২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সিম ও রিম কার্ড সম্প্রর্কিত সকল সেবার উপর সম্পূরক শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। ফলে কেউ যদি ১০০ টাকা ফোনে রিচার্জ করেন, তাহলে ৭৫ দশমিক ৩ টাকার সেবা নিতে পারবেন। বাকি ২৪ দশমিক ৯৭ টাকা যাবে কেটে নেবে সরকার। এদিকে বাজেট পাস হওয়ার আগেই বর্ধিত কর কর্তন শুরু হয়েছে।
১১ জুন বিকাল তিনটায় সংসদে বাজেট উত্থাপন করা হয়। ১১ জুন দিবাগত রাত ১২ টা থেকে বর্ধিত কলরেট চালু হয়েছে। মোবাইল ফোনে কথা বলার পাশাপাশি ইন্টারনেট খরচও বেড়েছে। মোবাইল ফোনের সিম কার্ড ব্যবহারের মাধ্যমে প্রদত্ত সেবার ওপর সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়ে প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণার পরই মধ্যরাত থেকে এসএমএস, কথা বলা ও ইন্টারনেট ব্যবহারে গ্রাহকদের বাড়তি অর্থ গুনতে হচ্ছে। পাঁচ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) গ্রাহকের কাছ থেকে এই বাড়তি অর্থ নেয়া শুরু করেছে।
নতুন করহারে মোবাইল সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর (মূসক বা ভ্যাট) ১৫ শতাংশ, সম্পূরক শুল্ক ১৫ শতাংশ ও সারচার্জ ১ শতাংশ। ফলে মোট করভার দাঁড়িয়েছে ৩৩ দশমিক ৫৭ শতাংশ। এর মানে হলো, প্রতি ১০০ টাকা রিচার্জে সরকারের কাছে কর হিসেবে যাবে ২৫ টাকার কিছু বেশি। এতদিন তা ২২ টাকার মতো ছিল। বিশ্লেষকেরা এবং কোম্পানিগুলো বলে আসছিল, মোবাইল সেবায় কর বাড়ানোর ফলে সাধারণ মানুষ চাপে বেশি পড়বে।
মোবাইল সেবার ওপর কর প্রায় প্রতিবছরই বাড়ে। এনবিআর ও মোবাইল অপারেটরদের সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে মোবাইল সেবার ওপর ১ শতাংশ সারসার্জ আরোপ করা হয়। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আরোপ হয় ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট ও ৩ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করা হয়। আর চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে সম্পূরক শুল্ক আরও বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে।
নতুন অর্থবছরের (২০২০-২১) প্রস্তাবিত বাজেটে মোবাইল সেবার ওপর সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাবে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম। সেই সঙ্গে, তিনি বিষয়টি বিবেচনার জন্য সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানিয়েছেন।
তারানা হালিম বলেন, ‘করোনার সময় মোবাইলে কথা বলা, ভিডিও কল, অনলাইনে কাজ করা- এখন যেমন সামাজিক দূরত্ব পরোক্ষভাবে অত্যন্ত কার্যকর। তেমনি মানসিক সুস্বাস্থ্যের জন্য বিভিন্ন দেশ ইন্টারনেটের মাধ্যমে কাজের সাথে, স্বজনদের সাথে সংযুক্ত থাকতে উৎসাহিত করছে জনগণকে।’
তার দায়িত্বপালনের সময়ের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘উল্লেখ্য যে, আমি ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের প্রতিমন্ত্রী থাকাকালীন কলরেট বৃদ্ধিসহ গ্রাহকদের ওপর চাপ পরে এমন কোনো কিছুর সাথে একমত হইনি। কারণ মোবাইল ও ইন্টারনেটের ব্যবহার বৃদ্ধির জন্য ভয়েস ও ডাটা এবং ইন্টারনেট ব্যবহারে মানুষকে আরো উৎসাহিত করার পূর্বশর্ত সাশ্রয়ী মূল্য। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের জন্য।’
বাজেট প্রতিক্রিয়ায় বাংলালিংক-এর সিইও এরিক অস বলেন, ‘আমাদের গ্রাহকরা ইতোমধ্যেই উচ্চ করের বোঝা বহন করে টেলিকম সেবা গ্রহণ করছেন। এই পরিস্থিতিতে অতিরিক্ত ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধি করা হলে তা অপেক্ষাকৃত স্বল্প আয়ের গ্রাহকদের প্রভাবিত করবে। এর ফলে বাংলাদেশের ডিজিটালাইজেশনের প্রক্রিয়ায় তাদের অংশগ্রহণ সীমিত হয়ে পড়বে। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের উপর করোনা মহামারির অর্থনৈতিক প্রভাবের কথা বিবেচনা করে সরকারের কাছে আমরা ইন্টারনেটের উপর থেকে ভ্যাট প্রত্যাহারেরও দাবি জানাচ্ছি। এছাড়া যেহেতু আমরা ব্যবসায়িকভাবে এখনো লাভজনক অবস্থানে যেতে পারিনি, সেহেতু আমরা সরকারকে অনুরোধ করবো, আমাদের আয়ের উপর ন্যূনতম করের হার যেনো পুনর্বিবেচনা করা হয়।’
রবি আজিয়াটা লিমিটেডের চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম বলেন, টেলিযোগাযোগ খাতের ওপর আরোপিত ২ শতাংশ ন্যূনতম আয় কর প্রস্তাবিত বাজেটে প্রত্যাহার না হওয়াটা অত্যন্ত দুঃখজনক। বিশেষ করে করোনা মহামারি পরিস্থিতিতে দেশের মানুষকে ডিজিটাল সেবা প্রদান এবং ডিজিটাল ইকোসিস্টেম তৈরিতে অপারেটরদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার পরেও ২ শতাংশ ন্যূনতম করের বোঝা প্রত্যাহার না হওয়াটা আমাদের জন্য অত্যন্ত হতাশাব্যঞ্জক। আমরা মনে করি, বিষয়টি পুর্নবিবেচনার সুযোগ এখনো আছে এবং এ বিষয় একটি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত সরকার নেবে।
তিনি আরো বলেন, সব ধরনের মোবাইল সেবা ব্যবহারে সম্পূরক শুল্ক (এসডি) আরও ৫ শতাংশ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত অত্যন্ত দুঃখজনক। এনবিআরের জারি করা এসআরও অনুযায়ী, ১১ জুন মধ্যরাত ১২টা থেকে সব ধরনের মোবাইল সেবার ওপর নতুন এসডি হার কার্যকর করা হয়েছে। এ বিষয়ে সকল প্রস্তুতি শেষ করা হয়েছে। উচ্চ করভারে জর্জরিত মোবাইল সেবার ওপর তাই নতুন করে ৫ শতাংশ এসডি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত গ্রাহকদের দুর্দশা আরও বাড়াবে। করোনা মহামারির বর্তমান পরিস্থিতিতে সাধারণ জনগণের একটি বড় অংশ এখন ইন্টারনেটভিত্তিক ডিজিটাল যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন, এসডি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত এ ধারাতেও বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে সরকারের যে লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে সেখানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলা টেলিযোগাযোগ খাতের সমস্যাগুলো প্রস্তাবিত বাজেটে সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষিত থেকে গেছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।’