এক দশকের বেশি সময় ধরে সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তি সেবা খাতে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হচ্ছে । সাম্প্রতিক সময়ে এ খাত থেকে রপ্তানিতে বেশ অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে। গত অর্থবছরে প্রাপ্তির খাতায় যোগ হয়েছে ১৭৯.১৯ মিলিয়ন ডলার। অথচ, যদি মাত্র পাঁচ বছর আগে ফিরে দেখা যায় তবে ২০১২–১৩ অর্থবছরে তা ছিল ১০ কোটি ডলার।
উন্নতির এ ধারা ভালো বলে মনে করছেন দেশের প্রযুক্তি সংশ্লিষ্টরা। বিদেশিরাও বাংলাদেশের সফটওয়্যার খাতে আগ্রহ দেখাতে শুরু করেছে। বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানের তৈরি সফটওয়্যারে আগ্রহ দেখিয়েছে ভুটান, মালদ্বীপ ও কঙ্গো। বাংলাদেশি সফটওয়্যার নির্মাতারা খুব ভালো কাজ করছেন বলে প্রশংসা করেছেন ভুটানের তথ্য ও যোগাযোগমন্ত্রী দীননাথ দুঙ্গায়েল, মালদ্বীপের সশস্ত্র ও জাতীয় নিরাপত্তা উপমন্ত্রী তারিক আলী লুথুফি ও কঙ্গোর প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য উপদেষ্টা ডাইডোন কালোম্বো। বাংলাদেশি তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের দেশে কাজের সুযোগ দেওয়ার আগ্রহের কথা বলেছেন। সমপ্রতি রাজধানীর দোহাটেক নামের একটি প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনে এসে তাদের আগ্রহের কথা জানান তারা।
#২০১৭ সালে স্থানীয় আইটি ও আইটিইএস শিল্পের রাজস্ব উৎপাদন ০.৯-১.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার
#২০২৫ সালে আইটি ও আইটিইএস শিল্পের রাজস্ব উৎপাদন ৪.৬-৪.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হতে পারে
ভুটানের তথ্য ও যোগাযোগমন্ত্রী দীননাথ দুঙ্গায়েল বলেন, ইতিমধ্যে ভুটানের ইলেকট্রনিক গভর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্ট (ই-জিপি) নিয়ে কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশের দোহাটেক নামের একটি প্রতিষ্ঠান।তবে উল্টো চিত্রও আছে। এ খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন,ধীরে ধীরে আমাদের উন্নতি হচ্ছে। তবে বর্তমান বিশ্ববাজার বেশ কঠিন হয়ে পড়ছে। এখন উন্নয়নশীল অন্যান্য দেশের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বাংলাদেশকে বাজার তৈরি করে নিতে হচ্ছে।’
সফটওয়্যার উদ্যোক্তা লুনা সামশুদ্দোহা বলেন, ‘আমাদের তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিসর তেমন বড় নয়। আবার আমাদের দেশের অনেক তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানই নিজেরা সব কাজে অভিজ্ঞ বলেও প্রচার করে। বিদেশে এ কাজটি হয় না। তারা যেকোনো একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে দক্ষ এবং সেটিই তারা করে। এ বিষয়টি নজর দেওয়ার পাশাপাশি এ খাতে সরকারের ভর্তুকি বাড়ানো উচিত। দেখা যায়, তথ্যপ্রযুক্তিতে ভালো, এমন দেশের প্রধান কিংবা দেশ পরিচালনাকারীরা যখন বিদেশসফরে যান, সেখানে নিজেদের দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর সাফল্য তুলে ধরেন। এই অনুশীলনটা আমাদের দেশে কম। এটি বাড়াতে হবে।
রপ্তানির সামগ্রিক অবস্থা
নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা আর সমস্যা পাশ কাটিয়ে সফটওয়্যার খাত সামনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে বলে জানান প্রযুক্তি খাত সংশ্লিষ্টরা। সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তি সেবা রপ্তানির অবস্থাও যথেষ্ট ভালো বলে মনে করছেন অনেকই। এই খাত বর্তমানে শীর্ষস্থানীয় ১৫টি রপ্তানি খাতের একটি। গত বছরের নভেম্বর মাসে ভবিষ্যতে স্থানীয় ও বৈদেশিক বিনিয়োগের সুযোগ ও সম্ভাবনার কথা বর্ণনা করে প্রথমবারের মতো আইটি ও আইটি সক্ষম সেবা (আইটি-আইটিইএস) শিল্পের উপর একটি স্বাধীন শ্বেতপত্র প্রকাশ করা হয়। ‘বেটিং অন দ্য ফিউচার- দ্য বাংলাদেশ আইটি-আইটিইএস ইন্ডাস্ট্রি’ (Betting on the Future – The Bangladesh IT-ITES Industry) শীর্ষক শ্বেতপত্রটি ইউএস ভিত্তিক বোস্টন কনসাল্টিং গ্রুপ (বিসিজি) প্রকাশ করে। শ্বেতপত্রে ২০১৭ সালে স্থানীয় আইটি ও আইটিইএস শিল্পের রাজস্ব উৎপাদন ০.৯-১.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ২০২৫ সালে তা পাঁচগুন বেড়ে ৪.৬-৪.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হতে পারে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়।
২০১২ সালেই এ খাতে গড়ে ৫০ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি হতে দেখা যায়। ওই সময় পূর্বাভাস দেওয়া হয়, এ ধারা অব্যাহত থাকলে পাঁচ বছরের মধ্যে রপ্তানি আয় বেড়ে এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার হবে। ওই পূর্বাভাস এখন মিলে গেছে।
গার্টনারের তথ্য অনুযায়ী, তথ্যপ্রযুক্তি অবকাঠামো যেমন হাইটেক পার্ক, সফটওয়্যার প্রযুক্তি পার্ক, সবখানে উচ্চগতির ইন্টারনেট-সংযোগ নিশ্চিত করা এবং দক্ষ জনশক্তি বাড়াতে পারলে আরও দ্রুত সফটওয়্যার খাতের সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব। বর্তমানে সফটওয়্যার খাতের যেসব পণ্য রপ্তানি হচ্ছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ওয়েবসাইট তৈরি ও ডিজাইন, মোবাইল অ্যাপস, গেমস, অ্যাপ্লিকেশন প্ল্যাটফর্ম, ভিওআইপি অ্যাপ্লিকেশন, ডেটা এন্ট্রি, গ্রাফিক ডিজাইন, প্রি-প্রেস, ডিজিটাল ডিজাইন, সাপোর্ট সেবা, কাস্টমাইজড অ্যাপ্লিকেশন তৈরি, রক্ষণাবেক্ষণ ইত্যাদি।
গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে বেসিসের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে ১৯৯৯-২০০০ অর্থবছরে প্রথমবারের মতো ২৮ লাখ ডলারের সফটওয়্যার রপ্তানি হয়। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে ২০০৩ সাল থেকে বাংলাদেশ সফটওয়্যার রপ্তানি শুরু করে। ওই বছর রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৭২ লাখ ডলার। ২০০৪-০৫ অর্থবছরে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১ কোটি ২৬ লাখ ডলার। এরপর ২০০৫-০৬ অর্থবছরে ২ কোটি ৭০ লাখ ডলার, ২০০৬-০৭ অর্থবছরে ২ কোটি ৬০ লাখ ডলার ও ২০০৭-০৮ অর্থবছরে ২ কোটি ৪৮ লাখ ডলারের সফটওয়্যার রপ্তানি হয়। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে সফটওয়্যার রপ্তানি আয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে হয় ৩ কোটি ২৯ লাখ ডলার। ২০০৯-১০ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ৩ কোটি ৫৩ লাখ ডলার। ২০১০-১১ অর্থবছরে এসে ২৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধিতে সফটওয়্যার রপ্তানি দাঁড়ায় সাড়ে ৪ কোটি ডলারে। ২০১২-১৩ অর্থবছরে সফটওয়্যার রপ্তানি থেকে আয় প্রথমবারের মতো ১০০ মিলিয়ন (১০ কোটি) ডলার অতিক্রম করে। ওই অর্থবছরে মোট রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১০ কোটি ১৬ লাখ ৩০ হাজার ডলার। এই আয় বেড়ে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ১২ কোটি ৪৭ লাখ ২০ হাজার ডলার ও ২০১৪-১৫ অর্থবছরে প্রায় ১৩ কোটি ডলারে দাঁড়ায়। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এই খাত থেকে সর্বোচ্চ ৭০০ মিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় হয়েছে। ২০১৬–১৭ তে এসে এখাতে রপ্তানি আয় দাঁড়ায় প্রায় ১৮ কোটিতে।
সূত্র আরও জানায়, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বেসিস সদস্য ১৮৫টি প্রতিষ্ঠান ৬০০ মিলিয়ন ডলার আয় করে। এর সাথে ফ্রিল্যান্সার, সফটওয়্যার ডেভেলপার ও কলসেন্টারগুলোর সেবা রপ্তানি আয় যোগ করলে তা ৭০০ মিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। তবে ইপিবি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি রপ্তানি আয় ১৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার। আর পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) সফটওয়্যার রপ্তানির হিসাব দেয় ২৫ কোটি ৮০ লাখ ডলারের।
সফটওয়্যার রপ্তানিতে কতোটা পথ পাড়ি?
বাংলাদেশে শুধু সফটওয়্যার খাতে রপ্তানি কত, এর নির্ভরযোগ্য পরিসংখ্যান নেই। যেটা আছে তা হচ্ছে—আনুমানিক তথ্যপ্রযুক্তিখাতে মোট রপ্তানি আয়ের একটি তথ্যপ্রযুক্তি খাতের রপ্তানি আয়ের বিতর্কহীন হিসাব পাওয়া কষ্টের। এ খাত থেকে চলতি বছর ১ বিলিয়ন এবং ২০২১ সালে ৫ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ।
সরকারের এক্সপোর্ট প্রমোশন ব্যুরো (ইপিবি) ও বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে গত অর্থবছরে (২০১৬–২০১৭)তথ্যপ্রযুক্তি খাতে রপ্তানি আয় প্রায় (১৭৯ দশমিক ১ মিলিয়ন) ১৮ কোটি। যা (২০১৫-১৬) অর্থবছরে ছিল ১৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ওই সময় (বিবিএস) সফটওয়্যার রপ্তানির হিসাব দিয়েছিল ২৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার।
বেসিস সূত্র অনুযায়ী, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ২০১৬ সালে রপ্তানির আয় ছিল ৭০ কোটি ডলার। সাবেক বেসিস সভাপতি মোস্তফা জব্বার জানান, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক যে হিসেবে কম্পাইল করে তার রিপোর্ট আসে বাণিজ্যিক ব্যাংক বা সিডিউল ব্যাংক যেগুলোকে বলে তার মাধ্যমে। সিডিউল ব্যাংকগুলো যে ডেটা দেয় তা দেয় হলো সি ফর্মের মাধ্যমে । সি ফর্ম কেবলমাত্র ১০ হাজার ডলারের উপরে হলে পূরণ করতে হয়, নইলে করতে হয় না। ফলে ১০ হাজার ডলার উপরের রপ্তানির হিসাবটা সরকার পায়। এখানে ছোট ছোট ও ব্যক্তিকেন্দ্রিক রপ্তানিগুলো হিসেবে আসে না। কিন্তু ভলিউমে এগুলোই বেশি। আরও অসংগতি আছে। যে সি ফর্ম হয় সেখানে মাত্র তিনটি ক্যাটাগরি রয়েছে। একটা ডেটা প্রসেসিং, একটি কনসালটেন্সি আরেকটা সফটওয়্যার। এখানে আইটি এনাবেল সার্ভিস, কল সেন্টারসসহ তথ্যপ্রযুক্তির অধিকাংশ ক্যাটাগরিই তো নাই।
তবে গত বছরে এক সংবাদ সম্মলনে বর্তমান ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, প্রকৃতপক্ষে আমাদের সফটওয়্যার রপ্তানি খুব বেশি নয়। সফটওয়্যার রপ্তানিতে এখনও সেই রকম সক্ষমতা অর্জিত হয়নি যে ইউরোপীয় সফটওয়্যার বিট করে বাংলাদেশের সফটওয়্যার রিপ্লেস করা যাচ্ছে। আমরা ব্যাপকহারে সার্ভিস রপ্তানি করছি, আমাদের সস্তা হিউম্যান রিসোর্স রয়েছে। আমরা যে কারণে গার্মেন্টস রপ্তানি করতে পারি সে কারণে আইটি সার্ভিস রপ্তানি করতে পারি। যার অর্থ হচ্ছে দেশের প্রধান রপ্তানি ক্যাটাগরিই তো রিপোর্টেড হয় না। তাহলে কী করে ইপিবি, বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে নির্ভর করবো। পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব নিয়ে বলেন, ‘ব্যুরো যে হিসাব করে তা বাস্তবসম্মত নয়। তারা যে ডেটা দিয়েছে তা হলো কতগুলো প্রতিষ্ঠান ভিজিট করে তাদের কাছ হতে যা পেয়েছে তা। ব্যুরো এই কমিটির সঙ্গে বৈঠকে আমার প্রশ্ন ছিল এই ডেটার পরিধি নিয়ে।’বড় সফটওয়্যার কোম্পানিগুলো বিদেশে অফিস রয়েছে, বিদেশে কার্যক্রমের ব্যপ্তি ঘটিয়েছে তারা টাকা সেখানেই রাখে। অথচ এই টাকা বাংলাদেশী কোম্পানি বাংলাদেশের শ্রমের টাকা। শুধু দেশের অফিস খরচ, অ্যাপ্লিয়িদের বেতন ছাড়া বাকী টাকা বিদেশেই রেখে দেন তারা। অনেকে ঝামেলা পোহাতে চান না। সি ফরমে না গিয়ে আইটি ও আইটিইএস শিল্পের রাজস্ব উৎপাদন রেমিটেন্স হিসেবে টাকা নিয়ে আসে।
প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ডিজিটাল বাংলাদেশ : আইটি ও তথ্যপ্রযুক্তি সম্পর্কিত সেবা (আইটিইএস) খাতে রপ্তানি সম্ভাবনা’ শীর্ষক এক উপস্থাপনায় তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ২০১৬ সালের রপ্তানি ৭০ কোটি ডলার উল্লেখ করেন। রপ্তানি আয়ের যে হিসাব অফিসিয়ালি বলা হচ্ছে তা তার চেয়ে অনেক অনেক বেশি বলে মনে করছেন প্রতিমন্ত্রী।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কল সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিংয়ের (বাক্য) রেফারেন্স তাদের খাতে ৩ কোটি ২০ লাখ ডলার রপ্তানির কথা বলা হয়। কল সেন্টার, ডাটা এন্ট্রিসহ বিভিন্ন সেবা রপ্তানি হয়ে থাকে। খাতটিতে আয় উল্লেখিত পরিসংখ্যানের তুলনায় অনেক বেশি বলে মনে করেন বাক্য সংশ্লিষ্টরা।
বেসিস, বাক্যসহ তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বেসরকারি শীর্ষ সংগঠনগুলো হিসাবে দেশে দেড় হাজার আইটি ও আইটিইএস কোম্পানি রয়েছে। এর মধ্যে ক্ষুদ্র ও মাঝারি পর্যায়ের পাঁচশত কোম্পানি রপ্তানিতে রয়েছে। শুধু বেসিসে ১০৮৬ সদস্য কোম্পানি রয়েছে । এরমধ্যে অর্ধেক কোম্পানিকে সক্রিয় হিসেবে ধরা হয়ে থাকে।
সংগঠনটির কাছে কোম্পানিগুলো ফর্ম পূরণ করে ২০১৪-২০১৫ সালের যে আয়ের হিসাব দিয়েছে তার মোট অংক ৫৯ কোটি ৪০ লাখ ৭৩ হাজার ডলার। এই রপ্তানি আয় ৩৮২টি কোম্পানির। কোম্পানিগুলো স্থানীয় বাজারেও আয় করেছ। তার পরিমান ২ কোটি ৭২ লাখ ডলার। সংগঠনটির কাছে থাকা কোম্পানিগুলোর কাগজপত্রের হিসাবে দেখা যায়, ২০১৩-২০১৪ সালের ২৭৭টি কোম্পানির রপ্তানি আয় ছিল ১৬ কোটি ৮০ লাখ ৬৫ হাজার ডলার। ওই অর্থবছরে স্থানীয় বাজারে আয় ছিল ৮ কোটি ডলার।
এদিকে ইপিবির হিসাবে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আয়ের লক্ষ্য ছিল ১৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার। সেখানে আয় হয়েছে ১৫ কোটি ১৮ লাখ ৩০ হাজার ডলার যা লক্ষ্যের চেয়ে ৪ দশমিক ৭১ শতাংশ বেশি। আর ২০১৪-১৫ সালে এই আয় ছিল ১৩ কোটি ২৫ লাখ ৪০ হাজার ডলার।
২০২১ সালের মধ্যে সফটওয়্যার খাত থেকে পাঁচ বিলিয়ন ডলার রপ্তানির লক্ষ্য অর্জন করতে হলে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার ডিজিটাল সংস্কারে গুরুত্ব দিতে হবে। একই সঙ্গে দেশীয় সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা উন্নয়নেও জোর দিতে হবে।এ মতামত ব্যক্ত করেছেন এ খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
শিল্প প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিগন জানান, বাংলাদেশের অনেক আইটি ফার্ম বিদেশি সংস্থা থেকে মিলিয়ন মার্কিন ডলার রাজস্ব আয় করছে।যাই হোক, এদের অনেকেই তাঁদের উপার্জন বিদেশের ব্যাংকেই রাখে যার ফলে এই কোম্পানিগুলোর রপ্তানি রাজস্ব বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান এবং রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর পরিসংখ্যানে প্রতিফলিত হয় না। তারা উল্লেখ করেন যে, যদিও আইটি খাত ইতিমধ্যে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ট্যাক্স হলিডে পেয়েছে।
আইটি প্রধানরা পর্যবেক্ষণ করেন, প্রতিবেশী দেশগুলো যেমন নেপাল, ভুটান, এবং পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো যেমন জাপান কোরিয়া বাংলাদেশের আইটি শিল্পের জন্য সম্ভাব্য মার্কেট। নেপাল ও ভুটান বর্তমানে নিজেদের আধুনিকায়ন প্রক্রিয়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে যেখানে আমাদের দেশিও আইটি শিল্প অনেক অবদান রাখতে পারে। একই সময়ে,জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশে IOT (ইন্টারনেট অফ থিংস) এর জন্য একটি বিশাল সম্ভাবনাময় বাজার রয়েছে।
শিল্প পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে ৪৫০০ এর বেশি নিবন্ধিত সফ্টওয়্যার ও আইটিইএস কোম্পানি রয়েছে,যেগুলোতে কাজ করছে ৩ লক্ষাধিক আইটি কর্মী। স্থানীয় বাজারে সফটওয়্যারের চাহিদা রয়েছে প্রায় ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। সরকারি তথ্যমতে, দেশে বর্তমানে ৭ লাখ তথ্যপ্রযুক্তি পেশাজীবী আছেন। এর মধ্যে ১ লাখ ২০ হাজার ও অন্যান্য খাতে ১ লাখ ৩০ হাজার মিলিয়ে মোট ২ লাখ ৫০ হাজার তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর পেশাজীবী রয়েছে।
বেসিসের তথ্যমতে, তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর পেশাজীবী ছাড়াও দেশে ফ্রিল্যান্স-আউটসোর্সিংয়ে জড়িত আছেন প্রায় সাড়ে চার লাখ মানুষ। সরকারি-বেসরকারিভাবে প্রায় দুই লাখ তথ্যপ্রযুক্তি পেশাজীবী তৈরির প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে। তবে ২০১৮ সালের মধ্যে দেশে ১০ লাখ তথ্যপ্রযুক্তি পেশাজীবী তৈরির ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এতে সরকারের চলমান উদ্যোগগুলো বাস্তবায়ন ও সামনের দিনগুলোতে ধারাবাহিকতা বজায় রেখে এই ১০ লাখ পেশাজীবী তৈরি ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা সম্ভব।
পলক বলেন, বিগত ৯ বছরে বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ব্যাপক উন্নয়ন ঘটছে। এ খাতে নানা সাফল্যের কাহিনীও তৈরি হয়েছে। বর্তমানে সরকার চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের আবির্ভাব এবং নতুন নতুন উদ্ভাবনীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বিভিন্ন উদ্যোগ ও প্রস্ততি গ্রহণ করছে। বিগ ডেটা অ্যানালাইটিক, ইস্টারনেট অব থিংস, আর্টিফিসিয়াল ইনটেলিজেন্সের মতো ক্ষেত্র সমূহের জন্য প্রশিক্ষিত মানুষ তৈরি করা হচ্ছে। আইটি শিল্পে দেশি এবং বিদেশি বিনিয়োগে উৎসাহিত করার জন্য নানা ধরণের প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। লক্ষ্য ২০২১ সালের মধ্যে ৫ বিলিয়ন ডলার আইসিটি রপ্তানির লক্ষ্য পূরণ। আইসিটি রপ্তানি ইতিমধ্যে ৮০০ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে এবং আমরা আশাবাদী যে ২০২১ এর আগেই আমরা লক্ষ্যে পৌঁছাতে সক্ষম হবো।
বছর রপ্তানি প্রবৃদ্ধি (কোটি ডলার)
২০০৬-০৭ ২.৬০৮
২০০৭-০৮ ২.৪০৯
২০০৮-০৯ ৩.২৯১
২০০৯-১০ ৩.৫৩৬
২০১০-১১ ৪.৫৩১
২০১১-১২ ৭.০৮১
২০১২-১৩ ১০.১৬৩
২০১৩–১৪ ১২.৪৭২
২০১৪–১৫ ১৩.২৫৪
২০১৫–১৬ ১৫.১৮৩
২০১৬–১৭ ১৭.৯১৯
সূত্র: রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো