china-tech

এডিটরের বাছাই

যুক্তরাষ্ট্রে চীনা পণ্য কেন জনপ্রিয় নয়?

By Baadshah

January 06, 2018

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে অ্যাপল–স্যামসাং নিয়ে যতোটা হইচই সে তুলনায় চীনা ব্র্যান্ডগুলোর শোরগোল কম। এশিয়ার বাজারে সাড়া জাগালেও অনেক ডিভাইস যুক্তরাষ্ট্রের বাজার ধরতে পারেনি। কিন্তু কেন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পিছিয়ে পড়ছে চীনা ব্র্যান্ডগুলো?বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চ প্রকাশিত সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে চীনা ব্র্যান্ডগুলোর ব্যর্থতার কারণ উঠে এসেছে।

চীনভিত্তিক ডিভাইস নির্মাতা হুয়াওয়ে, অপো, ভিভো ও লেনেভো ক্রমবর্ধমান স্মার্টফোনের বাজার ভারত, রাশিয়া ও আফ্রিকায় এরই মধ্যে আধিপত্য বিস্তার করেছে। তবে বিশ্বের বিভিন্ন বাজারে আধিপত্য বিস্তারে সফল হলেও যুক্তরাষ্ট্রে পিছিয়ে রয়েছে এসব ব্র্যান্ড। কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চের তথ্যমতে, যুক্তরাষ্ট্রের স্মার্টফোন বাজারে আধিপত্য বাড়াতে চীনের নতুন স্মার্টফোন ব্র্যান্ডগুলো আগামী ১০ বছরে এক ধরনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা সৃষ্টিতে সফল হবে। বর্তমানে বাজারটিতে এসব প্রতিষ্ঠানের সফল হওয়ার সুযোগ খুব কম।কাউন্টারপয়েন্টের গবেষণা পরিচালক জেফ ফিল্ডহ্যাক বলেন, বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজারের ৪৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করছে চীনা ডিভাইস নির্মাতারা। তবে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের মাত্র ১৮ শতাংশ দখলে নিতে সমর্থ হয়েছে এসব প্রতিষ্ঠান।

যুক্তরাষ্ট্রের টেলিযোগাযোগ বাজারে জেডটিই ও অ্যালকাটেল অন্যতম দুটি চীনা ব্র্যান্ড। বাজারটিতে কার্যক্রম জোরদারে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে এগোচ্ছে এ দুই প্রতিষ্ঠান। তবে ডিভাইস বাজারের চেয়ে টেলিকম সরঞ্জাম বাজারে এদের পরিচিতি বেশি। অন্যদিকে লেনেভো নিয়ন্ত্রিত মটোরোলা এখন স্মার্টফোন বাজারে ব্যবসা জোরদারে কাজ করছে। এটি মার্কিন টেলিযোগাযোগ কোম্পানি ভেরাইজনের গ্রাহকদের মধ্যে পরিচিত একটি ব্র্যান্ড।যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জেডটিই, অ্যালকাটেল ও মটোরোলার ইতিবাচক উপস্থিতি এবং ব্যবসা প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকলে থাকলেও অন্য চীনা ব্র্যান্ডগুলোর উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি নেই এবং ব্যবসা প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনাও অনেক কম।

বিষয়টি নিয়ে জেফ ফিল্ডহ্যাক বলেন, সাধারণত যুক্তরাষ্ট্রের স্মার্টফোন বাজার সেলফোন অপারেটর ক্যারিয়ার প্রতিষ্ঠানগুলোর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। এ ধরনের বাজারে নতুন ডিভাইস নির্মাতাদের ব্যবসা সম্প্রসারণে অনেক বাধা রয়েছে। বাজারটিতে ৭০ শতাংশ স্মার্টফোন বিক্রি হয় বিভিন্ন সেলফোন ক্যারিয়ার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। কাজেই যুক্তরাষ্ট্রে স্বতন্ত্রভাবে ডিভাইস বিক্রির কার্যক্রম জোরদারের সুযোগ কম। তবে চীনা ব্র্যান্ডগুলো বিশ্ববাজারে নিজেদের ব্যবসা কৌশল অনুসরণ করে আধিপত্য বাড়াতে কাজ করছে। কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চের তথ্যমতে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের স্মার্টফোন বাজারে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে আছে ভেরাইজন ওয়্যারলেস। টেলিকম প্রতিষ্ঠানটি ১৪ কোটি ৭২ লাখ গ্রাহক নিয়ে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। ১৩ কোটি ৮৮ লাখ গ্রাহক নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে এটিঅ্যান্ডটি মোবিলিটি। টি-মোবাইল ইউএস ৭ কোটি ৭ লাখ গ্রাহক নিয়ে বাজারটিতে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। স্যামসাং ও অ্যাপল সাধারণত এসব ক্যারিয়ার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তাদের ডিভাইস বিক্রির কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।

কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চের গবেষেকেরা বলেন, বিভিন্ন ক্যারিয়ার প্রতিষ্ঠান তাদের নেটওয়ার্ক ব্যবহারকারীদের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ডের ডিভাইস সরবরাহ করতে চায়। বিভিন্ন ধরনের ছাড় দিয়ে তারা স্যামসাং ও অ্যাপলের মতো ডিভাইস নির্মাতাদের স্মার্টফোন বিক্রি করে। গ্রাহক সুবিধার্থে কিস্তি সুবিধাও দেয়া হয়। এক্ষেত্রে নতুন এবং চীনা ব্র্যান্ডগুলোর ডিভাইসের মান পরীক্ষা, প্রশিক্ষণ প্রদান, ডিভাইসগুলোর বিপণন ও এসব ব্র্যান্ডে বিনিয়োগের বিপরীতে আয় করাটা বেশ কঠিন।

কাউন্টারপয়েন্টের গবেষণা পরিচালক জেফ ফিল্ডহ্যাক আরো বলেন, ক্যারিয়ার প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য প্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ডগুলোর সম্প্রসারিত পণ্য পোর্টফোলিওর কারণে তাদের ডিভাইস বিক্রি সহজ হয়। ডিভাইস মূল্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যেমন স্যামসাং গ্যালাক্সি সিরিজের বিভিন্ন মূল্যের একাধিক স্মার্টফোন আছে। গ্রাহকরা বাজেট অনুযায়ী খুশিমতো ডিভাইস পছন্দ করে কেনার সুযোগ পায়। কিন্তু চীনা ব্র্যান্ডগুলো নির্দিষ্ট একটি বাজেটকে ভিত্তি ধরে স্মার্টফোন তৈরি ও বিপণনের কাজ করে। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্রের সেলফোন অপারেটর ক্যারিয়ার কোম্পানিগুলোকে এসব ব্র্যান্ড প্রভাবিত করতে পারে না। এটিই দেশটির বাজারে চীনা ব্র্যান্ডগুলোর ব্যর্থতার অন্যতম কারণ।বিশ্লেষকদের তথ্যমতে, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আধিপত্য বাড়াতে হলে আগে দেশটির ক্যারিয়ার প্রতিষ্ঠানগুলোকে ডিভাইসের মান বিষয়ে সন্তুষ্ট করতে হবে। ভেরাইজন, এটিঅ্যান্ডটি ও টি-মোবাইলের মতো সেলফোন ক্যারিয়ারদের প্রভাবিত করতে পারলে দেশটির বাজারে চীনা ব্র্যান্ডগুলোর কার্যক্রম জোরদার অনেকটা সহজ হবে।