মেট্রোনেট নিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ পা্ওয়া যাচ্ছে। মালিক ও পরিচালকদের দ্বন্দ্বে প্রতিষ্ঠানটি বিপাকে। এক পক্ষের দাবি, বাংলাদেশের বৃহত্তম ইন্টারনেট ভিত্তিক তথ্যপ্রযুক্তি ও টেলিযোগাযোগ সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান মেট্রোনেট বাংলাদেশ লিমিটেড বন্ধের গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। মেট্রোনেটের সেবা বন্ধ হলে হুমকির মুখে পড়তে পারে সারাদেশের ইন্টারনেট সেবা।
মেট্রোনেটের মাত্র ২ শতাংশ মালিক ও বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস)-এর সাবেক সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবিরের বিরুদ্ধে নিয়মনীতি ভঙ্গ করে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে।
এর ফলে দেশের জরুরি তথ্যসেবা ৯৯৯, সকল ব্যাংক, মোবাইল ফিন্যান্স সার্ভিস বিকাশ, নগদ, চট্টগ্রাম স্টক একচেঞ্জ, জাতীয় পরিচয়পত্র অনুসন্ধান সেবা, ই-পাসপোর্টসহ রাষ্ট্রীয় ও বেসরকারি বহু প্রতিষ্ঠানের ইন্টারনেট ভিত্তিক সেবা বিঘ্ন ঘটার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। রবিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন মেট্রোনেটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তাফা রফিকুল ইসলাম।
সংবাদ সম্মেলনে এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন কোম্পানির অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফেরদৌস আজম খান, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুবুল আলম, সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট রাহাত খান প্রমুখ। মেট্রোনেটের শেয়ারের হোল্ডার প্রতিষ্ঠান রহিম আফরোজ ও সৈয়দ আলমাস কবির যোগসাজশে ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে মেট্রোনেট থেকে প্রায় ৩ কোটি টাকা এবং ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে প্রায় ৮ কোটি টাকা শেয়ার ক্রয়ের নামে সরিয়ে নিয়েছে।
অবৈধভাবে কোম্পানির ব্যাংক একাউন্ট থেকে মোট প্রায় ১১ কোটি টাকা তুলে নেওয়াতে শিগগির তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান মোস্তাফা রফিকুল ইসলাম। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ২০২২ সালের ৫ ডিসেম্বরের পর হতে বর্তমান বোর্ড কোম্পানির দৈনন্দিন কার্যক্রম সুষ্ঠভাবে পরিচালনা করে আসছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় সৈয়দ আলমাস কবির ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ৮ ডিসেম্বর হতে বিভিন্ন ব্যাংকে লেনদেন বন্ধের জন্য বেআইনিভাবে চিঠি প্রদান করে চলেছেন।
এছাড়াও তিনি বিভিন্ন ব্যাংকসহ গ্রাহকদের বিল পরিশোধ না করার জন্য চিঠি প্রদান করেন। কোম্পানি বিরোধী কার্যকলাপের কারণে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও পদধারী সৈয়দ আলমাস করিবকে প্রথমে সিইও পদ হতে অ্যাডভাইজার পদে এবং পরবর্তীতে তার এই কোম্পানির বিপক্ষে অসাধু কার্যকলাপ এবং ধারাবাহিকভাবে ৩টির অধিক বোর্ড মিটিংয়ে অনুপস্থিত থাকার কারণে তাকে পরিচালক এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক উভয় পদ হতে অব্যাহতি দেয়া হয়।
অনেক গরি মশির পর ৫ ডিসেম্বর একটি বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং ফ্লোরা টেলিকম লিমিটেডের মনোনীত পরিচালক হিসেবে আমি মোস্তাফা রফিকুল ইসলাম ও ফারাহ ইসলাম এবং স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে ফেরদৌস আজম খান অনুমোদন পাই। সে অনুযায়ী, আমরা আরজেএসসিতে নথি জমা দিয়ে অনুমোদন নিয়ে মেট্রোনেট বাংলাদেশ লিমিটেডের নতুন বোর্ড গঠন করি।
মোস্তাফা রফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের বোর্ড যখন সুষ্ঠুভাবে দৈনন্দিন কর্ম পরিচালনা করছিল তার মাস খানেক পর রহিম আফরোজ গ্রুপও বোর্ডে প্রবেশ করার জন্য আদালতে গেলে ২৩০০ কোটি টাকার অধিক ঋণ খেলাপি হিসেবে তাদের আবেদন নাকচ করে দেন, পরবর্তীতে তারা উচ্চতর আদালতে এসে প্রথমে বোর্ডের বিপক্ষে ইনজাংশন চেয়ে নেন। ইনজাংশন পাওয়ার পর বোর্ড মাননীয় সুপ্রিম কোর্টের অ্যাপিলেড ডিভিশন হতে আবেদন করে ওই ইনজাংশনের বিপক্ষে স্টাটার্স-কো অর্ডার অর্জন করে দৈনন্দিন কার্যক্রম চালাচ্ছে।
এই অবস্থায় রহিম আফরোজ গ্রুপ এবং আলমাস কবির অফিসে প্রবেশ করে আদালত অবমাননা করছে।
মেট্রোনেট এর বক্তব্য:
আপনি জানেন যে, মেট্রোনেট বাংলাদেশ লিমিটেড ২০০১ সালে দেশের মেট্রোপলিটন এলাকাসমূহে নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সেবা প্রদানের লক্ষ্যে দেশে প্রথম মেট্রোপলিটন এরিয়া নেটওয়ার্ক স্থাপনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়। ৫১ শতাংশ মালিকানা নিয়ে ২০০৪ সাল থেকে বাংলাদেশের স্বনামধন্য উদ্যোক্তা রহিমআফরোজ গ্রুপের নেতৃতে বিগত প্রায় বিশ বছর ধরে সুনামের সাথে পরিচালিত হয়ে আসছে প্রতিষ্ঠানটি।
তথ্যপ্রযুক্তিতে সর্বসাধারণের অভিগমন সহজীকরণে বিশেষ অবদানের অংশ হিসেবে আমাদের সেবাগ্রহীতাদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯, স্থানীয়-বহুজাতিক ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক-বীমা, স্টক একচেঞ্জ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিল্পকারখানা, বিদেশি দূতাবাস ও দাতা সংস্থা-সহ চার সহস্রাধিক সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।
সম্প্রতি আদালতের আদেশ অমান্য করে মি. মোস্তাফা রফিকুল ইসলাম ডিউক নামে একজন ব্যক্তি নিজেকে এই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দাবি করে আসছেন। তিনি তাঁর সহযোগী মি. ফেরদৌস আজম খান ও মিজ ফারাহ ইসলামের যোগসাজশে মহামান্য উচ্চ আদালতে বিচারপ্রক্রিয়াকে অবজ্ঞা করে জোরপূর্বক অবৈধভাবে এই প্রতিষ্ঠান দখলে নেওয়ার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন এবং জালিয়াতির মাধ্যমে ইতোমধ্যে ০৭ (সাত) কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
এরই ধারাবাহিকতায় গত ০১ মার্চ ২০২৩ খ্রি. বুধবার তাঁর আরেক সহযোগী মি. মাহবুবুল আলম-এর প্ররোচনায় মি. ফেরদৌস আজম খান ১০/১২ জন বহিরাগত সন্ত্রাসীকে সাথে নিয়ে মেট্রোনেট বাংলাদেশ লিমিটেড-এর বনানীস্থ ডাটা সেন্টার কার্যালয়ে হামলা করেন। এই হামলা করে তাঁরা মূলত জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯, ই-পাসপোর্ট সেবা এবং সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তথা ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ডাটা সংযোগ সার্ভিস বন্ধ করার মাধ্যমে রহিমআফরোজ গ্রুপকে মেট্রোনেট বাংলাদেশ লিমিটেড পরিচালনায় অক্ষম হিসেবে প্রমাণ করার অপচেষ্টা করেছিল।
এর পাশাপাশি বর্ণিত ব্যক্তিগণ মেট্রোনেট বাংলাদেশ লিমিটেড-এর নামে ভুয়া ডোমেইন চালু করেন এবং তা আমাদের ক্রেতা ও সেবা-গ্রহীতাদের মাঝে প্রচার করে প্রতারণার মাধ্যমে অবৈধভাবে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার পাঁয়তারা করছেন।
এমতাবস্থায় আমরা জানতে পেরেছি যে মি. মোস্তাফা রফিকুল ইসলাম ডিউক আদালতের আদেশ অমান্য করে নিজেকে মেট্রোনেট বাংলাদেশ লিমিটেড-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক দাবি করে আজ (রবিবার ০৫ মার্চ ২০২৩ খ্রি.) বিকেলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি’র নসরুল হামিদ মিলনায়তনে সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে বিভিন্ন অসত্য ও অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যা দাবি ও তথ্য পেশ করেছেন।