আমাদের দেশের বাসাবাড়ি-অফিস-আদালতে ব্যবহৃত বেশির ভাগ লিফটের দরজাই সাধারণত ল্যান্ডিং ডোর (শ্যাফট) এবং সেন্সরযুক্ত কেবিন ডোরের হয়ে থাকে। কেবিন দরজাগুলো অটো সেন্সর সেন্ট্রাল ডোরের হয়ে থাকে, যেগুলোর অ্যালুমিনিয়ামের প্যানেলগুলো বিপরীত দিক থেকে পরস্পরের দিকে আসে। আরেক প্রকার লিফটে প্যানেলগুলো সাধারণত একসঙ্গে একই পাশ থেকে আসে। এদের বলা হয় অটো টেলিস্কোপিক সেন্সরড ডোর। সেন্সরগুলোই প্রধানত মানুষের আসা-যাওয়া অনুযায়ী খোলে ও বন্ধ হয়।
দুর্ঘটনা এড়াতে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের কোনো বিকল্প নেই। শুধু সেন্সরই নয়, লিফটের মেশিনরুমের ড্রাইভ ইউনিট এবং এর সঙ্গে সংযুক্ত যন্ত্রাংশগুলোরই সময়মতো রক্ষণাবেক্ষণ খুব জরুরি। কারণ, মনে রাখা দরকার, লিফট চলে পুরো একটা সিস্টেমে, যেখানে কন্ট্রোলার ইউনিট যেমন লিফটের পুরো ওঠানামার বিষয়টাকে নিয়ন্ত্রণ করে, তেমনি ড্রাইভ ইউনিটও একই সঙ্গে সমান গুরুত্বপূর্ণ। হাইড্রোলিক মোটরযুক্ত এ যন্ত্রের সঙ্গে আরও যুক্ত থাকে পাম্প ও ভালভ। যেগুলোর সমন্বিত কর্মপ্রক্রিয়ায় চালিত হয় একটি প্যাসেঞ্জার অটো লিফট।
বাড়িতে যখন লিফট লাগাবেন, তার আগে লিফট আধুনিক কি না, যন্ত্রপাতি ঠিক আছে কি না, রক্ষণাবেক্ষণের চুক্তির মেয়াদ কত দিন, সেটা খেয়াল রাখতে হবে। লিফট লাগানোর পর বেশ কিছুদিন শুধু পরীক্ষামূলকভাবে চালাতে হবে। প্রাথমিক সমস্যাগুলো সাধারণত সে সময়ই ধরা পড়ে। উন্নত দেশে লিফটের দরজা স্বচ্ছ রাখা হয়। আজকাল আমাদের দেশেও অনেকে এমন লিফট ব্যবহার করেন। লিফট বন্ধ হলে অন্ধকারে ভয় পেয়ে হৃদ্যন্ত্রে সমস্যা হয় কারও কারও। লিফট বন্ধ হলেও ভেতর থেকে বাইরে দেখতে পেলে মানসিকভাবে কিছুটা স্বস্তিবোধ করা যায়।
লিফট লাগানোর পর ভেতরের বাতি, ফ্যান, বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা বারবার যাচাই-বাছাই করে নিতে হবে। জরুরি অবতরণের জন্য বিশেষ একটি যন্ত্র (ইমারজেন্সি ল্যান্ডিং ডিভাইস—ইএলডি) ব্যবহার করা হয়, এতে লিফট নির্দিষ্ট একটি তলায় গিয়ে আটকে যাবে। ধরা যাক, আপনি থাকেন ১৮ তলায়, লিফট ১৬ ও ১৭–এর মাঝে আটকে গেল। ইলেকট্রিসিটি না থাকলেও একটি নির্দিষ্ট তলায় লিফট থামবে।
প্রতি মাসে অন্তত দুবার লিফটের রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে। রুটিনমাফিক এই কাজ করার জন্য ভালো ভালো কিছু লিফট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানও আছে। তাদের সাহায্য নিতে পারেন। আবার ফ্ল্যাট কেনার সময় বাড়ি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে লিফট সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের চুক্তি কত বছরের হয়েছে, কত দিন পরপর রক্ষণাবেক্ষণ করবেন, সেটা উল্লেখ আছে কি না, দেখে নিতে হবে।
দেখা গেল, লিফটের দরজা ঠিক আছে, সেন্সর ঠিকমতো কাজ করছে, বাতি-ফ্যান আছে কিন্তু লিফট চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, মসৃণভাবে যাতায়াত করতে পারছে না। এটাও কিন্তু সমস্যার একটি কারণ। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। লিফট লাগানোর আগে বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করে নিতে হবে।