আগামীকাল শনিবার অনুষ্ঠিত হবে তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) খাতের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) পরিচালনা পর্ষদের ২০১৮-২০ মেয়াদের নির্বাচন। এই নির্বাচনে নয়টি পদের বিপরীতে ৩০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। তিনটি প্যানেলের হয়ে ২৬ জন। বাকিরা স্বতন্ত্র প্রার্থী।
বিভিন্ন প্যানেল থেকে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করা বেশ কয়েকজন প্রার্থীকে নিয়ে এ ফিচার:
তিনি নির্বাচিত হলে দুইটি বিষয়ে কাজ করায় গুরুত্ব দেবেন বলে জানান। এর মধ্যে একটি হচ্ছে, ছোট ও মাঝারি আইটি শিল্প প্রতিষ্ঠানকে টেকসই করার লক্ষে দ্রুত আর্থিক বিনিয়োগ সুবিধা নিশ্চিত করা। আরেকটি হচ্ছে, ক্যাপাসিটি বিল্ডিংয়েও কাজ করা। তাঁর মতে, শুধু অর্থ নয়; দিক-নির্দেশনাও প্রয়োজন স্টার্টআপগুলোর।
‘টিম দুর্জয়’ প্যানেলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ফ্লোরা টেলিকম লিমিটেডের এই ব্যবস্থাপনা পরিচালক। মোস্তফা রফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের এখন একটি জাম্প দরকার। তথ্যপ্রযুক্তির দুনিয়া এখন আর আগের জায়গায় নেই। নতুন নতুন প্রযুক্তি আসছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের যে পরিকল্পনা তা শতভাগ বাস্তবায়ন করতে এসব প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে যেতে হবে।
এবারের বেসিস নির্বাচন নিয়ে তাঁর প্রত্যাশা, ভোটাররা বিচক্ষণ। তাই তাঁরা এমন প্রার্থীকে বেছে নেবেন যারা যোগ্য ও নিষ্ঠ এবং সফলতার সঙ্গে ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করছে। নিজের প্যানেল সম্পর্কে বলেন, পুরাতন, নতুন ও তরুণ উদ্যোক্তাদের সমন্বয়ে প্যানেল সাজিয়েছি। যারা একাধারে সৎ ও ইনোভেটিভ।
এই তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবসায়ীর মতে, সদস্যরাই বেসিসের প্রাণ। আর তাই সদস্যদের কল্যাণে কাজ করতে চান সল্যুশন নাইন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সহিবুর রহমান খান রানা। তিনি জানান, নবীন উদ্যোক্তা হিসেবে নিজের ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন বলে তাঁর জানা আছে নতুন উদ্যোক্তারা যেসব বাঁধার সম্মুখীন হন তা থেকে কীভাবে উতরে যাওয়া যায়। এ কারণে নাকি বেসিসের মাধ্যমে নতুন ও তরুণ আইটি ব্যবসায়ীদের জন্য কাজ করতে তিনি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। তিনি নির্বাচিত হলে দেশে সফটওয়্যার মার্কেটিং এজেন্সি গড়ে তোলা এবং অ্যাকসেস টু ফিন্যান্স ব্যবস্থা আরও সহজ করায় কাজ করবেন বলে জানান। টিম দুর্জয় প্যানেল থেকে নির্বাচন করছেন তিনি।
এই নারীর উদ্যোক্তার মতে, কেউ ব্যবসায়ী হিসেবে সফল হলেই সংগঠন চালানোয়ও যে সফল হবে তা নয়। সংগঠনের নেতৃত্ব দিতে কিংবা এতে যুক্ত থেকে নিয়মিত কাজ করতে চাইলে আগ্রহ থাকাটা খুব বেশি প্রয়োজন। আর এই আগ্রহ নাকি টিম হরাইজন প্যানেলের সদস্যদের আছে। ফারহানা এ রহমান জানিয়েছেন, তিনি নির্বাচিত হলে তিনটি বিষয়ে গুরুত্ব দেবেনে সবচেয়ে বেশি। এক, তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য রপ্তানীর জন্য নতুন বাজার খোঁজা। দ্বিতীয়ত, আইটি খাতে আমাদের বর্তমান অবস্থা আসলে কী? সেটা খুঁজে বের করতে একটি জরিপ চালানো হবে। যাতে পুরো ইন্ডাস্ট্রির তথ্য উঠে আসে। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, দিনদিন প্রযুক্তি ট্রেন্ড পরিবর্তন হচ্ছে। আইওটি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্রা, মেশিন লার্নিংয়ের যুগ শুরু হচ্ছে। তাই যারা পুরাতন ট্রেন্ডের উপর নির্ভরশীল হয়ে কাজ করছেন, তাঁরা যেন এসব প্রযুক্তির সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেন, এজন্য কৌশল খুঁজে বের করে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবেন। এছাড়া নিজে নারী উদ্যোক্তা হওয়ায় নারীদের নিয়েও কাজ করবেন তিনি।
ড্যাফোডিল পরিবারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নূরুজ্জামান নির্বাচিত হলে বেসিসের পক্ষ থেকে বিশেষ একটি উদ্যোগ নেবেন বলে জানান। সেটি হলো, দেশের যত নামকরা সফটওয়্যার আছে, সবগুলো একটি প্যাকেজের আওতায় এনে গোটা বিশ্বে ওই সব সফটওয়্যারের মার্কেটিং করা। আর এই মার্কেটিং এবং বাংলাদেশের আইটি ইন্ডাস্ট্রিকে ব্র্যান্ডিং করার জন্য লিয়াজো অফিস স্থাপন করা হবে। ‘উইন্ড অব চেঞ্জ’ প্যানেল থেকে নির্বাচন করছেন তিনি।
টিম দুর্জয় থেকে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন জিয়া আশরাফ।বাংলাদেশের ই-কমার্স খাতের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান চালডাল ডটকমের প্রধান পরিচালনা কর্মকর্তা। জিয়া আশরাফ মনে করেন, বাংলাদেশ থেকে বিশ্বমঞ্চে স্টার্টআপকে তুলে আনা সম্ভব। বাংলাদেশ থেকে তৈরি হবে পরবর্তী আলীবাবা, আমাজনের মতো বড় প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশের তরুণ মেধাবীরা এগিয়ে নেবে তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে। জিয়া আশরাফ মনে করেন, বর্তমানে বাংলাদেশে ই-কমার্সের বিকাশমান সময় চলছে। এ সময়ে যদি সঠিক লক্ষ্য ও পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাওয়া যায়, তবে এটি দেশের উল্লেখযোগ্য বাণিজ্য খাত হিসেবে দাঁড়াবে। এ খাতসহ বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উদ্যোক্তাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জগুলো নির্ধারণে ইতোমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে।
বেসিসের বিভিন্ন কমিটিতে থেকে উদ্যোক্তাদের জন্য নানা কাজ করেছেন জিয়া আশরাফ। তাঁর ভাষ্য, ই-কমার্সকে আস্তে আস্তে বড় শহর থেকে গ্রামে বিস্তার করতে কাজ করছে চালডাল। শিগগিরই সারাদেশে সবখানেই কাজ শুরু হবে। গ্রামের মানুষ অনলাইনে পণ্য ক্রয় ও সেবা গ্রহণ করা শুরু করলে আমাদের দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা রাতারাতি বদলে যাবে। জিয়া আশরাফ বলেন, ‘অনেকদিন ধরেই এ ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে আছি। সবাইকে কাছে থেকে দেখছি। এখন সময় তড়িত ব্যবস্থা নিয়ে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকা। আমার বিশ্বাস আমরা পারব। বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা উদাহরণ সৃষ্টি করবেই। আমাদের মেধা আর পরিশ্রম আমাদের সাফল্য এনে দেবে।’
এবারের বেসিস নির্বাচনে ‘টিম হরাইজন’ প্যানেল থেকে প্রতিদ্বন্দ্বীতাকারী শুটিং স্টার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দিদারুল আলম বলেন, সব সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে বেসিসকে সঙ্গে নিয়ে সবার জন্য করতে চাই। নির্বাচনে জয়ী হলে কিছু বিষয়ে গুরুত্ব সহকারে কাজ করবেন বলে জানান। শুরুতেই যে কাজটি করতে চান তা হলো, একটি মেম্বার ক্লাব করা ও মেম্বার স্কিল ট্রান্সফর্মেশন অ্যান্ড কোলাবোরেশন প্লাটফর্মের মাধ্যমে বেসিস সদস্যদের মধ্যে সমন্বয় বাড়ানো। যাতে করে একে অপরের ক্যাপাসিটি ডেভেলপমেন্টে কাজ করে এবং অপরচুনিটি ক্রিয়েটের মাধ্যমে শক্তিশালী সদস্যদের মাধ্যমে কল্যাণমুখী বেসিস গড়ে তোলার অঙ্গীকার নিয়ে সামনে আগানো যায়। এর পাশাপাশি সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য এক্সেস টু ফান্ডের ব্যবস্থা করতে চান তিনি।