনের জন্য সার্ভিস কমিয়ে রেখেছি। যারা এই অ্যাপের মাধ্যমে ক্যাশ আউট করবেন, তাদের প্রতি হাজারে ১৫ টাকা সার্ভিস চার্জ কাটা হবে। অ্যাপের বাইরে যেটা সাড়ে ১৮ টাকা নির্ধারিত আছে।

হাজারে সাড়ে ৩ টাকা ছাড় দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা অ্যাপের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রে ছাড় দিয়েছি। এটার মাধ্যমে কোনো পার্সোনাল নম্বরে টাকা পাঠানো হলে কোনো চার্জ কাটা হবে না। অ্যাপের বাইরে যেটি ৫ টাকা বিদ্যমান আছে। তাছাড়া এই অ্যাপের মাধ্যমে পবিত্র রমজান মাসে কেনাকাটার টাকা পরিশোধের ক্ষেত্রে ছাড় পাওয়া যাবে। তবে সেটা নির্ধারিত আউটলেটের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। গ্রাহকরা এক্ষেত্রে টাকা পরিশোধের পর ২৫ শতাংশ ক্যাশ-ব্যাক পাবেন। কিন্তু অ্যাপ কীভাবে পাবেন? কামাল কাদীর বলেন, গুগলের অ্যাপ স্টোর থেকে বিকাশের অ্যাপটি ডাউনলোড করা যাবে। এরপর সেটিকে ইনস্টল করে নিতে হবে। এটা স্মার্টফোনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। অনুষ্ঠানের প্রধান বিপণন কর্মকর্তা মীর নওবত আলী কীভাবে এই ব্যবহার করতে হবে- তার প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন। এরপর তিনি বলেন, আমরা এরইমধ্যে ভাড়া সাড়া পেয়েছি। প্রায় ১৮ দিনে ১৪ লাখ মানুষ এই অ্যাপ ডাউনলোড করেছেন।

বিকাশ অ্যাপ থেকে যেসব সুবিধা পাওয়া যাবে

কামাল কাদির বলেন, স্মার্টফোনের ব্যবহার ও ইন্টারনেটের ব্যপ্তি বাড়ায় অ্যাপ নিয়ে আসা হয়েছে। গত ১৮ মাস ধরে এ নিয়ে কাজ করা হয়েছে। ২৬ এপ্রিল এটি গুগলে আপলোড করা হয়।

বিকাশের চিফ মার্কেটিং অফিসার মীর নওবত আলী বলেন, অ্যাপটি এরইমধ্যে ১৪ লাখ ডাউনলোড হয়েছে।

তিনি জানান, খুব স্বল্প অক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন গ্রাহকদের কথা বিবেচনায় রেখেই বিকাশ অ্যাপে ইংরেজি ছাড়াও বাংলা ব্যবহারের সুবিধা রাখা হয়েছে।

ছবি এবং লেখা সমৃদ্ধ এই অ্যাপে ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্স বা মৌখিক নির্দেশনার সুবিধা আছে। যে কোনো লেনদেনের জন্য কি পদক্ষেপ নিতে হবে তা সুনির্দিষ্ট ধাপে গ্রাহকের পছন্দ অনুযায়ী বাংলা বা ইংরেজি ভাষায় নির্দেশনা দেয় এই অ্যাপ। বিকাশ অ্যাপে নিরাপত্তাকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। পিন (গোপন নম্বর) ব্যবহার ছাড়া এই অ্যাপের কোনো কার্যক্রম সম্ভব নয়। প্রতিবার অ্যাপ ব্যবহারের শুরুতে এবং যেকোনো লেনদেন করতে পিন ব্যবহার করতে হবে।

এর ফলে ফোন হারিয়ে গেলেও বিকাশ অ্যাকাউন্টের টাকা সুরক্ষিত থাকবে। এছাড়া প্রথমবার লগ ইন করার সময় সঠিক পিন নম্বর দেওয়ার পর গ্রাহকের বিকাশ নম্বরটিতে একটি কোড যাবে এসএমএস’র মাধ্যমে। যেটা সঠিক ভাবে না দিতে পারলে অ্যাপে ঢোকা যাবে না।

বিকাশ অ্যাপের মাধ্যমে এখন সারা মাসের আর্থিক হিসাব থাকবে নিবন্ধিত। অর্থাৎ কোথায় কবে কি খরচ করা হয়েছে তার মাসিক হিসাব থাকবে।

প্রতিমাসে নির্দিষ্ট সময়ে দিতে হয় এমন কিছু বিল বা পেমেন্ট থাকে। বিকাশ অ্যাপের মাধ্যমে এখানে রিমাইন্ডার দিয়ে রাখা যাচ্ছে। অর্থাৎ নির্দিষ্ট সময়ে অ্যাপ গ্রাহককে বিল দেওয়ার কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে।

যেসব এজেন্ট থেকে নিয়মিত ক্যাশ আউট করা হয় বা যেসব দোকানে নিয়মিত বিকাশের মাধ্যমে পেমেন্ট করা হয় সেগুলোর নম্বর বিকাশ অ্যাপে সংরক্ষণ করে রাখার সুবিধাও রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী কয়েকটি লেনদেনের ক্ষেত্রে পরিমাণ এবং সংখ্যা নির্ধারিত। প্রত্যেক গ্রাহক তার লেনদেন সীমার স্বতন্ত্র হিসাব পাচ্ছেন বিকাশ অ্যাপে। দৈনিক ও মাসিক- দুইভাবে তথ্য সাজানো আছে প্রতিটি গ্রাহকের বিকাশ অ্যাপে।

বিকাশ অ্যাপে ব্যালেন্স চেক করাও সহজ। পিন দিয়ে মূল স্ক্রিনে ঢোকার পরেই একটি ট্যাপেই গ্রাহক তার ব্যালেন্স চেক করতে পারছেন। কেবল তাই নয় প্রতিটি লেনদেনের সাথে সাথেই অবশিষ্ট ব্যালেন্স স্বয়ংক্রিয়ভাবে দেখিয়ে দেয় অ্যাপ।

বিকাশ অ্যাপে যুক্ত হয়েছে একটি অনন্য ফিচার ‘রিকোয়েস্ট মানি’। এর মাধ্যমে গ্রাহক তার জরুরি প্রয়োজনে টাকা চেয়ে পরিচিতজনের কাছে অনুরোধ পাঠাতে পারছেন। যে গ্রাহককে রিকোয়েস্ট পাঠানো হবে তিনি যদি চান তাহলে সহজেই টাকা পাঠিয়ে দিতে পারবেন রিকোয়েস্টকারীকে। অথবা রিকোয়েস্ট বাতিলও করে দিতে পারবেন।

কেবল এসএমএস নয় এখন অ্যাপের মাধ্যমেও সব লেনদেনের নোটিফিকেশন পাওয়া যাচ্ছে।

গ্রাহক চাইলে প্রিয়জনকে বিকাশ অ্যাপ ব্যবহারের জন্য রেফারও করতে পারবেন।