টাকা কিভাবে আয় করা যায় আর সুযোগ কিভাবে কাজে লাগাতে হয় তার উদাহরণ লাকি ভাস্কর। দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যাংক আর শেয়ারবাজার কারসাজিতে কিভাবে বড়লোক হয়ে বিদেশে গাড়ি বাড়ি করা আর রীতিমতো রাতারাতি বড়লোক হওয়া যায় তারই গল্প লাকি ভাস্কর মুভি।
ছবির শুরুতে সিবিআইয়ের তাড়া খাওয়া লাকি ব্যাংকে তার কাগজপত্র দেখাতে বাধ্য হয়। এই সিবিআই কর্মকর্তারাও আবার ব্যাংকের টাকা খাওয়া লোক। তাদের টার্গেট ভাস্করের অতিদ্রুত কামাই করা ১০০ কোটি টাকা উদ্ধার করা। কিন্তু ভাস্কর কাগজে কোথাও কালো টাকা রাখেনি। কাগজপত্রে তাকে আটকাতে না পেরে সিবিআইয়ের হয়রানির হুমকিতে ব্যাংককে ১০০ কোটি টাকা ফেরত দিতে রাজি হয় ভাস্কর। কিন্তু এমন কিছু হবে তা আগেই জানত সে। প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল আগেই।
ভাস্কর সব টাকা লন্ডারিং করে ফেলেছিল আগেই। এরপরই দেশ ছেড়ে পালায় সে। কিন্তু কিভাবে সে এত বড় স্ক্যাম করল সে কাহিনীই মূলত লাকি ভাস্করে দেখানো হয়েছে।
লাকি ভাস্করকে স্বপ্ন, লোভ, এবং অন্ধকারের দিকে এক যাত্রার এক মুভি বলা যায়। একে রূপ দিয়েছেন দুলকার সালমান। যিনি এ চরিত্রে পারফেক্ট।
দুলকার সালমান অভিনীত লাকি ভাস্কর শুধু একটি চলচ্চিত্র নয়, এটি একটি গভীর অর্থবহ গল্প যা দর্শকদের মনকে নাড়া দেয়। ছবিটি স্বপ্ন, লোভ, এবং এক অপ্রত্যাশিত যাত্রার মধ্য দিয়ে আমাদের নিয়ে যায়, যেখানে এক সাধারণ মানুষের জীবন ধীরে ধীরে অন্ধকারের দিকে মুখ ফিরিয়ে নেয়।
লাকি ভাস্কেরর গল্প : স্বপ্ন থেকে অন্ধকারের দিকে
ভাস্কর, একজন সাধারণ মানুষ যার স্বপ্ন বড়। সীমিত আয়ের মধ্যে জীবন যাপন করার পরেও, সে স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবন যাপনের স্বপ্ন দেখে। একদিন, এক অপ্রত্যাশিত সুযোগ তার জীবনে আসে। এই সুযোগ তাকে ধনী হওয়ার লোভে ফেলে দেয়। এই লোভের ফলে সে একের পর এক জটিলতায় জড়িয়ে পড়ে এবং তার জীবন ধীরে ধীরে অন্ধকারের দিকে মুখ ফিরিয়ে নেয়।
দুলকার সালমান অভিনীত ভাস্কর চরিত্রটি ছবির মূল চরিত্র। তার মধ্যে একদিকে স্বপ্ন দেখার আকাঙ্ক্ষা আছে, আবার অন্যদিকে লোভের জ্বালা। দুলকার সালমান এই চরিত্রটিকে এতটাই বাস্তবসম্মতভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন যে দর্শকরা তার সাথে নিজেদের মিলিয়ে ফেলতে পারে। তার সংগ্রাম, তার ভুল, তার পশ্চাতাপ, সবকিছুই দর্শকদের হৃদয়কে ছুঁয়ে যায়।
ভাস্করের স্ত্রী সুমতি চরিত্রটিও গল্পে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সে তার স্বামীর স্বপ্নকে সমর্থন করে এবং তার পাশে দাঁড়ায়।
অন্যান্য চরিত্রগুলোও গল্পকে আরো সমৃদ্ধ করেছে। প্রত্যেকটি চরিত্রের নিজস্ব গুরুত্ব রয়েছে এবং তারা গল্পকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করে।
ছবিতে দেখি সংসার চালাতে হিমশিম খাওয়া ও দুর্ভানীতিগ্রস্ত ব্যাংকে চাপে থাকা কর্মচারী ভাস্করের সামনে একটি ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ প্রস্তাব করা হয় যা তার জীবনকে পাল্টে দিতে পারে।লোভে পড়ে ভাস্কর এই প্রস্তাব গ্রহণ করে। ধীরে ধীরে ভাস্কর বুঝতে পারে যে সে একটি জটিল জালে আটকে পড়েছে। ভাস্করের সামনে নৈতিক সংকট দেখা দেয়। তাকে সিদ্ধান্ত নিতে হয়, স্বপ্ন নাকি নৈতিকতা?
ছবির একটা মেসেজ আছে আর তা হলো-কোথায় থামতে হবে তা জানা। ভাস্কর সে পথেই পা বাড়ায়। পরিবারের সুরক্ষা প্রায়োরিটি পায় তার কাছে। ট্রিপিক্যাল মধ্যবিত্ত ইন্ডিয়ান মেন্টালিটি তার। ভাস্করের সিদ্ধান্ত এবং তার পরিণতি ছবির কেন্দ্রবিন্দু।
দুলকার সালমানের অসাধারণ উপস্থিতি
দুলকার সালমানের অভিনয় এই ছবিতে প্রশংসার দাবিদার। তিনি ভাস্কর চরিত্রটিকে এতটাই বাস্তবসম্মতভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন যে দর্শকরা তার সাথে নিজেদের মিলিয়ে ফেলতে পারে। অন্যান্য অভিনেতারাও তাদের চরিত্রগুলোকে যথাযথভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।
চিত্রায়ন ও সঙ্গীত: গল্পের সঙ্গে মিশে যাওয়া দৃশ্য এবং সুর ছবির চিত্রায়ন এবং সঙ্গীত দর্শকদের মনে চিরস্থায়ী ছাপ রেখেছে। চিত্রায়নটি খুবই সুন্দর এবং গল্পের সাথে মিলে যায়। সঙ্গীতটিও ছবির মেজাজকে আরো বেশি করে তীব্র করে তুলেছে।
যদি আপনি একটি ভালো থ্রিলার দেখতে চান এবং একই সাথে জীবনের গভীর অর্থ সম্পর্কে চিন্তা করতে চান, তাহলে “লাকি ভাস্কর” আপনার জন্য।