আমি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছি। অফিসের কাজের জন্য একটি ভাল মানের আল্টাবুক নেয়ার কথা ভাবছিলাম অনেকদিন ধরেই। বলে রাখি, প্রফেশনাল কাজেই গ্রাফিক্স ডিজাইন ও ভিডিও এডিটিং করার মতো কাজ ছাড়াও অফিসের অনেক কাজ করতে হয় আমাকে। তাই এমন একটা ল্যাপটপ চাইছিলাম যা আমার জন্য সহজে বহন করার আর সব ধরনের কাজের ফ্লেক্সিবিলিটি একই সাথে দিতে পারে। অনেক বিবেচনার পর শেষ পর্যন্ত আসুসের জেনবুক ১৪ (ইউএক্স ৪৩৩) মডেলের ল্যাপটপটি নিয়ে নিলাম। মূলত আমার নিজের ব্যাবহারের অভিজ্ঞতাগুলোই তুলে ধরব এখানটায়। ডিজাইন: প্রথমেই বলব আমার চোখে অন্যতম সেরা ডিজাইনের একটি ডিভাইস এই জেনবুক ১৪(ইউএক্স ৪৩৩) মডেলের ল্যাপটপটি। এর ডিপ নেভি ব্লু প্রিমিয়াম মেটাল ফিনিশিং এক কথায় নজর কাড়বে সবারই। ল্যাপটপটি ১৪ ইঞ্চির, কিন্তু এর আকার বাজারের যে কোন ১৪ ইঞ্চির ল্যাপটপ থেকেও ছোট আকারের। তাই ছোট আকারের ব্যাগেও খুব সহজেই বহন করা যায় এই নোটবুকটি।
ল্যাপটপের ডিজাইন নিঃসন্দেহে ব্যক্তিত্বের পরিচয় তুলে ধরে, বিশেষ করে ল্যাপটপ যাদের দৈনন্দিন জীবনের কাজের জরুরী একটি বিষয়। তাই প্রফেশনাল ফিল্ডের অনেকেই আল্ট্রাবুক ব্যাবহার করেন। উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম চালিত আল্ট্রাবুক গুলোর মধ্যে আসুস জেনবুক সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম একটি ডিজাইনের নোটবুক। আল্ট্রাবুকটির ওজন মাত্র ১.০৯ কেজি। তাই হুট-হাট আউটডোর মিটিঙে বেরিয়ে পড়ার ব্যাপারটা আমার জন্য সবথেকে সুবিধার। ফিচার: নতুন জেনবুক সিরিজের ল্যাপটপে আছে “আর্গোলিফট হিঞ্জ” নামের দারুণ একটি ফিচার। একটু বুঝিয়ে বলতে হবে এই ব্যাপারটা। এই ফিচারের জন্য ল্যাপটপটি খোলা অবস্থায় এর পেছনের দিকটা কিছুটা উপরে উঠে আসে। অর্থাৎ টেবিলে রাখালে এর কিবোর্ড এর পেছনে একটি স্ট্যান্ড এর মতো তৈরি করে, যা দুটি ব্যাপারে সাহায্য করে- সুবিধা জনক ভাবে টাইপ করতে আর একই সাথে থার্মাল সিস্টেমকে ঠাণ্ডা রাখতে।
জেনবুক ১৪ তে ব্যবহার করা হয়েছে ত্রিমাত্রিক “আইআর” চেহারা শনাক্তকারী ক্যামেরা, যা উইন্ডোজ হ্যালো ব্যবহার করে দ্রুত চেহারা শনাক্ত করে লগইন করাতে সক্ষম। কম আলোতেও বেশ ভালভাবেই আমার চেহারা শনাক্ত লগ-ইন করতে পারে। মজার আরেকটি ফিচার থাকছে এতে, এর টাচ প্যাডেই আছে নাম-প্যাড; এক্সেল কিংবা ক্যালকুলেটরে নম্বর ইনপুটের কাজে এটা বেশ ভালো ভাবে সাহায্য করে। এছাড়াও এতে ব্যাকলিট কীবোর্ড থাকছে।
মাল্টিমিডিয়া: মাল্টিমিডিয়া নিয়ে বলি – প্রথমত এর ডিসপ্লে যে কোন কিছুই দেখতে অসাধারণ লাগে। কেন? এর চার পাশে ব্যাজেল নাই বললেই চলে। সাথে ফুল ইচডি হওয়ায় এর ভিজুয়াল অতুলনীয়।
ল্যাপটপ টিতে আছে হার্মান কার্ডনের স্পিকার, যা সাধারণত প্রিমিয়াম/লাক্সারি গাড়িতে ব্যাবহার হয়। বুঝতেই পারছেন এর শব্দের মান। তাই “নেটফ্লিক্স এন্ড চিল” করার অভিজ্ঞতাও কিন্তু বেশ ভাল।
পারফরম্যান্স: এবার আসি পারফরম্যান্স এর ব্যাপারে – আসুস জেনবুক ১৪ ল্যাপটপে রয়েছে ইন্টেলের ৮ম প্রজন্মের কোর আই৫ প্রসেসর। কেউ চাইলে আই৭ পর্যন্ত প্রসেসর নিতে পারেন। থাকছে এনভিডিয়া এমএক্স ১৫০ গ্রাফিক্স – যা আমার গ্রাফিকাল কাজের জন্য যথেষ্ট আর সাথে ১৬ গিগাবাইট র্যাম। নোটবুকটি এক কথায় সুপার ফাস্ট! কারণ স্টোরেজের পুরোটিই পিসিআই এনভিএমই এসএসডি দেয়া। ফলে এর এপ্লিকেশন লঞ্চিং টাইম অনেকটাই কমে আসে।
আমি যেহেতু এ ল্যাপটপ নিয়ে দীর্ঘসময় কাটাই, মিটিঙে বের হই, অফিস করি তাই সারাক্ষণ চার্জ নিয়ে চিন্তা করতে চাই না। আমার ল্যাপটপ আমাকে সে সুযোগও দেয় না। নতুন এই জেনবুক সিরিজের নোটবুক দিনভর ব্যাটারি ব্যাকআপ দিতে পারে। ইউএক্স ৪৩৩- টানা ১৪ ঘণ্টা পর্যন্ত ব্যাটারি ব্যাকআপ দিতে সক্ষম! আসুস জেনবুক ১৪ (ইউএক্স ৪৩৩) বাজার মূল্য ৮৬,০০০ টাকা। তবে এর কনফিগারেশন ভেদে দামের পার্থক্য তো আছেই।
এবার আসা যাক যে ৭টি কারণে জেনবুক ১৪ অফিসের কাজে সেরা একটি ল্যাপটপ
১। পারফর্মেন্স : ল্যাপটপটির পারফর্মেন্স এক কথায় দারুণ। থাকছে ইন্টেলের সর্বশেষ প্রযুক্তির ৮ম প্রজন্মের প্রসেসর,৮ গিগাবাইট র্যাম, ডেডিকেটেড ২ গিগাবাইট গ্রাফিক্স কার্ড, আর সবথেকে দরকারি এসএসডি স্টোরেজ। ব্যাবহার না করলে সত্যিই বুঝানো যাবে না কতোটা ফাস্ট এই নোটবুকটি। ২. স্থায়িত্ব : এর ডিউরাবিলিটি নিয়ে সন্দেহ নেই। এটি একটি বিজনেস গ্রেড ল্যাপটপ। মেটাল বডি হওয়াতে হাত থেকে পড়ে গেলেও আশা করা যায় এর নোটবুকটি সুরক্ষিত থাকবে। ৩. সিকিউরিটি : অফিসের কাজের নিরাপত্তা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। জেনবুকের নিরাপদ সিস্টেমে আপনি ভরসা করতে পারেন কারণ এতে থাকছে জেনুইন উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম; সাথে এক্সট্রা নিরপত্তা নিশ্চিত করতে এতে থাকছে ফেস আইডির মতো অত্যাধুনিক সুবিধা। ৪. পোর্ট: ল্যাপটপে নানা রকম দরকারি পোর্ট আপনি পাবেন (যা আমার জন্য অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ)। থাকছে ইউএসবি সি পোর্ট, ইউএসবি ৩.১ ও এইচডিএমআই পোর্ট, মাইক্রোএসডি স্লট, হেডফোন জ্যাক সহ মোটামুটি সকল প্রয়োজনীয় পোর্ট। ৫. ডিসপ্লে: সল্প বেজেলের ল্যাপটপটি আপনাকে দারুণ ভিউয়ের অভিজ্ঞতা দেবে। ল্যাপটপটি যথেষ্ট পরিমানে পেছন্টায় বেন্ড করা যায়, তাই প্রয়োজনীয় এঙ্গেলে কাজ করা সুবিধা জনক। আপনি এর কালার দেখে সন্তুষ্ট হবেন একথা নিশ্চিত। ৬. ফিচার: এর কিবোর্ড দীর্ঘক্ষণ ব্যাবহার করেও হাতে ব্যথা করেনা; ধন্যবাদ দিতে হয় এর আর্গোলিফট হিঞ্জ টেকনোলজিকে। সাথে ব্যাকলিট কীবোর্ড স্বল্প আলোতেও কাজ করতে সাহায্য করে। ৭. ব্যাটারি ব্যাকআপ: সর্বশেষ ব্যাটারি ব্যাকআপের কথা না বললেই নয়, অসাধারণ ১২ থেকে ১৪ ঘন্টা ব্যাকআপ দিতে পারে এই ল্যাপটপটি। যখন তখন যেখানে সেখানে চার্জার বহন করার ব্যাপারটি এখন অতীত।
আমার অভিজ্ঞতায় ল্যাপটপটি সব দিক থেকেই অফিসের কাজের জন্য পার্ফেক্ট একটি ল্যাপতটপ। বিশেষ করে আমি বলব কর্পোরেট বা স্টার্ট-আপে কর্মরত ব্যক্তিত্বপূর্ণ যারা ভালমনের দ্রুত গতির নোটবুক খুঁজছেন তারা ল্যাপটপটি বেছে নিতে পারেন।
লেখক: রুবাইয়াত হোসেন, বেসরকারি চাকরিজীবী।