TechJano

‘বেসিস’এর ২০১৮-২০২০ অর্থবছরের কার্যক্রম কেমন ছিল

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস-এর (বেসিস) ২০১৮-২০২০ অর্থবছরের কার্যনির্বাহী পরিষদের মেয়াদকাল শেষ হতে চলেছে । করোনাকালীন দেশের সফটওয়্যার খাতের নানা বিষয় নিয়ে টেকজুমের সাথে কথা বলেছে বেসিসের সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর । ২০১৮-২০২০ অর্থবছরের বেসিস নির্বাহী পরিষদ এর উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম নিয়ে বিস্তারিত কথা বলেছেন তিনি ।

সফটওয়্যার, বিপিও এবং ই-কমার্স ব্যবসার জন্য উদ্যোক্তারা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণসহ নানাবিধ আর্থিক সুবিধাসহ তথ্যপ্রযুক্তি খাতে দেশ কে এগিয়ে নিতে নানা উদ্যোগ এবং তা বাস্তবায়নের মাধমে শেষ হল তথ্যপ্রযুক্তি খাতে দেশের শীর্ষ স্থানীয় বাণিজ্য সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফ্টওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) এর ২০১৮-২০২০ এর মেয়াদকাল ।

বেসিসের সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীরের বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার বেসরকারি অংশীদার হিসেবে বেসিস প্রতিনিয়ত বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। ২০১৮-২০২০ এর মেয়াদকালে কার্যনির্বাহী পরিষদ দায়িত্ব নেয়ার মাধ্যমে উন্নয়নের সেই ধারা অব্যাহত রাখেছি। বেসিস তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সদস্যদের সংগঠন, ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার মাধ্যমে বাংলাদেশকে এগিয়ে নেয়া সম্ভব। সদস্যদের প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়ন ও উৎকর্ষ সাধনের পাশাপাশি সমগ্র তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে আরো সমৃদ্ধ করতে সরকারের সঙ্গে একযোগে কাজ করেছে বেসিস।’

বেসিস সদস্যদের জন্য লোন সুবিধা সম্পর্কে বেসিসের সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীরের বলেন, প্রথাগতভাবে ব্যাংক সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দিতে স্বচ্ছন্দ বোধ করে না। ফলে, অনেক বেসিস সদস্য ব্যাংক হতে কখনো ঋণ গ্রহণ করতে পারে নাই। বিগত করোনা অতিমারী চলাকালে কঠিন আর্থিক সংকটের সময় বেসিস প্রাইম ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করে বেসিস সদস্যদের জন্য জামানতবিহীন ঋণ প্রদানে উদ্যোগ গ্রহণ করে। এতে ৮৪ টি বেসিস সদস্য প্রতিষ্ঠান প্রাইম ব্যাংক হতে ২২.৫৮ কোটি টাকার ঋণ সুবিধা পেয়েছে।

সৈয়দ আলমাস কবীরের আরও বলেন , ২০১৮-২০২০ এর মেয়াদকালে বেসিসের সদস্যসেবা পূর্ণাঙ্গভাবে ম্যানুয়াল থাকায় সদস্যদের ফি পরিশোধ, সার্টিফিকেট গ্রহণ, সেবা আবেদন ইত্যাদির জন্য বেসিসের সচিবালয়ে আসতে হতো বা ই-মেইলের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে হতো। বেসিসের পোর্টালটি ডায়নামিক থাকলেও কোনো সিস্টেম বা মোবাইল এপ্লিকেশন ছিল না। বর্তমান কমিটি সদস্যদের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ অনলাইন পোর্টাল চালু করেছে, যার মাধ্যমে ফী পরিশোধসহ সেবার অনুরোধ করতে পারছে। এমনকি মেম্বারশিপ সার্টিফিকেট অনলাইনে প্রদান করা হচ্ছে। একইভাবে, বেসিসের নিজস্ব মোবাইল এপ্লিকেশন ছাড়াও সফটএক্সপোর জন্য আলাদা মোবাইল এপ্লিকেশন করা হয়েছে।

বেসিস প্রথমবারের মতো SaaS মডেলের ব্যবসাকে প্রমোট করে এবং একটি প্লাটফর্ম তৈরী করেছে।  ভবিষ্যতে এই প্লাটফর্মটি অনেক বেসিস সদস্যকে SaaS মডেলের ব্যবসা প্রচারে সহায়তা করবে এবং বৃহৎ প্রতিষ্ঠানের জন্য ভ্যাট সফটওয়্যার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করায় বেসিসের উদ্যোগে এর প্রতিষ্ঠানসমূহ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে তাদের ভ্যাট সফটওয়্যার নিবন্ধন করতে পারছে। নিবন্ধিত সফটওয়্যারসমূহ হতে ক্রয় বাধ্যতামূলক হওয়ায় বেসিসের সদস্যদের বাজার সম্প্রসারণ হয়েছে। ইতিমধ্যে ৪৩ টি বেসিস সদস্য প্রতিষ্ঠান জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে নিবন্ধন করেছে।

২০% এর উপর নারী কর্মী নিয়োগ ও বেসিস সদস্যদের জন্য সদস্য সেবা ফী’র উপর ছাড় প্রদানের সিদ্ধান্ত বাস্তাবায়ন করা হয়েছে ২০১৮-২০২০ এর মেয়াদকালে । বেসিস সদস্যদের বৈদেশিক রপ্তানির ধারনা প্রাপ্তির জন্য ফরেন এক্সচেঞ্জ ম্যানুয়াল প্রস্তুত করা হয়েছে।বেসিস সদস্যদের জন্য বিজনেস ক্রেডিট কার্ড প্রবর্তন করা হয়। পূর্ববর্তী কার্ডগুলো ব্যক্তির নামে ইস্যু করা হত; তবে এ কার্ড সরাসরি প্রতিষ্ঠানের নামে ইস্যু করা হবে। এই কার্ডের বিশেষ সুবিধা হিসেবে গ্রাহকগণ আন্তর্জাতিক ও দেশি উভয় মুদ্রায় লেনদেন করতে পারবেন বেসিস সদস্যরা।

তিনি আরও বলেন আইটি/আইটিইএস রপ্তানিতে ক্যাশ ইনসেনটিভ বেসিস অন্যতম প্রাপ্তি । ১৩ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখ পর্যন্ত বেসিসের ২৫৯ সদস্য প্রতিষ্ঠান প্রায় ৫,০৬৪ আবেদন দাখিল করে, যার মধ্যে ২৪০টিরও বেশি প্রতিষ্ঠান ৪২৭ কোটি টাকা ইনসেনটিভ পেয়েছে। এছাড়া বিদেশে সফটওয়্যার প্রকল্প করতে ব্যাংকিং সমস্যা নিরসনে বেসিস বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করে বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত বিষয়টি সহজ করার অনুরোধ জানায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক সেপ্টেম্বর মাসে বিদেশে কোনো প্রজেক্টের জন্য আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং সুবিধা উন্মুক্ত করে দিয়েছে, যার জন্য কোনো ধরণের পূর্ব অনুমতি নিতে হবে না। ফলে, বাংলাদেশী সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক সফটওয়্যার প্রজেক্ট করতে সংশ্লিষ্ট দেশেই ব্যাংকিং করতে পারবে, যা সময় ও খরচ সাশ্রয়ী হবে।

দেশের আউটসোর্সিংকে জনপ্রিয় করার জন্য নানা ধরনের কাজকর্ম বাস্তাবায়ন করা হয়েছে ২০১৮-২০২০ এর মেয়াদকালে । পাশাপাশি “মেইড ইন বাংলাদেশ” প্রসারের আলোকে তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য, সেবা ও সেবাদানকারী ক্রয়ের জন্য পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা ও নমুনা ছকসমূহ হালনাগাদকরণ। স্থানীয় বাজার সম্প্রসারণ এবং বৈদেশিক নির্ভরশীলতার ঝুঁকি কমানোর জন্য মেট্রোরেল, রেল, এয়ারপোর্ট, টোল প্লাজাসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান / স্থাপনায় বিভিন্ন কিয়স্ক, ভেন্ডিং মেশিন, টোল মেশিন, ডিজিটাল ডিসপ্লেসহ ডিজিটাল ডিভাইস হাইটেক পার্কে তৈরি বাধ্যতামূলক করা প্রয়োজন। এই সকল প্রকল্পে বিদেশী প্রতিষ্ঠান কাজ করার প্রাক-যোগ্যতা শর্ত হিসেবে বাংলাদেশের হাইটেক পার্কে তৈরি বাধ্যতামূলক করা হলে দেশে অনেক ব্যাক ওয়ার্ড লিংকেজ শিল্প গড়ে উঠবে ও কর্মসংস্থান হবে। দেশের অর্থনৈতিক ও কমার্স উন্নয়নে ‘ডিজিটাল কমার্স নীতিমালা ২০১৮’ গত ৩১ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিইউটিও (WTO) সেল থেকে গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়েছে। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাজার সৃষ্টিসহ ব্যবসা বাণিজ্যের ডিজিটাল রূপান্তরের লক্ষ্যে প্রণীত এ নীতিমালায় ও বেসরকারি খাতে বাজার তৈরির জন্য ঋণ সুবিধা, স্বাস্থ্য খাতে সফটওয়্যার বিনিয়োগ, শিক্ষা খাতে সফটওয়্যার বিনিয়োগে বেসিস উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে।

Exit mobile version