বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে কক্সবাজার টু ঢাকা যাত্রা। ফ্লাইট নম্বর বিজি ০৪৩৪, আমার সিট নং ১২এফ। জানালার পাশে । নির্দিষ্ট সময়েই ফ্লাইট ছাড়ে। তখন ঘড়ির কাটায় ১১:৫ বাজে। আমার পাশের মাঝের সিট খালি, তার পাশে এসে বসলো সুন্দরী এক মেয়ে। বিশাল সুমদ্র সৈকতের উপর দিয়ে প্লেন চলছে। হঠাৎ করে প্লেন নড়াচড়া করে উঠলো। যাত্রীরাও নড়াচড়া করে বসলো। কিছুক্ষণ পর স্বাভাবিক হলো প্লেন চলাচল। যাত্রীরাও হেলিয়ে বসলো সিটের সঙ্গে। বেশ কিছুক্ষণ পর আবার একই অবস্থা। পাশে বসা সুন্দরী মেয়েটি আমাকে বারবার জিগ্যেস করছে আচ্ছা এত কাঁপছে কেন?
আমি উওরে বললাম মেঘের ভিত্তর দিয়ে যাচ্ছে তো, তাই এত কাঁপছে তেমন কিছু না।
এবার একটু বেশিই কাঁপছে আমিও একটু ভয় পেয়ে গেলাম। কিন্তু কী করার, সিটে শক্ত করে বসে রইলাম ।
মেয়েটি আবার আমাকে বললো অনেক কাঁপছে, আমার অনেক ভয় লাগছে। আমি বললাম তেমন কিছু না। কিন্তু মেয়েটিকে কেমনে বোঝায় আমারও একটু একটু ভয় লাগছে। মাঝের সিটটি খালি এবার আমি সিটটির পাশে শক্ত করে বসলাম। মেয়েটি হঠাৎ আমাকে বললো আপনার হাতটি ধরি? আমি বললাম কিছু হবে না, আপনি চোখ বন্ধ করে বসে থাকেন। মেয়েটির বাম দিকের আগের সিটে তার বাবা, মা বসা। মেয়েটি তার মাকে বলছে আম্মু আমার খুব ভয় লাগছে। মেয়েটির মা বললো কিছু হবে না। এবার মেয়েটি আমার হাত চেপে ধরলো। আমি বললাম আপনি চুপচাপ চোখ বন্ধ করে বসে থাকেন। এখান থেকে পরলে কিছুই হবে জাস্ট হাত, পা কেটে ছিলে যাবে । কি করবো আমি তো কোন কিছুতে বোঝাতে পারছি না। মেয়েটির মা কাঁধ ঘুরিয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে আমিও মেয়েটির মায়ের দিকে তাকিয়ে আছি। মেয়েটির মা দেখছে আমার হাত শক্ত করে তার মেয়ে ধরে আছে। মেয়েটি ভয়ে কাঁপছে আর হাত অনেক ঠান্ডা হয়ে গেছে। এমন সময় প্লেনটি স্বাভাবিক হয়ে ল্যান্ড করবে। আমি মেয়েটিকে বললাম আর কোন ভয় নেই। মেয়েটি হাত ছেড়ে দিয়ে বললো সরি আমি খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। তারপর সে আমার দিকে তাকিয়ে হাসি দিয়ে বললো, আসি। আমি মাথা নাড়িয়ে বললাম, ঠিক আছে। মরণের ভয় সবার আছে। সবাই বাঁচতে চাই। কিন্তু একদিন যে সবাইকে মরতে হবে সেটাই আমরা ভুলে যাই। ইউএস বাংলার দুর্ঘটনার পর এয়ার যাত্রীদের ভয় একটু বেশিই…
লেখক: রাহিতুল ইসলাম, সাংবাদিক, লেখক