ইন্টারভিউ

‘মানুষের চাহিদাকে গুরুত্ব দিয়ে নতুন কিছু করুন, টাকা এমনিতেই আসবে’

By Baadshah

December 01, 2018

ছোটবেলা থেকেই ভাবতেন কিছু একটা করবেন। এমন কিছু করবেন যাতে দেশ ও দেশের মানুষের উপকার হয়। এ ভাবনা থেকেই মাসুদ পারভেজ রাজু চালু করেন কেয়ার টিউটরস নামের প্রতিষ্ঠান। এটি মূলত টিউশনভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান যেখান থেকে অভিভাবকরা বাচ্চাদের জন্য টিউটর খুঁজে পাবেন এবং টিউটররাও পাবেন নতুন টিউশন। কেয়ার টিউটরস একটি অনলাইন প্লাটফর্ম। এজন্য বাড়তি কোনও ঝামেলাও নেই।

বর্তমানে রাজধানী ঢাকায় বেশ সাড়া ফেলেছে কেয়ার টিউটরস। তরুণদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে প্রতিষ্ঠানটি। অবশ্য এখনও পর্যন্ত নিজেকে পুরোপুরি সফল বলতে নারাজ এর প্রতিষ্ঠাতা মাসুদ পারভেজ রাজু। তার ভাষায়, “কিছুটা সফল হয়েছি। সামনে আরও অনেক পথ বাকি।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী থাকার সময় রাজু নিজে উপলব্ধি করেন টিউশন সংক্রান্ত নানা জটিলতার। তখন টিউশন নিতে গিয়ে বন্ধুদের প্রতারিত হতে দেখেছেন। এছাড়া অভিভাবকদের প্রতারিত হওয়ার বিষয়টিও তার নজর এড়ায়নি। এরকম অভিজ্ঞতা থেকে ভাবতে শুরু করেন টিউশন সংক্রান্ত জটিলতা কমানোর জন্য কিছু করা যায় কীনা। সেই ভাবনা থেকেই কেয়ার টিউটরস চালু করেন ২০১২ সালে। তখন ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে কেয়ার টিউটরসের যাত্রা শুরু হয়। মানুষও ভালো সাড়া দিতে শুরু করে। তখন এটাকে আরও বড় পরিসরে নিয়ে যাওয়ার জন্য ২০১৪ সালে কেয়ার টিউটরসের ওয়েবসাইট চালু করেন। এখন সার্বক্ষণিক সেবা দেয়ার জন্য প্রতিষ্ঠানটির ১৫ জনের ছোট একটি টিম রয়েছে।

একদিনে এই অবস্থায় আসেনি কেয়ার টিউটরস। এর পেছনে রয়েছে অনেক ত্যাগের গল্প। মাত্র ১৮ হাজার টাকা দিয়ে যাত্রা শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। ধীরে ধীরে সামনে এগোয় তারা। রাজুকেও কম চ্যালেঞ্জ নিতে হয়নি।

এ সম্পর্কে তিনি বলেন, “পড়াশুনা শেষ করার পর ইন্টার্নশীপ থেকেই আমরা চাকরি হয়েছিল। তখন চাকরির পাশাপাশি এটা দেখতাম। কিন্তু এক সময় মনে হলো, দুইটা এক সঙ্গে করা সম্ভব না। যেকোনও একটা আমাকে ছাড়তে হবে। শেষ পর্যন্ত ছাড়ার জন্য চাকরিটাকেই বেছে নিলাম। এরপর দিনরাত এটাতে সময় দিয়েছি।”

বর্তমানে অভিভাবকদের আস্থা অর্জনকে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন রাজু। এ সম্পর্কে রাজু বলেন, “টিউশন নিয়ে এতো বাজে কাজ হয়েছে যে, এখন মানুষকে বোঝাতে সময় লাগে। বাজে কাজ বলতে ধরুন, কেউ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী না, অথচ টিউশন নেওয়ার ক্ষেত্রে তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বলে চালিয়ে দেওয়া হয়েছে।”

এই চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি আরও কিছু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছেন রাজু। তিনি বিবিএ-এর শিক্ষার্থী হওয়ায় টেকনোলজি সম্পর্কে সবকিছু আলাদা করে বুঝতে হয়েছে তাকে। এগুলো ছাড়াও বিনিয়োগ, ডিজিটাল মার্কেটিং ইত্যাদি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

উদ্যোক্তা হওয়ার বিষয়টিকে লম্বা একটি পথ (জার্নি) হিসেবে দেখেন রাজু। এতে অনেক বাধা আসবে, পদে পদে বাধা আসবে। সবগুলোই সমাধান করে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। তবেই সফল হওয়া সম্ভব। এছাড়া ফোকাস ঠিক রাখতে হবে। রাজু বলেন, “আমি এমন অনেক উদ্যোগ দেখেছি, যারা দুই বছরও টিকেনি। শুধু ফোকাস ঠিক ছিল না বলে তাদের এ অবস্থা হয়েছে। এজন্য ফোকাস ঠিক রেখে মানুষ কী চায় সেটা বিবেচনা করে কাজ করতে হবে।”

সফল হওয়ার জন্য নতুন উদ্যোক্তাদের অনেক ধৈর্যশীল ও অধ্যাবসায়ী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন রাজু। তার ভাষায়, “অধ্যবসায়ী হতে হবে, হাল ছাড়া যাবে না। একটি উদ্যোগের শেষ দেখে ছাড়তে হবে। কেয়ার টিউটরের জন্য একটা সময় আমি টানা এক বছর একটা রুমে বসে কাজ করেছি। সফল হওয়া সহজ নয়। এজন্য পরিশ্রমের পাশাপাশি ধৈর্যও ধরতে হবে। শুরুতেই অর্থ উপার্জনের চিন্তা করলে হবে না। মানুষের চাহিদাকে গুরুত্ব দিয়ে নতুন কিছু করুন, টাকা এমনিতেই আসবে।”