করপোরেট

মোবাইল অ্যাপে অর্থ স্থানান্তর কতটা জনপ্রিয়?

By Baadshah

February 04, 2018

ইন্টারনেট ব্যাংকিং রয়েছে এমন ছয় ব্যাংকের গ্রাহক আরেক ব্যাংকের গ্রাহকের হিসাবে মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে তহবিল স্থানান্তর করতে পারেন। গত নভেম্বরে চালু হওয়া এ সেবার গ্রাহক দ্রুত বাড়ছে। প্রথম মাসে এক হাজার ১৩১ জন গ্রাহক নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে এক কোটি ৪৬ লাখ টাকা স্থানান্তর করেন। আর ডিসেম্বরে এক হাজার ৬৮৫ জন গ্রাহক স্থানান্তর করেছেন ২ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইচের (এনপিএস) আওতায় আন্তঃব্যাংক এটিএম ও পয়েন্ট অব সেলসের (পস) পাশাপাশি এ সেবা দেওয়া হচ্ছে।

ইন্টারনেট ব্যাংকিং তহবিল স্থানান্তর (আইবিএফটি) পদ্ধতির আওতায় বর্তমানে ব্যাংক এশিয়া, ডাচ্‌-বাংলা, সিটি ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স, মিডল্যান্ড ও স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক আন্তঃব্যাংক ইন্টারনেট সেবা দিচ্ছে। এসব ব্যাংকের গ্রাহক অন্য ব্যাংকের গ্রাহককে দিনে পাঁচ বারে সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা পর্যন্ত স্থানান্তর করতে পারেন। অর্থ স্থানান্তর ছাড়াও এ উপায়ে ক্রেডিট কার্ডের বিল পরিশোধ, ডিপিএসের মাসিক কিস্তি জমা, ঋণের মাসিক কিস্তি জমা, বীমা প্রিমিয়াম প্রদান, বিজনেস টু বিজনেস (বিটুবি) পেমেন্ট করতে পারছেন গ্রাহক। আবার নিজের ব্যাংক হিসাব থেকে ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডে এবং ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড থেকে ব্যাংক হিসাবে অর্থ স্থানান্তরও করা যাচ্ছে।

এতে করে ব্যাংকের মধ্যস্থতা ছাড়াই গ্রাহক নিজের মতো করে যে কোনো সময় দ্রুততার সঙ্গে টাকা পাঠাতে পারছেন। তবে ব্যাংকগুলোর এ নিয়ে আরও প্রচার দরকার। ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার পদ্ধতিতে এক ব্যাংকের গ্রাহক আরেক ব্যাংককের গ্রাহককে পরিশোধ করতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে ব্যাংক কর্মকর্তার মাধ্যমে এ ধরনের স্থানান্তর করতে হয়। তবে এক্ষেত্রে তার প্রয়োজন নেই।

আন্তঃব্যাংক এটিএম, পয়েন্ট অব সেলস (পস), ইন্টারনেট ব্যাংকিং এবং মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দিতে ২০১২ সালের ডিসেম্বরে ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইচ বাংলাদেশ বা এনবিএসবি চালু হয়। বেশ আগে থেকে আন্তঃব্যাংক এটিএম ও পস সেবা চালু থাকলেও গত ২ নভেম্বর আন্তঃব্যাংক ইন্টারনেট ব্যাংকিং তহবিল স্থানান্তর চালু হয়েছে। শিগগিরই চালু হবে আন্তঃব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিং সেবা। এনপিএসবির আওতায় বর্তমানে ৫১টি ব্যাংকের এটিএম বা পস ব্যবহার করে অন্য ব্যাংকের গ্রাহক টাকা তুলতে পারেন। গত ডিসেম্বরে আন্তঃব্যাংক এটিএম বুথ ব্যবহার করে ১৩ লাখ ৫৪ হাজার গ্রাহক ৯৫৫ কোটি টাকা লেনদেন করেছেন। আগের মাসে ১৩ লাখ ২১ হাজার গ্রাহক ৯২৬ কোটি টাকা লেনদেন করেন। আন্তঃব্যাংক পসের মাধ্যমে লেনদেন হওয়া ১৪০ কোটি টাকা আগের মাসের তুলনায় প্রায় ২১ শতাংশ বেশি।

এনপিএসবির আওতায় নির্দিষ্ট পরিমাণের ছোট আকারের পরিশোধ করা হয়। এর বাইরে আরটিজিএস, বিএসিএইচ ও ইএফটিএনের মতো ইলেকট্রনিক প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আন্তঃব্যাংকে যে কোনো অঙ্কের লেনদেন করতে পারেন গ্রাহক। এসব উপায়ে গত ডিসেম্বরে মোট ৩ লাখ ৫৪ হাজার কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। দৈনিক লেনদেনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৭৯৫ কোটি টাকা। আগের বছরের একই সময়ে দৈনিক গড় লেনদেন ছিল ১০ হাজার কোটি টাকার কম। এর মধ্যে গত ডিসেম্বরে আরটিজিএসে দৈনিক গড়ে ৫ হাজার ৮৩৩ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। বিএসিএইচে লেনদেন হয়েছে ৫ হাজার ৫৯০ কোটি টাকা। আর ইএফটিএনে দৈনিক গড়ে ৩৬৯ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে।

মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়নসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক লেনদেন কমাতেই নগদ লেনদেন কমাতে চাইছে সরকার। এসব ইলেকট্রনিক পরিশোধ পদ্ধতির প্রচারণা বাড়ানোর পাশাপাশি সরকারি পরিশোধ ব্যবস্থার আধুনিকায়নের সুপারিশ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ ছাড়া নগদ, পে-অর্ডার বা ম্যানুয়াল চেকের বিপরীতে যে কোনো অংকের পরিশোধ যে ঝুঁকিপূর্ণ সে বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়াতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া নগদ লেনদেনের ক্ষেত্রে বাড়তি চার্জ আরোপ করে নিরুৎসাহিত করার বিষয়ে ভাবছে সরকার।