বিগত ১১ শতকে মুসলমানদের সুবর্ণ যুগের সময় ইরাকের ইবনে-আল-হেথাম নামক একজন মুসলমান বিজ্ঞানী ও অপটিক্সের বিশেষজ্ঞ প্রথম ক্যামেরা আবিষ্কার করেন,যা পিনহোল অথবা ক্যমেরা আক্কুরা নামে পরিচিত। একটি কাঠের বাক্সের মতো দেখতে এই ক্যামেরাটির অভ্যন্তরে অন্ধকারে ঢাকা একটি ছোট গর্তে ছিল। ছবি তোলার সময় অন্ধকারে ঢাকা এই গর্তে আলো প্রবেশ করলে সেখানে একটি চিত্রের উল্টো প্রতিবিম্বের সৃষ্টি হতো। তবে এতে ছবি সংরক্ষণের কোন ব্যব্স্থা ছিলনা।
পরবর্তিতে ১৬৮৫ সালে জোহান জহান একই ধরণের ক্যামেরা তৈরি করেন। এ সব ক্যামেরা আকারে বিশাল ছিল এবং এতে ছবি সংরক্ষণের কোন ব্যব্স্থা ছিলনা। ১৮১৪ সালে জোসেফ নজারফোর নিয়েপস একটি ক্যামেরা তৈরি করেন যাতে ছবি সংরক্ষণের ব্যব্স্থা সহ ছবির আকৃতির ট্রেস করার ব্যবস্থা ছিল। শিল্পীরা ছবির আকৃতির ট্রেস করার জন্য এই অ্যাবসকুরা ক্যামেরা ব্যবহার করতো। পরে জোসেফ নজারফোর নিয়েপস একটি বিশেস ধরণের কাগজ তৈরি করেন এবং এই কাগজ রূপালী ক্লোরাইডের সাথে লেপন করে দেন। এর উপর আলো পড়লে অস্ধকারের সাথে মিলে একটি মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হতো। তিনি ক্যামেরা obscura র ভিতরে এই কাগজ স্থাপন করেন। এই হালকা সংবেদনশীল কাগজের উপর সৃষ্ট ইমেজ ছিল পৃথিবীর প্রথম ফটোগ্রাফ যা ১৮২৭ সালে আলো ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছিল।
এই ফটোগুলির কাগজ তৈরি করতে প্রায় ৮ ঘন্টা সময় লাগতো কিন্তু যা স্থায়ী ছিল না, তথা এর উপর আলো পড়লে অন্ধকার হয়ে যেতো। ১৮২৯ সালে লুউস ডকুরের প্রথম ব্যবহারিক ফটোগ্রাফি আবিষ্কার করেন। কিন্ত তিনি তার আবিষ্কৃত পদ্ধতি গ্রহণযোগ্য করতে প্রায় ১০ বছর সময় নেন। তার নাম অনুসারে ডেকেরুরেটাইপ হিসেবে এর নামকরণ করা হয়েছিল। তিনি এই ফটোগ্রাফির বিভিন্ন প্রক্রিয়া তার একটি একটি পুস্তিকায় উল্লেখ করেছিলেন।
অনেকেই এই প্রযুক্তি উন্নত করার জন্য কাজ করেন। ১৮৪১ সালে হেনরি ফক্স টালবোট একটি নেগেঠিভ হতে বহু পজিটিভ তৈরীর প্রক্রিয়া আবিষ্কার করেন। ১৮৫১ সালে ফ্রেডেরিক স্কিফ আর্চার ভেজা (wet) প্লেট নেগেটিভ সম্পর্কে অবহিত হন এবং ১৮৭৯ সালে তিনি শুষ্ক (dry) প্লেট নেগেটিভ আবিষ্কার করেন। ১৮৮৯ সালে জর্জ ইস্টম্যান ভাঁজ করা যায় এমন ধরনের ফিল্ম রোল আবিষ্কার করেন।
১৯৪০ সালে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে রঙিন ফটোগ্রাফি যাত্রা শুরু করে। ১৯৮৮ সালে ডিজিটাল ক্যামেরার যুগ শুরু হয় । আজ, ক্যামেরা এত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে যে এখন এমন কেউ নেই যার একটি ক্যামেরা নেই।এখন কাউকে ফটো তোলার জন্য ষ্টুডিওতে যেতে হয়না। মোবাইল প্রায় দখলই করে নিয়েছে ক্যামেরার স্থান।
লেখক : মোঃ আবু জাফর