কে জানতো ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা মোস্তাফা জব্বার মন্ত্রী হবেন? ২০১৮ সালের প্রথম দিনেই তাঁর জন্য চমক ছিল। এক ফোনকলেই বদলে গেল ভাগ্য।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী হলেন শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তরের মহানায়ক এবং তথ্যপ্রযুক্তিবিদ মোস্তাফা জব্বার।
২ জানুয়ারি মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বঙ্গভবনে শপথ পাঠ করার বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সভাপতি মোস্তফা জব্বারকে। শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম।
তিনি যেহেতু সংসদ সদস্য নন, তাই তাঁকে মন্ত্রিসভায় আনা হয়েছে টেকনোক্র্যাট হিসেবে।
৬৮ বছর বয়সী মোস্তফা জব্বারই প্রথম ১৯৮৮ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় বাংলা কীবোর্ড ও সফটওয়্যার প্রকাশ করেন। সেটি প্রথমে মেকিন্টোস কম্পিউটারের জন্য প্রণয়ন করলেও পরে ১৯৯৩ সালের ২৬ মার্চ উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের জন্য বিজয় বাংলা কীবোর্ড ও সফটওয়্যার প্রকাশ করেন।
১৯৪৯ সালের ১২ আগস্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ থানায় জন্ম নেওয়া এই প্রযুক্তিবিদ ১৯৭২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ে স্নাতক পাস করেন। ছাত্রাজীবনে তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন এবং ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে মুজিব বাহিনীর খালিয়াজুরি থানারসহ অধিনায়ক ছিলেন।
১৯৭২ সালের ১৬ জানুয়ারি ছাত্র থাকাকালেই মোস্তাফা জব্বার সাংবাদিকতার মধ্য দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। সেই সময়ে তিনি সাপ্তাহিক গণকণ্ঠ পত্রিকায় রিপোর্টার হিসেবে কাজে যোগ দেন। ১৯৭৩ সালে তিনি ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ সালে গণকণ্ঠ বন্ধ হয়ে যাবার পর তিনি ট্রাভেল এজেন্সি, মুদ্রণালয়, সংবাদপত্র ইত্যাদি ব্যবসায় যুক্ত হন।
তিনি ট্রাভেল অ্যাজেন্টদের সংগঠন আটাব (অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল অ্যাজেন্টস অব বাংলাদেশ)- এর সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি ১৯৮৭ সালের ২৮ এপ্রিল মেকিন্টোস কম্পিউটারের বোতাম স্পর্শ করার মধ্য দিয়ে কম্পিউটার ব্যবসায় প্রবেশ করেন। সেই বছরের ১৬ মে তিনি কম্পিউটারে কম্পোজ করা বাংলা সাপ্তাহিক পত্রিকা আনন্দপত্র প্রকাশ করেন।
আনন্দ প্রিন্টার্স এবং আনন্দ মুদ্রায়ণের প্রতিষ্ঠাতাও মোস্তাফা জব্বার। তার হাতেই গড়ে ওঠে বাংলাদেশের প্রথম ডিজিটাল বাংলা নিউজসার্ভিস আনন্দপত্র বাংলা সংবাদ বা আবাস। তিনি এর চেয়ারম্যান ও সম্পাদক।
তিনি ইতিপূর্বে বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির নির্বাহী পরিষদের সদস্য, কোষাধ্যক্ষ ও চারবার সভাপতি হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া তিনি বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস ( বেসিস ) এর প্রতিষ্ঠাতা সহ-সভাপতি ও পরিচালক এবং বাংলাদেশ কম্পিউটার ক্লাবের সভাপতি ছিলেন।
তথপ্রযুক্তিতে বিশেষ অবদান রাখা এবং বিজয় বাংলা কীবোর্ড ও সফটওয়্যার আবিষ্কার করার জন্য মোস্তাফা জব্বার পেয়েছেন, ‘ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের সেরা সফটওয়্যারের পুরস্কার’, ‘পশ্চিমবঙ্গের কমপাস কম্পিউটার মেলার সেরা কমদামী সফটওয়্যারের পুরস্কার’।
এছাড়াও, দৈনিক উত্তরবাংলা পুরষ্কার, পিআইবির সোহেল সামাদ পুরস্কার, সিটিআইটি আজীবন সম্মাননা ও আইটি এ্যাওয়ার্ড, বেসিস আজীবন সম্মাননা পুরস্কার, বেস্টওয়ে ভাষা-সংস্কৃতি পুরস্কার বৃহত্তর ময়মনসিংহ সমন্বয় পরিষদ সম্মাননা পুরস্কারসহ অসংখ্য সম্মাননা ও শুভেচ্ছা পুরস্কার রয়েছে তাঁর ঝুলিতে।