শিক্ষার জীবনের একটি চরম চালেঞ্জিং সময় হল বিশ্ববিদ্যাল ভর্তি পরীক্ষার সময়কাল । তখন শুধু পড়ালেখা নিয়েই যে চিন্তার মধ্যে থাকতে হয় তা নয়, কবে ভর্তির ফর্ম পূরণের শেষ তারিখ, কবে টাকা জমা দেয়ার শেষ তারিখ, কবে ভর্তি পরীক্ষা, এসব তথ্য মাথায় রাখাও কম ঝামেলার ব্যাপার না। তার উপর একের অধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে হলে কি কি পড়তে হবে, কি থাকবে সিলেবাসে, ভর্তির যোগ্যতা কি, কি ভাবে দূরের ক্যাম্পাস গুলোতে যাতায়াত করা যাবে তা নিয়েও চলতে থাকে দ্বিধা ও বিভ্রান্তি। আর এ সব সমস্যার সমাধান দিতে”এডমিশন অ্যাসিস্ট্যান্ট” অ্যাপসটি উদ্ভাবনা করেছেন একদল বাংলাদেশী তরুন উদ্ভাবক। লেখক: জিমি মজুমদার, প্রতিষ্ঠাতা, বাংলাদেশ অ্যাডভান্স রোবটিক্স রিসার্চ সেন্টার এবং তরুণ প্রযুক্তিবিদ ও গবেষণা প্রকল্প সহকারি, নাসা।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং সাইন্সশপবিডি নামক অনলাইন শপের প্রতিষ্ঠাতা আবদুল্লাহ আল মামুনের নেতৃত্বে ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের কিছু শিক্ষার্থী মিলে তৈরি করেছেন এই অ্যাপসটি। সার্ভার ম্যানেজমেন্ট এবং এপ ডিজাইনিংয়ে কাজ করেন আবদুল্লাহ জাওয়াদ খান, মাহবুবুর রহমান এবং শোভন মাহমুদ। ডাটা এনালাইসিসে কাজ করেন প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী সাফায়াত সিদ্দিকী। এছাড়াও প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দিয়েছেন শাবি ও প্রবির সাবেক শিক্ষার্থী মোহাম্মদ উল্লাহ্,ফাহাদ এবং মারুফ। পাশাপাশি বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করেছে উক্ত ডিপার্টমেন্ট এর শিক্ষার্থী তানভির,সৌমিত্র,সাইম,মিজান এবং আরমান। মাত্র তিন মাস নিরলস চেষ্টার পর অ্যাপসটি এখন গুগল প্লে স্টোরে উন্মুক্ত করা হয়েছে। এখনো অ্যাপসটিকে আরো কার্যকর ও নির্ভুল করার চেষ্টা চলছে, তবে ইতোমধ্যেই অ্যাপসটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের মাঝে সাড়া ফেলেছে।
কি আছে এই অ্যাপসটিতে?
শিক্ষার্থীদের সুবিধার কথা চিন্তা করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পাঁচ ভাগে ভাগ করা হয়েছে এই অ্যাপসটিতে। সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়, ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষি ও ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিকেল কলেজ। আপনি যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চান ক্যাটাগরি অনুযায়ী সেখানে ক্লিক করলেই জেনে যাবেন আপনার পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিসংক্রান্ত যাবতীয় তথ্যাদি।প্রত্যেকটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার সার্কুলার দেয়া আছে অ্যাপসটিতে। সার্কুলার বোঝার সুবিধার্থে সহজ ফরম্যাটে নিয়ে আসা হয়েছে এখানে। পাশাপাশি প্রতিটা সার্কুলার প্রকাশের সাথে সাথেই নোটিফিকেশনের মাধ্যমে অ্যাপস ব্যবহারকারীকে জানিয়ে দেয়া হয়। তাই এখন বিভিন্ন ভার্সিটির ওয়েবসাইট কিংবা সোশাল মিডিয়াগুলোতে সার্কুলার খোঁজাখুঁজি করে সময় নষ্ট করতে হবে না। সবচেয়ে ইউনিক ব্যাপার হলো, এক ফোন দিয়ে একাধিক একাউন্ট খোলা যাবে। ফলে আপনার যে বন্ধুটির এন্ড্রয়েড ফোন নেই চাইলে আপনি তাকেও হেল্প করতে পারবেন। তার জন্য আপনাকে যা করতে হবে- আপনার মোবাইলে বন্ধুর নাম্বার দিয়ে আরেকটি একাউন্ট খুলে এসএমএস সার্ভিস অন করে দিলেই বন্ধুর কাছে ও ভর্তি পরীক্ষার সকল ইনফরমেশন পৌঁছে যাবে এসএমএসের মাধ্যমে।
এডমিশন কাউন্টডাউন- এই ফিচারটির মাধ্যমে কোন ভার্সিটির আবেদন কখন শুরু হবে তা একসাথে লিস্ট করে দেয়া আছে। তাছাড়া আপনি দেখতে পাবেন কোন ভার্সিটির আবেদনের শেষ তারিখ কবে, আর কত দিন বাকি আছে এপ্লাই করার এবং তার পাশাপাশি এপ্লাই বাটনে ক্লিক করে কোন ঝামেলা ছাড়া এপ্লাই করার সুবিধা। আপনার পছন্দমত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ফেভারিট লিস্টেড করে রাখতে পারবেন, ফলে এই বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক তথ্যের জন্য বিশেষভাবে নোটিফিকেশন পাঠানো হবে।
কিভাবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আবেদন করা যাবে?
অ্যাপসটিতে “লগ ইন” করার সময় যে সকল ইনফরমেশন দিতে হবে (যেমন- এসএসসি, এইচএসসি রোল, রেজিস্ট্রেশন নাম্বার, বোর্ড, ছবি)। সেগুলোর মাধ্যমে জাস্ট এক ক্লিকের মাধ্যমেই পছন্দের ভার্সিটিতে এপ্লাই করা যাবে। অর্থাৎ আপনাকে প্রতেকবার পছন্দের ভার্সিটিতে এপ্লাই করার সময় একই ইনফরমেশন বারবার দিতে হবে না। শুধু কোন ইউনিটে এক্সাম দিবেন, কোটা আছে কিনা তা সিলেক্ট করেই যে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করার সুযোগ থাকছে। রয়েছে বিকাশ/রকেটের মাধ্যমে এডমিশন ফর্মের ফি প্রদান করার সুযোগ। তবে আপনি এই সুবিধা নিতে না চাইলে শুধু ফোন নম্বর, ইমেইল আইডি দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করে অ্যাপসটির বাকি সুবিধাগুলো গ্রহণ করতে পারবেন খুব সহজে।তাছাড়া যখন যে ভার্সিটি এডমিড কার্ড, সিট প্ল্যান, রেজাল্ট পাবলিশ হবে তা সাথে সাথেই দেখতে পাবেন এবং জাস্ট এক ক্লিকেই নিজের তথ্যাবলী জেনে নিতে পারবেন। এছাড়া প্রয়োজনীয় কিছু লিখে রাখার জন্য রয়েছে “নোটপ্যাড”। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিযুদ্ধে অচেনা শহরে কিভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন এসব সমস্যা যদি থেকে থাকে, সমাধান আছে তার জন্যেও। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যাতায়াত ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে আছে প্রয়োজনীয় তথ্য। এতে করে আপনার জেলা শহর হতে অনায়াসে বিভিন্ন ভার্সিটি চলে যেতে পারবেন কারো সাহায্য ছাড়াই। আর রয়েছে বাস, ট্রেন টিকেট বুকিং করার সুবিধা। এমনকি রয়েছে হোটেল বুকিং করার সুবিধাও! বাংলাদেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কিছু ভলেন্টিয়ার কাজ করছে অ্যাপসটিতে যেন সব চেয়ে দ্রুততম সময়ে শিক্ষার্থীদের কাছে সঠিক তথ্য পৌছে দেয়া যায়। তাছাড়া অ্যাপস ব্যাবহারকারী যে কেউ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত যে কোন প্রয়োজনীয় তথ্য কন্ট্রিবিউট করতে পারবে। এছাড়াও এডমিশন এসিস্ট্যান্ট ফেইসবুক পেইজের মাধ্যমে তার ভর্তি তথ্য পৌছে দিয়েছে কয়েক লক্ষ শিক্ষার্থীর কাছে।
অ্যাপসটি সম্বন্ধে “এডমিশন অ্যাসিস্ট্যান্ট” টিমের প্রধান আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, “আমরা গ্রাহকের পছন্দ এবং মতামতকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকি এবং প্রতিনিয়ত এপসটি গ্রাহকের মনের মতো করে সাজানোর চেষ্টা করছি। ইতিমধ্যেই অনেক প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকেও অনেক ইউজার আমাদের সাথে যুক্ত হয়েছে। আমরা স্বপ্ন দেখি, এই এপ একদিন লাখো ভর্তি প্রত্যাশীর ভরসার প্রতীক হয়ে উঠবে।সঠিক সময়ে সঠিক তথ্যের অভাবে উচ্চ শিক্ষা হতে বঞ্চিত হবে না দেশের একটি শিক্ষার্থীও।”
এ ভাবেই নুতন নুতন উদ্ভাবনা নিয়ে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ এবং তরুণদের হাত ধরে বাস্তবায়িত হবে আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশ।
লেখক: জিমি মজুমদার, প্রতিষ্ঠাতা, বাংলাদেশ অ্যাডভান্স রোবটিক্স রিসার্চ সেন্টার এবং তরুণ প্রযুক্তিবিদ ও গবেষণা প্রকল্প সহকারি, নাসা।