কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারির প্রভাবে বিভিন্ন খাতে অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে। এসব খাতে কোভিডের কারণে ক্ষতির পরিমাণ অপূরণীয় এবং দীর্ঘস্থায়ী। এ সঙ্কটকালীন সময়ে কোন কোন প্রতিষ্ঠান ইতিবাচক ব্যবসায়িক সাফল্য অর্জন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে রাকুতেন ভাইবার। চলতি বছরের প্রথমার্ধে রাকুতেন ভাইবার দল সম্পূর্ণ নতুন অভিজ্ঞতা লাভ করেছে এবং একইসঙ্গে তারা নতুন মাইলফলকও অর্জন করেছে। ২০১৯ সালের তুলনায়, ২০২০ সালের প্রথমার্ধে বাংলাদেশে ভাইবার ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে; অ্যাক্টিভিশনে বৃদ্ধি পেয়েছে ১৭ শতাংশ, গ্রুপ মেসেজ পাঠানো বৃদ্ধি পেয়েছে ২১ শতাংশ এবং ওয়ান-টু-ওয়ান মেসেজ বৃদ্ধি পেয়েছে ২৫ শতাংশ। গ্রুপে পাঠানো মেসেজগুলোর সংখ্যাও ইতিবাচকভাবে বেড়েছে, যার বৃদ্ধির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৮ শতাংশ। অন্যদিকে, কমিউনিটি ভিউয়ের পরিমাণ বেড়েছে ৭৭ শতাংশ। অনুরূপভাবে, বাকি অঞ্চলগুলোতেও ভাইবারের ব্যবহার বেড়েছে, বিশেষ করে গ্রুপ ও কমিউনিটির মধ্যে যোগাযোগের ক্ষেত্রে। এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে ২০১৯ সালের তুলনায় ভাইবার গ্রুপগুলোর মধ্যে বার্তা পাঠানোর সংখ্যা ইতিবাচকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে মিয়ানমারে ৪১ শতাংশ, নেপাল ৬৭ শতাংশ, শ্রীলঙ্কায় ৯১ শতাংশ এবং ভিয়েতনামে ৪৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। অনুরূপভাবে, কমিউনিটি এনগেজমেন্ট বেড়েছে, এক্ষেত্রে অধিকাংশ দেশগুলোতেই কমিউনিটি ভিউয়ের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। এর মধ্যে মিয়ানমারে ১০৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে এবং শ্রীলঙ্কা ও নেপালে প্রবৃদ্ধি বেড়েছে যথাক্রমে ১১৮ শতাংশ ও ১৯৫ শতাংশ। ফিলিপাইনেও কমিউনিটি এনগেজমেন্টের প্রবৃদ্ধিও বেড়েছে। এর মধ্যে কমিউনিটি ভিউয়ারের সংখ্যা বেড়েছে ২.৫ গুণ এবং কমিউনিটিতে মেসেজ পাঠানো বৃদ্ধি পেয়েছে ২.৭ গুণ। ব্যবহারকারীদের জীবনযাত্রায় সহায়ক ও তাদের আরো উন্নত অ্যাপ ব্যবহারের অভিজ্ঞতা দিতে ২০২০ সালের শুরুতে ব্যবহারকারীদের উপযোগী বেশ কয়েকটি নতুন ফিচার যুক্ত করেছে ভাইবার। যেমন: মাই নোটস ফিচারটি ভাইবার ব্যবহারকারীকে প্রতিদিনের কার্যতালিকা তৈরি করা ছাড়াও নানা বিষয় এক জায়গায় করতে সাহায্য করবে। ব্যবহারকারীর হোম পেজে বার্থডে রিমাইন্ডার প্রদর্শিত হবে; ফলে ব্যবহারকারী বুঝতে পারবে তাদের তালিকায় থাকা কারা তাদের বিশেষ দিনটি উদযাপন করেছে। ‘ডিসঅ্যাপিয়ারিং মেসেজেস’ ফিচারের মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা সংবেদনশীল টেক্সটের ক্ষেত্রে সময়সীমা নির্ধারণ করতে পারবেন। অন্যদিকে, জিআইএফ ক্রিয়েটর সহজ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ফোনের ভিডিওগুলোকে জিআইএফে পরিণত করে প্রত্যেকের অভ্যন্তরীণ সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটাবে।
কোভিড ১৯ সহায়তা কার্যক্রম ও কমিউনিটি এনগেজমেন্ট প্রবৃদ্ধি কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারির কারণে ঘরবন্দি মানুষের কথা বিবেচনা করে ও মুখোমুখি যোগাযোগ এড়াতে ভাইবার গ্রুপ কলে সর্বোচ্চ সংখ্যক অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা দ্বিগুণ করেছে। এর ফলে, ২০ জন মানুষ একসাথে গ্রুপ ভিডিও এবং অডিও কলে অংশ নিতে পারবে। ব্যবহারকারীদের কমিউনিটিগুলোর বার্তায় প্রতিক্রিয়া দেখানোর অনুমতি দিয়েছে ভাইবার, যা অনলাইন যোগাযোগকে করেছে আরো প্রাণবন্ত। মহামারির ফলে উদ্ভূত সঙ্কট মোকাবিলায়, ভাইবারে ইউনিসেফ বাংলাদেশ কমিউনিটি এ মহামারির বিরুদ্ধে কীভাবে লড়াই করতে হবে সে সম্পর্কে নিয়মিত টিপস পোস্ট করতে একটি কমিউনিটি চালু করেছে। এছাড়াও, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জন্য বিশেষ চ্যাটবট চালু করেছে ভাইবার। চ্যাটবটটির মাধ্যমে ডব্লিউএইচও’র ওয়েবসাইট থেকে ভাইরাস সংক্রান্ত হালনাগাদ ও সঠিক তথ্য সবার কাছে পৌঁছে যাচ্ছে এবং মেসেজিং অ্যাপে করোনাভাইরাস নিয়ে জানতে চাওয়া মানুষের প্রশ্নগুলোর উত্তরও প্রদান করা হচ্ছে। এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের শীর্ষ স্বাস্থ্য সংস্থাগুলো ভাইবারের সাথে অংশীদারিত্ব করেছে, যাতে বহুল ব্যবহৃত ও বিশ্বস্ত প্ল্যাটফর্মে বৈশ্বিক মহামারি নিয়ে সঠিক তথ্য পাঠিয়ে সহায়তা করা যায়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বাংলাদেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি।
গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারিত্ব কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারি নিয়ে মানুষকে নির্ভরযোগ্য এবং জীবনরক্ষামূলক তথ্য প্রদান এবং এ সময় শারীরিক দূরত্বের নিয়মগুলো মেনে প্রত্যকে যেনো অন্যেদের সাথে যুক্ত থাকতে পারে সে লক্ষ্যে ভাইবার বছরের প্রথম দিকে নতুন ও গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারিত্বও করেছে। নিজস্ব কমিউনিটি তৈরির মাধ্যমে ক্রেতাদের কাছে পৌঁছানোর জন্য বাংলাদেশে তিনটি গ্রুপ ভাইবারের অংশীদার হয়েছে। ওয়ালটন রেফ্রিজারেটর এবং হোম অ্যাপ্লায়েন্সেস দু’টি পৃথক কমিউনিটি চালু করেছে, যার মাধ্যমে তারা ক্রেতাদের নির্দিষ্ট পণ্যের চাহিদা অনুযায়ী সেবা দেয়। ওয়ালটনের সহযোগী প্রতিষ্ঠান মার্সেল রেফ্রিজারেটরও একটি কমিউনিটি তৈরি করেছে। বেঙ্গল বিটস তাদের নতুন ও ট্রেন্ডি মিম নিয়ে এর ফলোয়ারদের জন্য নিজস্ব কমিউনিটি চালু করে, যা নিঃসন্দেহে এ দুঃসময়ে তাদের মাঝে আনন্দ ছড়িয়ে দিচ্ছে। ফিলিপাইনে ভাইবার জনপ্রিয় মোবাইল গেম মোবাইল লেজেন্ডস: ব্যাং ব্যাংয়ের সাথে অংশীদারিত্ব করেছে, যা জনপ্রিয় এ গেমটির খেলোয়াড়দের তাদের ভক্তদের সাথে যুক্ত হওয়ার এবং তাদের নিজস্ব ভাইবার কমিউনিটি এবং অফিশিয়াল স্টিকার প্যাকের মাধ্যমে ইন-গেম ক্রেডিট অর্জনে সহায়তা করে। ফিলিপাইনের অন্যতম বৃহৎ মিডিয়া প্রতিষ্ঠান এবিএস-সিবিএন ভাইবারে এর উপস্থিতি বৃদ্ধি করেছে। তাদের নিজস্ব কমিউনিটি স্থাপন করেছে এবং ফিলিপাইনে ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তাদের সমর্থকদের জন্য কাপামিলিয়া স্টিকার অবমুক্ত করেছে। মিয়ানমারে ভাইবার দেশটির তৃতীয় বৃহত্তম টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠান মাইটেলের সাথে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারিত্ব করেছে। এ অংশীদারিত্বের কারণে মাইটেল ব্যবহারকারীরা কোনো ডাটা চার্জ ছাড়াই ভাইবারের হালনাগাদ সংস্করণ ডাউনলোড করতে পারবেন। যার ফলে, ব্যবহারকারীরা বার্মিজ কনভার্টার ফিচার ব্যবহার করতে পারবেন, যা জগি ফন্টকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইউনিকোড এবং ইউনিকোডকে জগি ফন্টে রূপান্তরিত করার পথ সুগম করেছে। নেপালের ১০টির অধিক শীর্ষস্থানীয় ব্যাংক ভাইবারের সাথে অংশীদারিত্বে ব্যাংকিং বট চালু করেছে, যার মাধ্যমে গ্রাহকরা ব্যালেন্স চেক, আর্থিক প্রতিবেদন ও মোবাইলে টপ আপ সেবা গ্রহণ করতে পারছে। নেপালের গুরুত্বপূর্ণ দু’টি সংস্থা এ বছর তাদের নিজস্ব ভাইবার কমিউনিটি চালু করেছে। এগুলো হলো নেপালের বৃহৎ ই-ওয়ালেট প্ল্যাটফর্ম ইসেয়া ও ইউএন ওমেন নেপাল (প্রতিষ্ঠানটি তাদের নিজস্ব স্টিকার প্যাকও চালু করেছে)। শ্রীলঙ্কার সবচেয়ে বড় সুপারমার্কেট চেইন কারগিলস ফুডসিটি ইতিমধ্যে একটি ই-কমার্স বট চালু করেছে। ন্যাশনাল লটারি শ্রীলঙ্কাও তাদের নিজস্ব ভাইবার বট ও কমিউনিটি চালু করেছে। পিপলস ব্যাংক নারী দিবসের বিশেষ বট ও স্টিকার প্যাক চালু করেছে। আলাদা আলাদা ভাষায় (সিংহলা/ তামিল/ ইংরেজি) তিনটি চ্যানেল পরিচালনা করা শ্রীলঙ্কার একমাত্র মিডিয়া প্রতিষ্ঠান নিউজফার্স্ট চলতি বছর বট, স্টিকার প্যাক ও কমিউনিটি তৈরি করেছে।
ফেসবুকের সাথে ব্যবসায়িক সম্পর্কচ্ছেদ মুনাফার লক্ষ্যে ধারাবাহিকভাবে ফেসবুক কর্তৃক ব্যবহারকারীর ডাটা বেহাত হওয়ার কারণে ফেসবুকের সাথে সব ধরণের ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিন্নের সিদ্ধান্তটি ছিলো এ বছরে প্রথমার্ধে ভাইবারের জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। গ্রাহক সুরক্ষায় অন্যান্য বড় প্রতিষ্ঠানের সাথে ফেসবুকের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় ভাইবার। গ্রাহকদের সুরক্ষার বিষয় সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা এ মেসেজিং অ্যাপটি তাৎক্ষণিকভাবে ফেসবুক নেটওয়ার্ক প্ল্যাটফর্মে তাদের সব ধরনের বিজ্ঞাপন স্থগিত করে। ভাইবার তাদের নিজেদের অ্যাপ থেকে ফেসবুক কানেক্ট এবং গিফি ফিচারগুলোও সরিয়ে নেয়। রাকুতেন ভাইবারের চিফ গ্রোথ অফিসার আনা জামেনস্কায়া বলেন, ‘বাংলাদেশের বাজার ও বাংলাদেশের গ্রাহকরা আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিগত বছরগুলোতে আমরা লক্ষ্য করেছি কীভাবে বাংলাদেশের মানুষ তাদের পছন্দের কমিউনিকেশন প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ভাইবারকে গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ ও এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে ভাইবারের ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি এটাই প্রমাণ করে যে, সামাজিক দূরত্বের বিধি থাকা সত্তে¡ও নিরাপত্তা ও সুবিধাকে অগ্রাধিকার দিয়ে মানুষ একে অন্যের সাথে ধারাবাহিক যোগাযোগ বজায় রাখতে পেরেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিগত কয়েক মাসে আমরা প্রত্যক্ষ করেছি ভাইবার মানুষের তাদের বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষিতে ক্ষমতায়নে সহায়তা করেছে। স্মার্টফোন ও ভাইবার অ্যাপের মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা পরিবার ও বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করতে পারে, উপার্জন করতে পারে, অনলাইনে বিনোদন লাভ করতে পারে, সংবাদ পেতে পারে এবং বাসায় থেকে সুরক্ষা নিশ্চিত করে কাজ সম্পন্ন করতে পারে।’ এ বছরের বাকি সময় সহ ভবিষ্যতেও বিশ্বে বৈশ্বিক মহামারির দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়বে। এমন পরিস্থিতিতে, বছরের প্রথমার্ধে প্রবৃদ্ধি ভাইবারকে গ্রাহকদের জীবনে মেসেজিং অ্যাপের সহজ ও সুবিধাজনক ব্যবহারে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে অঙ্গীকারবদ্ধ করে তুলেছে। জামেনস্কায়া বলেন, ‘আমরা ভাইবারকে আপনাদের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ অ্যাপে পরিণত করার স্বপ্ন দেখি, যা আপনাদের আরও বেশি কিছু অর্জনে সহায়তা করবে। পাশাপাশি, হাতের নাগালে যোগাযোগ সমাধান নিশ্চিত করবে।’